পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ডিসিদের তদারকি,বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা,গুজব প্রতিরোধে ডিসিদের সহযোগিতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযোগ্য মর্যাদা নিতে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রী-সচিবারা। এছাড়া ১৯৭৪ সালে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট করা হয়েছিল। বিশেষ এই কারণটাকে চিহ্নিত করার জন্য এই অ্যাক্ট করা হয়েছে। আর আমি এখন আপনাদের মাধ্যমে বলছি। এ রকম কাজ করলে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তারা পাবে। জেলা প্রশাসকদের কাছে মামলা জট নিরসনের বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় কার্য-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, আমি আমার বক্তব্যে প্রথমে ডিসিদের কাছে মামলা জটের বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছি। মামলা জট নিরসনের জন্য তারা যেন সহযোগিতা করে। দ্বিতীয় কথা যেটা বলেছি সেটা হলো, সকলের কাছে বিশেষ করে ডিসিদের জন্য একটা ইস্যু। সেটা হলো মোবাইল কোর্ট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে একটা মামলা আছে। সেটা নিষ্পত্তি করার জন্য আমরা তড়িৎ পদক্ষেপ নেব এবং একটা বিষয়ে স্পষ্টকরণ করা হয়েছে। সেটা হলো অনেক সময় হাইকোর্ট বিভাগে কেউ যদি মামলা করে তখন হাইকোর্ট একটা আবেদন নিষ্পত্তির জন্য একটা আদেশ দেন। সে ক্ষেত্রে অনেক সময় জটিলতা দেখা দেয় যে হাইকোর্টের আদেশ না বুঝে অনেক দেরি করা হয়। সে বিষয়ে স্পষ্টকরণ করে দেয়া হয়েছে। ডিসিরা কী বলেছেন এবং আপনার তরফ থেকে তাদের কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ডিসিরা কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করেছেন এবং আমাদের আইন সচিব সে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। যেসব মাল জব্দ করা হয়, সেসব মাল নিষ্পত্তির বিষয়ে কী করা উচিত এবং আধুনিকায়নের বিষয়ে কিছু প্রস্তাব এসেছে আমরা ই-জুডিসিয়ারির কথা বলেছি। সেখানে কতটুকু সুবিধা হবে সে কথা বলেছি। বাজার ব্যবস্থা যদি কেউ অস্থিতিশীল করে বা মজুদ করে তাহলে তাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। সে বিষয়ে ডিসিদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য ১৯৭৪ সালে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট করা হয়েছিল। বিশেষ এই কারণটাকে চিহ্নিত করার জন্য এই অ্যাক্ট করা হয়েছে। আর আমি এখন আপনাদের মাধ্যমে বলছি, এ রকম কাজ করলে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগুন লাগার ঘটনায় মামলা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আমাদের প্রসিকিউশনকে যে নির্দেশনা দেওয়া দরকার সেটি দেওয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা বীর নিবাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে কোনো ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়া নিয়ে গেলে জেলা প্রশাসকরা যেন গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন, সেটা বলেছি। তারা একে তো বীর মুক্তিযোদ্ধা, তারা এই রাষ্ট্রের সিনিয়র সিটিজেনও। তাদের যেন যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়, এ বিষয়ে ডিসিদের বলেছি। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, রমজানের পর আগামী মে মাসে নির্বাচন হবে আশা করছি। মে মাসে হবে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমি আশাবাদী এর মধ্যে হয়ে যাবে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিন সকালে অধিবেশন শেষে মন্ত্রী বলেন, কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, তারা কাজ করছে। তারা তালিকা জমা দিলে আমরা তা প্রকাশ করব। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনের চতুর্থ অধিবেশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতি মাসে প্রয়োজন হলে প্রতি সপ্তাহেই জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বাজার মনিটরিং করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করেছি, তারা যেন প্রতি মাসে এবং প্রয়োজন হলে প্রতি সপ্তাহেই বাজার মনিটরিং করে। যাতে পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকে সে বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ডিসিরা তেমন কোনো কথা বলেননি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা বিভিন্ন ধরনের কিছু ছোট ছোট পয়েন্ট যেমন মাদকদ্রব্য নিয়ে কথা বলেছেন। জেলখানায় কয়েদিদের আরও একটু ভালো টাইট দেওয়ার কথা বলেছেন। অচল বন্দিদের কীভাবে আরও একটু ছাড় দেওয়া যায় এবং ভার্চুয়াল কোর্ট যেটা কোভিডের সময় চালু করেছিলাম। সেটা বাংলাদেশের সব জায়গায় চালু করা যায় কি না। তিনি বলেন, বিশেষ করে যেসব কয়েদিকে আনা- নেওয়া রিক্স, তাদের ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচার করা যায় কি না সেটা নিয়ে বলেছেন তারা। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সারাদেশে চালু করা যায় কি না সেটা দেখবো বলে ডিসিদের জানিয়েছি। মন্ত্রী বলেন, আমাদের সচিবরা কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে জেলা পর্যায়ে যে কোর কমিটি রয়েছে। তারা যেন প্রতি মাসে একটি সভা করে। যাতে সবার সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক থাকে এবং কোনো অসুবিধা হলে সেগুলো যেন দ্রুত সমাধান করতে পারেন। আপনার তরফ থেকে ডিসিদের কোনো নির্দেশনা ছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বলেছি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। তারপরও কিছু ছোট ছোট মাদকদ্রব্য যা চোখে দেখা যায় না বা দৃশ্যমান কোনো কিছু দিয়ে পরিবহন করে না। যেমন ইয়াবা, এলএসডি মানুষ যদি না জানে এগুলো কীভাবে পরিবহন করে তা বুঝতে পারবে না। এসব ড্রাগ ব্যবহাররোধে জেলা প্রশাসকদের আমি বলেছি, তারা সামাজিকভাবে ব্যবহার রোধ করে। আমরা মাদকের ব্যবহাররোধে যেমন তামাকের ও ধূমপানের বিরুদ্ধে কথা বলছি না।আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন কেউ প্রকাশ্যে ধূমপান করে না। ধূমপান করলে কেউ আড়ালে করে। আমরা সেই জায়গায় কাজ করার জন্য ডিসিদের বলেছি। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, গুজব প্রতিরোধে চারটি কৌশলগত বিষয় নিয়ে কাজ করতে (ডিসি) সহযোগিতা চেয়েছেন। পলক বলেন, আমরা মনে করি, সরকার এবং জনগণের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করেন জেলা প্রশাসকরা। একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অন্যদিকে উন্নয়ন কার্যক্রম তদারকি করা। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিসিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধ করা, যখন পরীক্ষা হয়, তখন প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া, না হওয়া অথবা ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে যখন সাইবার বুলিং ও সাইবার ক্রাইম হয় সেই বিষয়ে তাদের (ডিসি) উদ্যোগ কী হতে পারে, সেই বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। তারা কী ধরনের সহযোগিতা পেতে পারেন, সেই বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমাদের সাইবার নিরাপত্তা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধ করার জন্য আমরা তাদের চারটি কৌশলগত বিষয়ে সচেতনভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি। চতুর্থ, পুলিশ-প্রশাসন যাতে অ্যাকাডেমিয়া, মিডিয়া এবং প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। এই চারটি কৌশল আমরা বলেছি, সাইবার সিকিউরিটি এবং স্যোশাল মিডিয়াতে গুজব প্রতিরোধের জন্য।