বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন ভবনে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বেড়েছে। এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, সম্প্রতি গাজীপুরের কালিয়াকৈরের এক দুর্ঘটনায় তা আবারও স্পষ্ট হয়েছে। ওই দুর্ঘটনায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছেন। যেহেতু এলপিজি সিলিন্ডার দুর্ঘটনা বেড়েছে, সেহেতু এর ব্যবহারে সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক হতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে এলপিজি সিলিন্ডারজনিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ৯৪টি, ২০২৩ সালে ঘটেছে ১২৫টি। অর্থাৎ সিলিন্ডার ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও বাড়ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের তথ্যানুযায়ী, গ্যাসের আগুনে পুড়ে গত বছরের জুন থেকে এ পর্যন্ত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। জানা যায়, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের একটি বিধিমালা থাকলেও তা না মেনে অনেকে বাসাবাড়িতে সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলিন্ডার আবদ্ধ জায়গায় বেশি বিপজ্জনক। এছাড়া সিলিন্ডার থেকে চুলায় গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার যে প্লাস্টিকের পাইপ ব্যবহার করা হয়, তা দাহ্য পদার্থ। এতে বিপদ আরও বাড়ছে। কিন্তু বিধিমালায় এমন পাইপ ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও তা ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, কোনো কোনো ভবনের বেজমেন্টে সিলিন্ডার রেখে পাইপ দিয়ে ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে চুলার সঙ্গে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ব্যবহার থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিরত থাকতে হবে। সিলিন্ডারের বিপজ্জনক ব্যবহার এড়াতে কর্তৃপক্ষকেও কঠোর হতে হবে। সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহারে কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু নিয়মকানুন না মানলে এটি মুহূর্তে ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। সিলিন্ডারের মুখের চাবির মান, গ্যাস সঞ্চালনের পাইপ ও চুলা-সবকিছুরই একটি মাপকাঠি রয়েছে। সেটা সবাইকে অনুসরণ করতে হবে। সিলিন্ডার রাখার ক্ষেত্রে কী ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, রান্না শুরুর আগে-পরে কী করণীয়-এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে সবার স্পষ্ট ধারণা নাও থাকতে পারে। যেসব গ্রাহকের এসব বিষয়ে ধারণা কম, তাদের বিস্তারিত জানাতে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিস্ফোরক পরিদপ্তরেরও দায়িত্ব রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয়ও প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ করা দরকার। জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বস্তুত কারিগরি ত্রুটি, অসচেতনতা ও অসতর্কতার কারণে সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটছে এবং এ ধরনের দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। সাধারণত একটি সিলিন্ডার ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া থাকে। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার কোনো অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাবে না। দেশে প্রচলিত সিলিন্ডারগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হলেও এর সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক নিম্নমানের যন্ত্রাংশ বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব নিম্নমানের যন্ত্রাংশের উৎপাদনকারী, সরবরাহকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা দরকার। অজ্ঞতাবশত কেউ যাতে সিলিন্ডারসংশ্লিষ্ট নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ক্রয় না করেন, এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার। বস্তুত সবার সচেতনতা, সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতাই পারে সিলিন্ডার গ্যাস দুর্ঘটনা রোধ করতে।