নোবেল বিজয়ী ও অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের ওপর অনেক বালা-মুসিবত। ব্যক্তিগতভাবে আমার ওপর বালা-মুসিবত, আমার সহকর্মীদের ওপর বালা-মুসিবত এবং দেশের ওপর বালা-মুসিবত। এই বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা যেন দোয়া করি। মঙ্গলবার দুপুরে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের সংরক্ষিত ফান্ডের লভ্যাংশের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট আমলে গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেন। এসময় ড. ইউনূস আদালতে উপস্থিত হন। শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এখন রমজানের দিন। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন, বালা-মুসিবত থেকে আমরা বাঁচি। আমাদের ওপর অনেক বালা-মুসিবত। আমার ওপর ব্যক্তিগত বালা-মুসিবত, সহকর্মীদের ওপর এবং দেশের ওপরেও। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা দোয়া করি। সামনে ঈদ আসছে, খুশির দিন। আমরা যেন সত্যি সত্যি খুশির ঈদ উদযাপন করতে পারি। তার সঙ্গে পহেলা বৈশাখ। আরও খুশি, সবকিছু এক সঙ্গে। এর মধ্যে বালা-মুসিবত থেকে কিভাবে উদ্ধার পাবো— সবাই মিলে চিন্তা-ভাবনা করি। এককভাবে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনই বালা-মুসিবতে সমষ্টিগতভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত। কাজেই এগুলো থেকে অতিক্রম করতে না পারলে আমাদের মুক্তি নেই, রেহাই নেই। মানুষের রেহাই পাওয়ার রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা নিজের মনে কাজ করে যাই, করে যাচ্ছিলাম। কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নিয়ে কাজ করি না। কতগুলো অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করি, সত্য নিয়ে কাজ করি। দেশ-বিদেশের মানুষ বিশ্বাস করছে যে কারণে তারা উৎসাহিত। মনে হয়েছে এটা মানুষের মঙ্গলের জন্য। সেজন্য দেশ-বিদেশের নেতারা এটা জানতে চায়, বুঝতে চায়। নিজ দেশে প্রয়োগ করতে চায়। এজন্য নানা দেশে যাই, যেতে হয়। নিজের ফুর্তির জন্য যাওয়া তো না, এটা তাদের নেহায়েত আগ্রহে। আমার মাঝে মাঝে দু:খ হয়, সারা দুনিয়া বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে চায়। আমাদের গৌরববোধ করতে হয়। তা না করে আমরা এমন কাজ করছি, আমরা যেন পাপের কাজ করে ফেলেছি। এমন অনুভূতি হওয়ার তো কোনো কারণ ছিল না। বালা-মুসিবতের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনূস বলেন, বালা-মুসিবত হচ্ছে মানুষ যেভাবে বাঁচতে চায়, থাকতে চায় সেভাবে থাকতে পারছে না। আইনের শাসন বলে যে জিনিস, সেটা আমরা পাচ্ছি না কোথাও। আমরা এদেশের অংশীদার, আমরা সবাই মিলেই এদেশ। আমার অনুরোধ, মাহে রমজানের মাসে নিজেদের দিকে তাকাই, নিজ নিজ ভূমিকা পালন করি। আমরা যেটা করতে চাচ্ছিলাম, সেটা করতে পাচ্ছি কিনা। না করতে পারলে কিভাবে আমরা প্রতিবাদ জানাবো, কিভাবে কথাগুলো শোনাতে পারবো, শোনাবার পথ আমরা বের করবো। পথ আমাদের বের করতেই হবে। তাছাড়া কোনও উপায় নেই। দেশে আইনের শাসন নেই। সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। দেশ বালামুসিবতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ খুজে বের করতে হবে। এদিন মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ-৪ নম্বর আদালতে বদলির আদেশ দেন। আগামী ২ মে মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত।