নির্বাচন নিয়ে আর কেউ কোনো কথার সুযোগ পাবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৩ | ৮:৫৭ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে ভোট চুরি করেছিল। ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন দিয়েছিল। কিন্তু দেশের মানুষ মেনে নেয়নি। জনগণ ভোটচোরদের ক্ষমা করে না। তিনি আরও বলেন, ছয়টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। আমি আশা করি, আর কেউ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা উত্থাপন করার সুযোগ পাবে না। বুধবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে ছয়টি উপনির্বাচন হলো। একটিতে জাতীয় পার্টি জিতেছে। একটিতে বিএনপির একজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন, তারপর তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হয়ে আজ সংসদে এসেছেন। এছাড়া একটা আমরা দিয়েছিলাম রাশেদ খান মেননকে, সেখানে জাতীয় পার্টি জিতে এসেছে। হাসানুল হক ইনুকে দিয়েছি বগুড়ায়, সেটা জিতে এসেছে। বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই সিটে নৌকা মার্কা জয়লাভ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে। ওই নির্বাচন নিয়ে কেউ অভিযোগ করতে পারেনি। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিন্তু জাতীয় পার্টি জয়লাভ করেছে, আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। কাজেই নির্বাচন যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুষ্ঠু হয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। সেটাই কিন্তু এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, আমি আশা করি এরপর আর কেউ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা উত্থাপন করার সুযোগ পাবে না। কারণ আমরা ক্ষমতায় থাকলেও মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আমরাই সংগ্রাম করেছি। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি। এ দেশের মানুষ এর আগেও নির্বাচন দেখেছে। জিয়ার শাসনামলে হ্যাঁ-না ভোট দেখেছে। বিএনপি আমলে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দেখেছে। আমরা আবার মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনেছি। আলোচনার শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাষণটাই তার শেষ ভাষণ। কারণ আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কেউ পরপর দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি থাকতে পারেন না। রাষ্ট্রপতি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি শুরু করেন বলে উল্লে­খ করে তিনি বলেন, আমি মনে করি তিনি অত্যন্ত প্রাণবন্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার সময়ে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছেন এবং ভাষণ দিয়ে গেছেন। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার হিসেবেও তিনি সংসদকে প্রাণবন্ত রেখেছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবেও সফল এবং দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর স্নেহে রাজনীতি করেছেন। বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে সরকার পদ্মা সেতু করেছে। এটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এই একটা সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। যারা আগে মনে করত বাংলাদেশ কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে পারবে না। পঁচাত্তরের পর যারা এসেছিল, তাদের সেই প্রচেষ্টাই ছিল। আজকে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে। আমরা যে পারি সেটা প্রমাণ করেছি। সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা চালু করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন দলিল-পর্চা ঘরে বসে নিতে পারে। যে কোনো বিল ঘরে বসে দিতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য মানুষের সেবা করা। মানুষের উন্নয়নে কাজ করা। পরিবেশ দূষণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহর অত্যন্ত ছোট। অনেক মানুষ। প্রচুর গাড়ি চলাচল করে। যার জন্য বায়ু ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা যারা বলি ঢাকা খারাপ, বসবাসের উপযোগী নয়, তারা তো ঢাকাতেই বাস করে। ঢাকা থেকে তো বাইরে যাই না। ঢাকার বাইরে পরিবেশ অনেক পরিশুদ্ধ উল্লে­খ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারপরও ঢাকায় থাকতে হবে। আমরা গালিও দেব, আবার থাকব, এটা কেমন কথা? এটা হয় না। তিনি বলেন, তারপরও আমাদের প্রচেষ্টার অন্ত নেই। ঢাকার অনেক খাল ও ঝিল ছিল উলে­খ করেন শেখ হাসিনা। আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়ার আমলে সব দখল করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু হৃদয় আছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় সহায়তার জন্য বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল টিম, ওষুধ, শুকনা খাবার পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সাধ্যমতো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগেও এভাবে অনেক দেশের পাশে দাঁড়িয়েছি। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মন আছে আমাদের। গত ৫ জানুয়ারি চলতি সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে থাকা প্রবীণ ও প্রাজ্ঞ এই রাজনীতিবিদের এটাই ছিল জাতীয় সংসদে শেষ ভাষণ। সংসদের রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব আনেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন। পরে তার এই ভাষণের ওপর সরকার এবং বিরোধী দলের সদস্যরা টানা এক মাস সংসদ অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে জাতীয় সংসদ। এদিন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় আরও অংশ নেন সংসদ উপনেতা, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ, বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন।