ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে এবার রমজান মাস টার্গেট করে নানা কর্মকাণ্ড শুরু করেছে বিএনপি। তৃণমূল পর্যায়ে ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করছে। এর মাধ্যমে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে চায় দলটি। এতে দেশজুড়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে এবং নেতাকর্মীদের মনোবল আরও দৃঢ় হবে এমন আশা করা হচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রের পাশাপাশি এবার সাংগঠনিক জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতারের আয়োজন চলছে। এসব ইফতারে কারাবন্দি ও গুম-খুন নেতাকর্মীদের পরিবার এবং কারামুক্ত নেতাকর্মীদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের সক্ষমতা প্রমাণে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। এর অংশ হিসাবে রমজানজুড়ে ইফতার রাজনীতির আড়ালে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেবে দলটি। প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের ১৫১টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ইফতারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে বেশি করে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার জন্য হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ইফতার অনুষ্ঠান আড়ম্বরপূর্ণ না করার কথাও বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের লুটপাটের কারণে দেশের জনগণ কষ্টে আছেন। পবিত্র রমজান মাসে মানুষ একটু শান্তি এবং স্বস্তিকর পরিবেশে রোজা পালন করবে, সেহরি করবে, ইফতার করবে, একাগ্রতা নিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করবে, এমন প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দেশে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিদিন বেড়েই চলছে চাল-ডাল-লবণ-তেল-চিনি-পেঁয়াজ-রসুন, তরকারির দাম। এমনকি ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দাম পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে জনগণের দল হিসাবে বিএনপি সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। জনগণের দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন করছে। অনেক নির্যাতন, মামলা-হামলা, অত্যাচারের পরও তারা জনগণের পাশে রয়েছেন। রমজানেও সাধ্যমতো জনগণের পাশে থাকবে বিএনপি। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটা হতাশায় রয়েছেন নেতাকর্মীরা। তাদের আবারও সক্রিয় ও উজ্জীবিত করতেই রমজান মাসজুড়ে চলবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। কোথাও কোনো কোন্দল বা দুর্বলতা থাকলে তা দূর করা হবে। ইফতার পার্টির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার চিন্তা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর হবে। এছাড়া রমজানকেন্দ্রিক সাংগঠনিক তৎপরতায় সরকার সেভাবে বাধাও দিতে পারবে না। এ সুযোগ তারা কাজে লাগাতে চান। নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে চারটি ইফতারের আয়োজন হবে। ইতোমধ্যে প্রথম রোজায় এতিম ও আলেম-উলামাদের সম্মানে ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভা হয়েছে। ২৪ মার্চ কূটনীতিক ও ২৮ মার্চ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে ইফতারের আয়োজনের কথা রয়েছে। এছাড়া পেশাজীবীদের সম্মানেও আয়োজন করা হবে ইফতার। এসব ইফতারে আমন্ত্রিতদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এবারের ইফতার রাজনীতির বিশেষ গুরুত্ব হচ্ছে প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীর ১৫১টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। শুক্রবার ভাটারা ও খিলক্ষেত থানার অন্তর্গত ওয়ার্ডগুলো নিয়ে ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভার মাধ্যমে এই আয়োজন শুরু করেছে মহানগর উত্তর বিএনপি। সোমবার থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক ইফতার শুরু করবে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এতে কেন্দ্রীয় নেতাসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, উত্তরে ৭১টি ওয়ার্ডে ইফতার আয়োজন করা হবে। শুক্রবার ভাটারার ৩টি ও খিলক্ষেতের ৩টি ওয়ার্ডের ইফতার হয়েছে। শনিবার (আজ) পল্লবীর ৫টি ও রূপনগরে ৩টি ওয়ার্ডে ইফতার হবে। এর ফলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ় হবে। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাইদুর রহমান মিন্টু বলেন, দক্ষিণে ৮০টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড। সাত জোনের সাতটি ওয়ার্ড, সে হিসাবে প্রতিদিনই একটি করে ইফতার থাকবে। সাত রোজা থেকে দক্ষিণের ওয়ার্ডের ইফতার আয়োজন শুরু করা হবে। দলীয় সূত্র জানায়, অন্যান্য বছরের মতো এবারও সারা দেশে গুম-খুন আর আহত নেতাকর্মীদের খোঁজ নিতে, তাদের পাশে দাঁড়াতে কাজ করছেন দলটির হাইকমান্ড। বিগত আড়াই মাসের আন্দোলন ছাড়াও এর আগে হতাহত আর নির্যাতিত নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় দেড় হাজারের ওপর নেতাকর্মীকে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তাদের পরিবারকে ইতোমধ্যে ইফতার সামগ্রী পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, এ কর্মসূচি পালনে জেলা বিএনপির নেতারা থানা-উপজেলায় ইফতার ও দোয়া মিলাদের তদারকি করবেন। আর উপজেলার নেতারা ইউনিয়নের ইফতার তদারকি করবেন। ইউনিয়ন নেতারা করবেন ওয়ার্ড পর্যায়ের ইফতার। আর জেলার ইফতার তদারকি করা হবে কেন্দ্র থেকে। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে জেলার নেতারা কবে, কোথায় ইফতারের আয়োজন করবে কেন্দ্র থেকে সে তালিকা করেছে। গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরের ইফতারে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।