জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। গত জুলাই থেকে বিভিন্ন দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সরব বিএনপি। কিন্তু আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য ও সহিংসতা ঠেকাতে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগও। রাজধানী ও বিভাগের পর আজ থেকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি শুরু হচ্ছে তৃণমূলেও রাজধানী ও বিভাগের পর এবার তৃণমূলেও ছড়িয়ে পড়ছে আওয়ামী লীগের \'প্রতিরোধ কর্মসূচি\'। বিএনপি ও তার মিত্রদের চলমান আন্দোলন ঘিরে সম্ভাব্য নৈরাজ্য ও সংঘাত-সহিংসতা ঠেকাতে দেশের মাঠ পর্যায়েও এই কর্মসূচি বিস্তৃত করে দিতে চায় তারা। এ লক্ষ্যে আজ শনিবার সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ আয়োজনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। নেতারা বলছেন, বিএনপি ও তার মিত্রদের চলমান আন্দোলনের বিপরীতে সংশ্নিষ্ট এলাকায় শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি পালন করে আসছিল আওয়ামী লীগ। এতদিন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় পর্যায়ে এই শান্তি সমাবেশের আয়োজন চলে আসছিল। কিন্তু আজ বিএনপি ও তার মিত্ররা যুগপৎভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনের নামে সারাদেশেই সন্ত্রাস-সহিংসতা ও নৈরাজ্য ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে সরকারবিরোধী দলগুলো। এই অবস্থায় সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ঠেকাতে সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে এই শান্তি সমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কোনো অবস্থাতেই বিএনপি ও তার সহযোগীদের দেশের কোথাও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ দেবে না। বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সারাদেশের প্রতিটি জেলার সব ইউনিয়নেই একযোগে আজকের শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি পালিত হবে। তবে শান্তি সমাবেশের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। সংশ্নিষ্ট এলাকার সুবিধামতো সময়ে সমাবেশগুলো হবে, যেখানে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও জেলা, মহানগর ও উপজেলা নেতারা এবং জনপ্রতিনিধিরা যোগ দেবেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের বছরব্যাপী সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এসব শান্তি সমাবেশ আয়োজিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। যদিও বিএনপির কর্মসূচির দিনে অনুরূপ কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টিকে কোনো অবস্থায়ই \'পাল্টা কর্মসূচি\' হিসেবে মানতে নারাজ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা। দলীয় কর্মসূচিগুলোতেও এটা জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করছেন তাঁরা। নেতাদের মতে, বিএনপির সংঘাত-সহিংস কর্মসূচির কারণে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা যেন কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়, সেজন্যই রাজপথে সতর্ক অবস্থানের অংশ হিসেবে এই শান্তি সমাবেশ করছেন তাঁরা। বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচির দিনে কোনো ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দেওয়া মাত্রই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সরকার সমর্থক নেতাকর্মীকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার দলীয় ফোরামের এক যৌথসভায় বলেছেন, বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের আশঙ্কা থেকেই আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব আমরা। যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে, ততক্ষণ আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ চলবে। আমরা ভালোর জন্য প্রস্তুতি নেব, খারাপের জন্য সতর্ক থাকব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো কর্মসূচি দিলেই কিছু সংবাদমাধ্যম বিএনপির কথার প্রতিধ্বনি তুলে বলে \'পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি\'। প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের কর্মসূচি আছে, তবে বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি নয়। আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ করছেও না। বিএনপি করছে আন্দোলনের পদযাত্রা, সমাবেশ। আওয়ামী লীগ করছে শান্তির সমাবেশ। ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন, \'বিএনপি বিদেশি ডোনারদের টাকায় সরকার হটাতে ষড়যন্ত্রমূলক পথে হাঁটছে। তাহলে আমরা কেন কর্মসূচি বাদ দিয়ে মাঠ খালি রাখব?\' প্রস্তুতি তৃণমূলেও: ইউনিয়ন পর্যায়ে আজকের শান্তি সমাবেশ ঘিরে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এই কর্মসূচি সফল করতে এর আগে দেশের ৪০ জেলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৫৩ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বাকি ২৪ জেলায় স্থানীয় নেতা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে শান্তি সমাবেশ আয়োজনের নির্দেশ দেন শীর্ষ নেতারা। দলীয় সূত্র বলছে, ৪০টি জেলার শান্তি সমাবেশ আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগই সংশ্নিষ্ট জেলাগুলোয় চলে গেছেন। আজ শনিবারও যাবেন কেউ কেউ। অন্যদিকে বাকি জেলাগুলোয়ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন নেতাদের সমন্বয়ে শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রায় প্রতিদিনই দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা থেকেও এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শান্তি সমাবেশের পাশাপাশি চলবে মহাসমাবেশও: সারাদেশে যেখানে যেখানে বিএনপির কর্মসূচি, সেখানে সেখানে শান্তি সমাবেশ আয়োজনের পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতে মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতিও নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দেশের আটটি বিভাগীয় সদরে এই মহাসমাবেশগুলোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১১ মার্চ ময়মনসিংহ এবং ১৮ মার্চ বরিশালে বিভাগীয় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য বিভাগুলোতেও মহাসমাবেশ করা হবে। সব মহাসমাবেশেই প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি শুরুর পর এর আগে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গত ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম এবং ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে সুবিশাল জনসভা করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। ঢাকায়ও একাধিক জনসভা কিংবা গণসমাবেশ হয়েছে। তবে সব জনসভা ও গণসমাবেশে লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সেগুলোও কার্যত মহাসমাবেশে রূপ নিয়েছিল। এই তিন বিভাগে পরবর্তী পর্যায়ে মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতিও রয়েছে সরকারি দলের। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় শান্তি সমাবেশ আয়োজনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের জন্যও সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য দলের সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদারের অংশ হিসেবে সারাদেশে সভা-সমাবেশ ও মহাসমাবেশসহ নানা কর্মসূচি চলছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।