অভিভাবক নেই জাতীয় সংসদের ফরিদপুর-৩ আসনে। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ভোটারের এই আসনে এমপি থেকেও নেই। এমপির পদ শূন্য হওয়ার সুযোগও খুব কম। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনে নতুন এমপি না পাওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের এক সময়ের প্রভাবশালী মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুর-৩ আসন থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি প্রায় দুই বছর ধরেই রাজনীতি থেকে নির্বাসিত। বর্তমানে প্রবাসে জীবনযাপন করছেন। মন্ত্রিত্ব হারানোর পাশাপাশি ইতোমধ্যে তিনি দলীয় পদ এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদও হারিয়েছেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিজেই জানিয়েছেন, তিনি এখন অবসরে রয়েছেন। রাজনীতিতে নেই। তবে তিনি এখনও এমপি পদে রয়েছেন। কিন্তু সংসদে টানা চার অধিবেশন অনুপস্থিত থাকলেও তাঁর সদস্যপদ বাতিলের ঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে নির্বাচনী এলাকায় তাঁর অনুপস্থিতিতে উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সংসদ সচিবালয় ও স্পিকারের দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সংবিধানের ৬৭ (খ) অনুযায়ী স্পিকারের অনুমতি ছাড়া টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ শূন্য হয়। খন্দকার মোশাররফের অনুপস্থিতির বিষয়ে ছুটির আবেদন এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে সংসদের বাকি মেয়াদে তাঁর অনুপস্থিতি ৯০ কার্যদিবস হওয়ার সম্ভাবনা কম। সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন গত বছরের ৬ এপ্রিল সর্বশেষ সংসদের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর বাজেট অধিবেশনসহ তিনটি অধিবেশন শেষ হয়েছে। তাতে কার্যদিবস ছিল মোট ৩১ দিন। এরপর গতকাল বুধবার পর্যন্ত বর্তমান অধিবেশনে ১৫ কার্যদিবস সংসদের বৈঠক হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর অনুপস্থিতিতে সংসদের বৈঠক হয়েছে ৪৬ দিন। বাকি মেয়াদেও আর ৪৪ কার্যদিবস অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। আগামী ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তবে শেষের তিন মাসে সাধারণত সংসদের অধিবেশন হয় না। জানতে চাইলে সংসদ সচিবালয়ের উপসচিব (আইন) নাজমুল হক জানান, আসন শূন্য হলেও মেয়াদের শেষ তিন মাসে উপনির্বাচন হওয়ার উদাহরণ নেই। এর আগে টানা ৯০ দিন অনুপস্থিতির কারণে সপ্তম সংসদে নরসিংদী থেকে নির্বাচিত বিএনপিদলীয় এমপি শামসুদ্দীন এছহাকের সদস্যপদ শূন্য ঘোষণার নজির রয়েছে। খন্দকার মোশাররফ বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থান করছেন। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আপাতত তাঁর রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা কম। এমপি পদের বিষয়ে প্রশ্ন করার পরে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল দিলেও তিনি আর রিসিভ করেননি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী করা হয়। পরে তাঁকে এলজিআরডি মন্ত্রী করা হয়। এরপর ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তাঁর অনুগতরা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার উন্নয়ন কাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও জমি দখল করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। ২০২০ সালের জুন থেকেই রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে থাকলেও তিনি কমিটিরও কোনো বৈঠকে অংশ নেননি। গত সপ্তাহে তাঁকে ওই পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। গত ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর গঠিত নতুন কমিটিতেও তাঁকে রাখা হয়নি। আগের কমিটিতে তিনি দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।