রাজধানীবাসীর প্রথম পছন্দ চকবাজারের ইফতারি। কারণ এখানে পাওয়া যায় হরেক রকমের ইফতার পণ্য; যা অন্য কোথাও মেলে না। ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে বড় বাপের পোলা, সুতি কাবাব, মুখরোচক বিরিয়ানি আর শাহী হালিম ও জিলাপির জন্য বিখ্যাত। প্রজন্মে পর প্রজন্ম এখানে ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসা বিক্রেতারা এবারও মুখরোচক সব খাবার নিয়ে বসেছেন। তাদের দাবি এবার ইফতারির নানা পদ তৈরিতে খরচ বাড়লেও তারা দাম বাড়াননি, লাভ কমিয়েছেন। তবে বরাবরের মতো এবারও এখানকার ইফতার বাজার সেই খোলা আকাশের নিচেই। রমজানের প্রথম দিন মঙ্গলবার দুপুরে চকের ইফতার বাজারে গিয়ে দেখা যায়- একদিকে চলছে ইফতার ভাজা, অন্যদিকে সাজানোর কাজ। কেউ ব্যস্ত বিক্রিতে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে ক্রেতা আসছেন বাহারি ইফতার সামগ্রী কিনতে। আর তারা পছন্দের খাবার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শাহজাহান আলী বিক্রি করেন আস্ত মুরগির রোস্ট, কোয়েল পাখির রোস্টসহ কয়েক পদ। এবার আস্ত মুরগির রোস্ট ৩০০ টাকা আর কোয়েল পাখির রোস্ট প্রতি পিস ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে এখানে ইফতারি নিয়ে বসি। গত বছর কোয়েলের রোস্ট বিক্রি করেছি ৬০ টাকা পিস। এ বছর আমাদেরকে কিনতেই হয়েছে ৬০ টাকা পিস। রান্না ও মসলার খরচতো আরও ১০ টাকা আছে। ১০ টাকা লাভ না ধরলে কিভাবে হবে। তিনি বলেন, গত বছর পুরো এক মাসে ৬০ হাজার টাকা লাভ করেছি। এবার হবে কিনা জানি না। খাবার না ঢেকে কেন খোলাভাবে বিক্রি করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কি খাবার ঢেকে রাখলে অনেকে দেখতে পান না। ভালোভাবে দেখতে না পারলে ক্রেতা কিনতে চান না।’ একটু সামনে এগোতেই ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়’- নামক বিভিন্ন পদের খাবারের মিশ্রণে মুড়িভর্তার বিশেষ এক খাবার নিয়ে চারদিকে শোরগোল। গতবারের দামেই এবার এই খাবারটির দাম রাখা হয়েছে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। কেউ আধা কেজি, কেউ ২৫০ গ্রাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বিক্রেতা আহমেদ হোসেন বলেন, ‘আমার দাদা এখানে স্বাধীনের আগে থেকে বড় বাপের পোলা নিয়ে বসতেন। এখন আমি আর আমার ভাই বসি। এই খাবার তৈরির খরচ বাড়লেও দাম আমরা বাড়াইনি। বরং লাভের পরিমাণটা কমিয়ে দিয়েছি।’ এই বাজারের আরেক বিখ্যাত খাবার সুতি কাবাব। গরুর সুতি কাবাব কেজি ১০০০ টাকায় এবং খাসির সুতি কাবাব কেজি ১২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চকের এই ইফতারি বাজারে প্রতি কেজি শাহি ছোলা ২৮০ টাকা, ঘুঘনি ১৪০ টাকা, চিকেন আচারি ১৩০০ টাকা, কাশ্মীরি বিফ আচারি ১৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া টানা পরোটা গরু ৬০ টাকা, খাসি ৭০ টাকা এবং মুরগি ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাইরে খোলা আকাশের নিচে অনেকটাই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি করা হলে এই বাজারেই আছে বিখ্যাত আনন্দ কনফেকশনারি। তারাও পুরান ঢাকার মুখরোচক সব ইফাতির বিক্রি করে স্বাস্থ্যসম্মতভাতে ঢেকে। সেখানে চিকেন টিক্কা, চিকেন গ্রেভি, চিকেন ড্রামস্টিক, চিকেন কাটলেট, কিমা পরোটা, পনির পরোটা, দই বড়া, রস বুন্দিয়া, মুরগি মোসল্লাম, রেশমি জিলাপি, ঘিয়ের জিলাপি, বিফ শিক কাবাব, বিফ চাপ, মাটন রেজালা, বোরহানি, ডিম চপ, ভেজিটেবল রোল সবই পাওয়া যাচ্ছে। সামনের দিকে এগোলে আরেক জনপ্রিয় আলাউদ্দিন সুইটমিটে খাবার ঢেকে বিক্রি হচ্ছে। তাদের আইটেমের মধ্যে আছে চিকেন স্টিক, চিকেন নাগেট, চিকেন সাসলিক, চিকেন লেগ, চিকেন জালি টিকা, কলিজার সিঙ্গারা, ডিম চপসহ নানা পদ। আছে ১-৩ কেজি ওজনের শাহি জিলাপি। খাসির লেগ রোস্ট বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০০ টাকায়। ইফতারি কিনতে আসা পুরোনো ঢাকার বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, আমরা চকবাজারের ইফতারি না খেলে মনে হয় এ বছর কি জানি খাইনি। তাই প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইফতারি কেনা হয়। তবে বাসার সবার পছন্দ গরুর সুতি কাবাব। তিনি বলেন, খাবারের দামতো আগেই বেড়ে গেছে অনেক। এখন আসলে কম বলে আর কিছু নেই। তারপরও স্বস্তির বিষয় চকবাজারে ইফতারের আইটেমগুলোর দাম গত বছরের মতোই আছে।