প্রতিবছর ঈদের সময় ঘরমুখী মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অন্যান্য বছরের মতো এবারও মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে কর্তৃপক্ষ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অতীতে আমরা লক্ষ করেছি, ঈদযাত্রায় যানজটের কারণে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কে আটকে থাকতে হয়েছে। ভাঙাচোরা ও সরু সড়ক, সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলা এবং নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ঈদযাত্রায় ঘরমুখী মানুষকে এবারও যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে-এমন শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। বস্তুত ঈদের সময় ঘরমুখী মানুষকে যেসব কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা চিহ্নিত। এসব বিষয়ে বছরের পর বছর সরকারের বিভিন্ন স্তরের নীতিনির্ধারকদের বৈঠকে আলোচনা হয়, সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু সমাধান হয় না। কাজেই সমস্যাগুলোর সমাধানে কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো সারা দেশে যানজটের বড় স্পটগুলো চিহ্নিত করেছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঈদের আগে ছুটি না বাড়ালে সড়ক ও মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষ বহন করা গাড়ি স্থবির হয়ে পড়তে পারে। এ সমস্যা এড়াতে অন্তত ঈদের আগে দুদিন ছুটি বাড়ানো দরকার। বস্তুত একসঙ্গে অনেক মানুষ সড়কে নেমে পড়লে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ঠিকমতো কাজ করবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। এছাড়া লক্ষ করা গেছে, ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে যেসব কর্তৃপক্ষ কাজ করে থাকে, ঈদের আগে তারা তৎপর হলেও ঈদের পরে তাদের তৎপরতায় কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ করা যায়। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে এ সময় চালকদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় যাত্রীরাও চালককে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে উদ্বুদ্ধ করে। আবার গাড়ির মালিকের চাপের কারণেও চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে পরিবহণ মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ঈদযাত্রায় যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে সরকারকে রেল খাতেও গুরুত্ব বাড়াতে হবে। প্রতিবার ঈদযাত্রায় রেলে ঘরমুখী মানুষের বাঁধভাঙা ভিড় থাকে। কর্তৃপক্ষ আসনভিত্তিক টিকিট বিক্রি করে। এবার ঈদযাত্রায় ৩ থেকে ৯ এপ্রিল এবং ১৩ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেন চলবে। এসব ট্রেনের ৩৩ হাজার ৫০০ টিকিটের বিপরীতে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ টিকিট কাটতে অনলাইনে হিট করবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা যেন তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। অতীতে দেখা গেছে, ঈদের সময় কোনো কোনো স্টেশনে ট্রেন প্রবেশ করামাত্র বহু মানুষ ট্রেনের ছাদে উঠে পড়েছে। অনেকে ট্রেনের ইঞ্জিন ও দুই বগির সংযোগস্থলে অবস্থান নিয়েছে। ফলে একেকটি ট্রেনের পুরো ছাদ লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনাটিকিটের যাত্রী ঠেকাতেও নিতে হবে ব্যবস্থা। বস্তুত যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার, সবই করতে হবে। লঞ্চে যাত্রীর চাপ কম থাকলেও আশা করা হচ্ছে শেষ মুহূর্তে ভিড় বাড়বে। সড়ক ও নৌ কোনো পথেই যাতে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এবং প্রবেশমুখে অস্বাভাবিক যানজটের কারণে ঈদে ঘরমুখী মানুষকে অতিরিক্ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এ সমস্যা রোধেও নিতে হবে পদক্ষেপ।