যে অজানা শূন্যতা নিয়ে কাটে প্রবাসের ঈদ

প্রকাশিতঃ এপ্রিল ১৩, ২০২৪ | ৯:৩০ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ! এ কথা সবাই মানলেও, প্রবাসীদের জীবনে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রবাসীদের ঈদ উদযাপন ভিন্নরকম। প্রবাসে অনেকেই আছেন যাদের জন্য ঈদের দিনটাও কষ্টকর। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রত্যাশা আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। একের পর এক ঈদ আসে যায়, প্রবাসীদের ঈদ রয়ে যায় নিঃসঙ্গতায় ভরা। ফজরের আজানের পর দল বেঁধে ছোটাছুটি করে গোসল সেরে মিষ্টি মুখে নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য যেন শুধুই স্মৃতি। নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ডাক দিয়ে বলে না- সেমাই খেয়ে যাও। শত কর্মব্যস্ততার মাঝে ঈদের ছুটিতে লম্বা ঘুম অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদের দিনে মূল কর্মসূচি। ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায়। বুকফাটা যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে বিছানায় যেয়ে চোখের পানিতে বালিশ বিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেন অনেকে। আর এরপর দুপুর গড়িয়ে পুবের সূর্যটা পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। বিছানা ছেড়ে দু-একজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় অজানার উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের নিঃসঙ্গ বেদনার দিনটি। মালয়েশিয়া বাংলাদেশ একসাথে রোজা শুরু হলেও একদিন আগে ঈদের নামাজ হয়। মালয়েশিয়ায় ১০ এপ্রিল বুধবার অনুষ্ঠিত হলো ঈদের নামাজ। ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার, পড়ন্ত বিকালে রাজধানী কুয়ালালামপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে মারদেকা স্কয়ারে কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে তাদের ঈদ ভাবনা নিয়ে কথা হয়। আলাপকালে তারা জানিয়েছেন ঈদ অনুভূতির কথা। আর তাতে উঠে এসেছে পরিবারকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট আর যন্ত্রণার সুর। কুমিল্লার তিতাস উপজেলার নজরুল, কবির, সুমন, মো. মুছা মোল্লা, ফয়সাল ও ইসমাইল হোসেন তারা সবাই ১০-১১ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় কর্মরত। নজরুল বলেন, ঈদ মানে আনন্দ হলেও, প্রবাসীদের কাছে তা কষ্টের। জীবিকার প্রয়োজনে প্রিয়জনদের ছাড়া একাকী ঈদ উদযাপন করতে হয়। সবসময় তো বটেই, ঈদের সময় পরিবারের সবাইকে খুব বেশি মিস করি। ঈদের নামাজ পড়ে এসে একটা ঘুম দেই, বিকাল হলে বন্ধুদের নিয়ে একটু সময় আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরে আসি- এই হলো প্রবাসীদের ঈদ’ বলেন নজরুল। কবির বলেন, দেশে পরিবারের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করলেও বিভিন্ন কারণে যাওয়া হয়নি, বেশ খারাপ লাগছে। দেশে যেতে না পারলেও, ফোনে পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা। এইত ১০ বছরের প্রবাস জীবনে ঈদ। ফয়সাল বলেন, ঈদের সময় পরিবারের সবাইকে খুব মিস করি। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আনন্দ করে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। ইসমাইল বলেন, পৃথিবীতে প্রবাসের কষ্টটা একটু অন্য ধরনের। সব আছে, তবু যেন কিছুই নেই। প্রবাসী না হওয়া পর্যন্ত কেউ তাদের কষ্ট অনুভব করতে পারবে না। প্রবাসীদের কষ্টে বাড়তি মাত্রা যোগ করে ঈদ এবং বিশেষ উৎসবের দিনগুলো। সুুমন ও মো. মুছা মোল্লা বলেন, ঈদ আসে যায় কিন্তু প্রবাসীরা কোনোসময়ই চিন্তা মুক্ত হতে পারেনা। মালয়েশিয়ায় প্রতিবছর ভিসা নবায়ন করতে হয়। ভিসা না থাকলে সবসময় বাড়তি একটা চিন্তা। অনেকে আবার বাড়তি টাকা দিয়ে নবায়ন করতে পেরেছেন তাও হাতেগোনা কয়েকজন। বলা হচ্ছে ২০২৩ সালে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের ভিসা নবায়ন হচ্ছেনা। ভিসা না থাকলে এখন আর কাজ করা যায়না। এরকম কতজন থাকতে পারে যারা ভিসা পায়নি আপনাদের ধারনা? প্রতিউত্তরে সুমন, মুছা বলেন, সঠিক বলা মুশকিল তবে লাখের ওপরে হবে যারা ভিসা করতে পারেনি। নতুন আরটিকে প্রোগ্রামেও এই সকল প্রবাসী বৈধতার আবেদন করতে পারেনি। বলা হয় প্রবাসীরা গোল্ডেন বয়, রেমিট্যান্স যোদ্ধা ইত্যাদি। দেশের অর্থনৈকি সম্মৃদ্ধিতে প্রবাসীদের প্রধান ভূমিকা থাকলেও প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে আমাদের সরকার উদাসীন! আমাদের সরকারের উচিৎ এ বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধা করা। মুছা বলেন, ভিসা নবায়নের ঝামেলাত আছেই সঙ্গে এমআরপি পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ঝামেলা। আবেদন করলে সময়মত পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। আবার অনেকে দেশে ছুটিতে গিয়ে ই-পাসপোর্ট করে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়াতে অনেকে ভিসা নবায়ন করতে পারছে না। হাইকমিশন থেকে কয়েকবার বলা হলেও ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হচ্ছেনা। প্রবাস জীবন মানে নিষ্ঠুর, নিঃসঙ্গ জীবনযাপন ও প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে দেয়ালহীন কারাগারে বসবাস। কারও দুঃখ কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না। নিজের দুঃখ নিজের অন্তরে রেখে নীরবে কান্না করতে হয় বললেন নজরুল, কবির, সুমন, মুছা, ফায়সাল ও ইসমাইলরা।