রুশ বাহিনীর অভিযানে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ৮০ হাজারেরও বেশি সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য নিহত হয়েছেন। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা পর্যালোচনায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। পাশাপাশি ইউক্রেনীয় বাহিনীর ১ হাজার ২০০ ট্যাংকসহ ১৪ হাজারেরও বেশি সাঁজোয়া যান, সামরিক সরঞ্জাম ও স্থাপনা ধ্বংস করেছে রুশ সেনারা। এছাড়া এই সময়সীমার মধ্যে ইউক্রেনীয় বাহিনীর কব্জা থেকে ইউক্রেনে রাশিয়া অধিকৃত ভূখণ্ডের প্রায় ৪০৩ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন অভিযানরত রুশ সেনারা। শুক্রবার রাজধানী মস্কোতে রুশ সামরিক বাহিনীর সম্মেলন হয়েছে। সেই সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব তথ্য জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু। নিজ বক্তব্যে শোইগু বলেন, গত দুবছরে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের তেমন কোনো সাফল্য নেই। কিন্তু তারা এখনো তাদের পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকদের বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে যে রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে পরাজিত করার সক্ষমতা তারা রাখে। আর এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তারা এখন (রুশ বাহিনীর সঙ্গে) যুদ্ধের পরিবর্তে সন্ত্রাসবাদ উসকে দিচ্ছে, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাচ্ছে এবং বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। তবে আমাদের সামরিক বাহিনী এসব হামলা ঠেকাতে সদা তৎপর এবং এই ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত তাদের পারফরম্যান্স প্রশংসনীয়। সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, শুধু মার্চ মাসেই ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ১৯০টি ছোট- মাঝারি এবং ২টি বড় হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে বলে এসব হামলায়। মার্চ মাসে এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দু’বছরে ইউক্রেনীয় বাহিনীর মোট ৪ লাখ ৪৪ হাজার সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে নিহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছিলেন, যুদ্ধের গত দু’বছরে মাত্র ৩১ হাজার সেনা হারিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তির প্রধান শর্ত অনুযায়ী কৃষ্ণ সাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে কিয়েভ প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে তা না মানা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামারিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য কিয়েভের তদ্বিরের জেরে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে সামারিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই অভিযান এখনো চলছে। তবে বিপুল সংখ্যক জনবল হারানো এবং নিজেদের গোলাবারুদের মজুত অনেক আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক চাপে রয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। বাহিনীর কমান্ডাররা নিজেরাও এ সত্য স্বীকার করেছেন।