ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জো বাইডেনের বিষোদগার

প্রকাশিতঃ মার্চ ৯, ২০২৪ | ৭:৪২ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি বিষোদগার করেন তিনি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে এই ভাষণ দেন বাইডেন। এ নিয়ে তৃতীয়বার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন তিনি। মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনও তার সঙ্গে ছিলেন। নভেম্বরের নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে দেওয়া এই ভাষণে বাইডেন অর্থনীতিতে তার প্রশাসনের সাফল্য তুলে ধরেন ও নিজেকে তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে এগিয়ে রাখার জন্য নানা যুক্তি উপস্থাপন করেন। বিবিসি, আল-জাজিরা ও সিএনএন। বাইডেন বেশ কয়েকবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। তবে একবারও ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘আমার পূর্বসূরি’। বাইডেন বলেন, আজ আমার লক্ষ্য কংগ্রেসকে জাগিয়ে তোলা ও মার্কিন জনগণকে সতর্ক করা। কারণ এখনকার সময়টা স্বাভাবিক নয়। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র উভয়ই আক্রান্ত হয়েছে এবং তা দেশে ও দেশের বাইরে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে বাইডেন তার অবস্থান পরিষ্কার করার সুযোগ পান। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে বাইডেনের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত হলেও অনেক ভক্ত-সমর্থক-নেতা-কর্মীও দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে কতটুকু উপযুক্ত, তা নিয়ে সন্দিহান। এ ছাড়া, গাজায় ইসরাইলের সর্বাত্মক ও নির্বিচার হামলায় অসংখ্য নিরীহ মানুষের প্রাণহানির পরও দেশটির প্রতি বাইডেন প্রশাসনের অবিচল সমর্থনও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বাইডেন জানিয়েছেন, তার প্রশাসন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উপকূলীয় অঞ্চলে একটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করবে। যার ফলে, গাজায় আরও বেশি পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে পারবে। বাইডেন বলেন, এই জেটির মাধ্যমে জাহাজে করে বিপুল পরিমাণ খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অস্থায়ী আশ্রয় নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে আসা যাবে। তবে এই জেটি নির্মাণে কতদিন সময় লাগবে, তা জানাননি বাইডেন। এক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাষ্ট্র উত্তর গাজার হাজারো ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে বিমান থেকে এয়ার ড্রপের মাধ্যমে ৩৬ হাজার খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করেছে। ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার: ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে বড় আকারে সহায়তা করে যাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ইউক্রেনে বড় আকারে মার্কিন সহায়তা পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। এই প্রেক্ষাপটে বাইডেন ইউক্রেনের ত্রাণ প্যাকেজের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সিনেটের প্রতি অনুরোধ জানান। বাইডেন বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি ও তার প্রতি আমার বার্তা খুবই সহজ, আমরা চলে যাচ্ছি না। আমরা মাথা নত করব না। কিছু দিন আগে ট্রাম্প রাশিয়ার উদ্দেশে বলেছিলেন, ন্যাটো জোটের যেসব দেশ প্রতিরক্ষায় যথেষ্ট পরিমাণ খরচ করে না, তাদেরকে ‘রাশিয়া চাইলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে’। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বাইডেন বলেন, এক সাবেক প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেছেন। তিনি রুশ নেতার কাছে মাথা নত করেছেন। ট্রাম্পের বিপরীতে নিজেকে ভালো বিকল্প হিসাবে তুলে ধরেন বাইডেন: বাইডেন দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে মার্কিন গণতন্ত্রের রক্ষক হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন, যেখানে তার প্রতিপক্ষ হলো গণতন্ত্রবিরোধী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (মাগা) প্রচারণা। বৃহস্পতিবারের বক্তব্যেও এ বিষয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেন বাইডেন। এই ভাষণে বাইডেন অন্তত ১০ বার ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করেন। তবে প্রতিবারই তিনি ‘আমার পূর্বসূরি’ কথাটি ব্যবহার করেন। গর্ভপাত ও এ সংক্রান্ত অধিকার: ২০২২ সালে সুপ্রিমকোর্টে রো বনাম ওয়েড মামলার রায় নাকচ করার ফলে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে রক্ষণশীলরা আইনগতভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার সুযোগ পান। রিপাবলিকান পার্টির দখলে থাকা কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এ ধরনের আইন পাশ হয়। বিশ্লেষকদের মতে, ডেমোক্র্যাট ভোটারদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়। বৃহস্পতিবার রাতে বাইডেন অঙ্গীকার করেন, তিনি সারা দেশে আবারও গর্ভপাতের বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নেবেন। তিনি বলেন, যদি মার্কিন জনগণ আমাকে এমন একটি কংগ্রেস দেয়, যারা (সন্তানজন্মদান বিষয়ে) সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকে সমর্থন জানায়, তাহলে আমি রো বনাম ওয়েড মামলার রায় পুনর্বহাল করে সে অনুযায়ী আইনও পাশ করব। মার্কিন অর্থনীতি: বাইডেনের ভাষণের বড় অংশজুড়ে ছিল অভ্যন্তরীণ বিষয়, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল অর্থনীতিতে তার প্রশাসনের সাফল্য। বাইডেন দাবি করেন, কোভিড-১৯ মহামারির পর প্রায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তার তৈরি করা নীতিমালা সবচেয়ে কার্যকর হয়েছে। তিনি বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সারা বিশ্বের ঈর্ষার কারণ, মাত্র তিন বছরে আমরা এক কোটি ৫০ লাখ চাকরির ব্যবস্থা করেছি।