সন্দেহ নেই, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এদেশের একটি উচ্চ মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বুয়েটের ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ গুরুত্বের চোখে দেখা হয়। বুয়েটের শিক্ষাদান পদ্ধতি ও একাডেমিক শৃঙ্খলা অতীতে বিভিন্ন মহল কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বেশ কয়েকদিন ধরে বুয়েটে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি অনেকাংশেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমাদের মনে আছে, ২০১৯ সালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার পর সেখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ছাত্ররাজনীতি এতদিন বন্ধই ছিল, যদিও অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রশিবির যথারীতি তাদের নিয়মমাফিক গোপন সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিল। গত বুধবার মধ্যরাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন, পরীক্ষাও বর্জন করেছেন। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দাবিতে তারা অন্যান্য কর্মসূচিও পালন করছেন। ওদিকে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি চালুর দাবি জানিয়েছে। এমতাবস্থায় বর্তমান সংকট আরও ঘনীভূত হবে কিনা, সে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্রলীগ তো বটেই, এমনকি আওয়ামী লীগও মনে করে, বুয়েটে ছাত্রলীগ রাজনীতি না করলেও সেখানে শিবিরের কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে এবং জঙ্গি সংগঠনও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বলতেই হবে, বুয়েটের বর্তমান অবস্থা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতেও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। ফলে সংকটের সমাধান কীভাবে হবে, তা এখন এক বড় প্রশ্ন। বুয়েটের ছাত্র সংগঠনগুলো যদি শুধু ছাত্রসমাজের সমস্যাগুলো নিয়েই তাদের কার্যক্রম চালু রাখে, তাহলে সেখানে রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলেও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বুয়েটের ছাত্র সংগঠনগুলো জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। বুয়েটে কেন্দ্রীয় বা হলভিত্তিক কোনো নির্বাচিত সংসদও নেই যে, তারাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নিয়মতান্ত্রিক পরিচালনকেন্দ্র হিসাবে কাজ করবে। বুয়েট প্রশাসন এখন কী করবে, সেটাই দেখার বিষয়। সরকার তথা সরকারি দল আওয়ামী লীগকেও সুবিবেচনার পরিচয় দিতে হবে। বুয়েটের প্রশাসনিক ও একাডেমিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে। আরেকজন আবরারের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আগেই সুচিন্তিত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।