ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের এমপি এবিএম আনিছুজ্জামানের বাসায় আটকে রেখে এক কলেজছাত্রকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ফয়সাল আহমেদ নামে ওই কলেজছাত্রকে মারধর করা হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এমপি এবিএম আনিছুজ্জামান। এ ঘটনার বিচার দাবি করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ। ত্রিশাল পৌরসভায় টানা তিন মেয়াদ মেয়র ছিলেন এবিএম আনিছুজ্জামান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি এমপি হন। পরে পৌর মেয়র পদে নির্বাচনে স্ত্রী শামীমা আক্তারকে প্রার্থী করেন। কিন্তু ভোটে পরাজিত হন শামীমা। এ নিয়ে শনিবার রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন ত্রিশাল সরকারি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী ও মানবিক বিভাগ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ। ফেসবুকে তিনি লিখেন ‘পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মেয়র (পৌর মাতা) ৯ সন্তানের মায়ের কী হলো’। পরে ওই পোস্ট সরিয়ে ফেলেন তিনি। ফয়সাল বলেন, ‘রোববার সকালে রাব্বি ফোন দিয়ে আমাকে উপজেলা পরিষদের সামনে নেয়। পরে সেখান থেকে আমাকে ত্রিশাল মধ্যবাজারে এমপির বাসার তিনতলায় নিয়ে যায়। সেখানে রাব্বি, আবদুল্লাহ, অপরিচিত একজন ও এমপির ছোট ছেলে সাদমান সামিন হকিস্টিক, লোহার পাইপ, লাঠি ও চেলাকাঠ দিয়ে আমাকে মারধর করে। পরে এমপির বড় ছেলে তার লোকজন নিয়ে আরেক দফা মারধর করে।’ ফয়সালের অভিযোগ, ‘এক পর্যায়ে একটি পলিথিন সামনে দিয়ে বলা হয় এই ককটেল, তোকে যা বলব তাই করবি, নয়তো তোর আঙুল ভেঙে দেব। আমাকে বলতে বলা হয়, ককটেল দিয়ে সাবেক এমপির (হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী) ছেলে হাসান মাহমুদ আমাকে পাঠিয়েছে এমপিকে মারার জন্য। এগুলো মোবাইল ফোনে তারা ধারণও করে।’ ফয়সাল আরও বলেন, ‘মারধর শেষে এমপির পায়ে ধরে ক্ষমা চাই। কিন্তু এমপি আমাকে বলেন, তুই এগুলো করেছিস, যা করেছিস তো করেছিস, তোর লাইফ শেষ করে দেব। তোর নামে যত মামলা আছে সব দেব। পরে আমাকে পুলিশের হাতে দেয়। জেল থেকে ছাড়া পেলেও আমার হাত কেটে নেওয়ার কথা বলেন এমপি।’ এদিকে এমপির বাসায় আটকে ফয়সালকে মারধর ও পুলিশে দেওয়ার খবর পেয়ে রোববার রাত ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা এমপি আনিছের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। রাত সোয়া ১০টার দিকে লাটিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মিছিল করে থানার গেইটের দিকে গেলে এমপির লোকজন বিপরীত দিক থেকে লাঠি নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম মিয়া, রিয়াদ আরেফিন লিয়ান, আ’লীগ নেতা আবদুস সাত্তার আহত হন। তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম মো. সামছুদ্দিনের জিম্মায় দেওয়া হয় ফয়সালকে। বিষয়টি নিয়ে সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হাসান সোহান এ সময় লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি হওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে যারা ভোট দিয়েছে তাদের এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মধ্যযুগীয় কায়দায় ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’ সংঘর্ষে আহত ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেনের বাবা সাবেক পৌর কমিশনার দুলাল মণ্ডল সংবাদ সম্মেলনে আহাজারি করে তাঁর ছেলেকে মারধরের বিচার দাবি করেন। কলেজছাত্র ফয়সালকে মারধরের বিষয়ে এমপি এবিএম আনিছুজ্জামান বলেছেন, ‘ছেলেটিকে মারধর করা হয়নি। সে তিন মাস ধরে আমার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কুৎসা লিখছে। আমি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, কোনো ছাত্রলীগ কর্মী আমার বিরুদ্ধে এভাবে লিখতে পারে? সে গত সংসদ নির্বাচন থেকে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। এখন আমার স্ত্রী সম্পর্কে অশ্লীল কথাবার্তা লিখছে।’ এমপি আরও বলেন, ‘তার মোবাইল ফোন ঘেঁটে বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে ব্ল্যাকমেইল ও ইয়াবা কারবারে জড়িত তথ্য পাওয়া যায়। পরে আমি তাকে থানায় দিই।’ কলেজছাত্র ফয়সালের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানান এমপি আনিছুজ্জামান। ত্রিশাল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘এমপির ফোন পেয়ে তার বাসা থেকে ফয়সালকে আনা হয়। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া কেন্দ্র করে ঘটনা। ফয়সালের শরীরে মারধরের চিহ্ন ছিল। তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় রাতেই তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির জিম্মায় দেওয়া হয়।’