৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সিএমপির গোয়েন্দাদের ওপর ‘গোয়েন্দাগিরি’

প্রকাশিতঃ মার্চ ৮, ২০২৪ | ৬:৩৫ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত সদস্যদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তাদের প্রতিদিন তিনবার রোলকল করা হচ্ছে। কোনো প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে জিডিমূলে বা জিডিতে নোট দিতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে এক ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তার নেতৃত্বে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টির পর গোয়েন্দা পুলিশের ওপর কার্যত ‘গোয়েন্দাগিরি’ বাড়িয়েছে সিএমপি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোয়েন্দা শাখায় কর্মরতদের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কোনো সদস্য যাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অগোচরে অপকর্মে জড়াতে না পারেন সে জন্য তাদের কার্যক্রম ও গতিবিধি মনিটরিংয়ে রাখার জন্য একটি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এ ধরনের নির্দেশনার একটি কপি হাতে এসেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে-‘এখন থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা, বেলা ২টা ও বিকাল ৫টায় রোলকল করা হবে। মামলার তদন্ত, সাক্ষি অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে কেউ বাইরে গেলে অবশ্যই জিডিতে নোট থাকবে। সিসি বই যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ইন্সপেক্টর প্রশাসন এসব বিষয়ে সার্বিক তদারকি করবেন। আগে এ ধরনের বাধ্যবাধকতা ছিল না। ২৬ ফেব্রুয়ারি আবু বকর সিদ্দিকী নামে একজন ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে ক্রসফায়ার, মানি লন্ডারিং ও সাইবার ক্রাইমের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে। এর মধ্যে আবু বক্কর সিদ্দিকের আইডি থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৬০ ডলার স্থানান্তর করেন রুহুল আমিন। এছাড়া আবু বক্কর সিদ্দিকের সিটি ব্যাংক ও ইউসিবিএল অ্যাকাউন্ট থেকে ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা জাহিদ হোসেন স্বাধীনের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হস্তান্তর করে নিয়ে নেন। এ ঘটনায় সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে কাউন্টার টেররিজম শাখার এডিসি আসিফ মহিউদ্দিনকে। কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছে। পরিদর্শক রুহুল আমিনসহ ৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ভিকটিম আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী হুসনুম মামুরাত লুবাবা বাদী হয়ে আদালতে মামলাও করেছেন। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনার মূলহোতা পরিদর্শক রুহুল আমিন দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকর্মে জড়িত। তিনি কক্সবাজার স্পেশাল ব্রাঞ্চে (এসবি) কর্মরত থাকার সময় টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে তাদের পক্ষে রিপোর্ট দেন। এ কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে পরিদর্শক রুহুল আমিনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। দুদকের ওই মামলায় রুহুল আমিন ১৫ নম্বর আসামি ছিলেন। মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। ওই মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। ফ্রিল্যান্সারের সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর সর্বশেষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় স্বাক্ষরিত আদেশে পরিদর্শক রুহুল আমিনকে গোয়েন্দা শাখা থেকে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।