কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে নতুন কৌশল নিয়েছে র্যাব-পুলিশ। গ্যাং সদস্যদের চেয়ে আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারীদের দিকে বেশি নজর দিতে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডিএমপির পক্ষ থেকে এই মুহূর্তে গ্যাংয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। এতে আরও প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। এর পরই তালিকা ধরে অভিযান শুরু হবে। তবে গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে বড় অভিযান চালাবে না ডিএমপি। অন্যদিকে কঠোর হস্তে কিশোর গ্যাং দমনের সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি। ডিএমপির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কিশোর গ্যাং নিয়ে কোনো আইন নেই। তবে শিশু আইন আছে। শিশু আইনে ১৮ বছরের কম বয়সি কেউ অপরাধ করলে তাকে সাধারণ কারাগারে পাঠনো যায় না। এমনকি তাকে সাজাও দেওয়া যায় না। তাকে পাঠাতে হয় কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। দেশে মাত্র তিনটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র আছে। দুটি ছেলেদের জন্য এবং একটি মেয়েদের। কিন্তু ওই কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা নেই। তাদের গ্রেফতার করেই কিশোর অপরাধ দমন সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে ঢাকায় ১৪টি গ্যাংয়ের ৪৬৭ জন সদস্য আছে। গত তিন মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কিশোর গ্যাংয়ের ৩২০ জন গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে ৬৬ মামলা হয়। কিশোর গ্যাংয়ের ৫১টি মামলা বিচারাধীন। গত তিন মাসে কিশোর গ্যাংসংক্রান্ত ৫৮টি মামলায় ২৯৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে দুটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তারা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। তবে কিশোর গ্যাংসংক্রান্ত মামলার আসামি তারা। জানতে চাইলে ডিএমপির উপকমিশনার (ক্রাইম) আলমগীর হোসেন বলেন, কোনো কিশোরের বিচ্যুত আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং চুলের কাটিং দেখলেই বোঝা যায়-সে হয়তো কোনো গ্যাংয়ে জড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রথমেই সংশ্লিষ্ট কিশোরের পরিবারের নজরে আসবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের নজরে আসবে। আর তৃতীয়ত, বিষয়টি নজরে আসবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির। কারণ বখাটেপনা সাধারণত পাড়া-মহল্লা থেকেই শুরু হয়। এসব কারণেই আমরা পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং জনপ্রতিনিধিদের সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে প্রাপ্তবয়স্ক যেসব ব্যক্তি কিশোর গ্যাং সদস্যদের মদদ দিচ্ছে তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। এ কারণেই তাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। এদিকে কঠোর হস্তে কিশোর গ্যাং দমন করার সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। রোববার কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদের সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব বাহিনীকে আরও সচেতন ও সতর্ক থেকে কাজ করার সুপারিশ করে। রোববার সন্ধায় র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর নতুন পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, কিশোর গ্যাং দমনে আমরা আইন অনুযায়ী কার্যক্রম চালাব। অতীতে কিশোর গ্যাংয়ের অনেক সদস্যকে আমরা গ্রেফতার করেছি। এবার তাদের গডফাদারদের প্রতি নজর দিচ্ছি। এদিন দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, নির্মূলে উচ্চ পর্যায়ে নির্দেশনা পেয়েছি। সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্ত করে এটা খুঁজে বের করা হবে। কিশোর গ্যাং চক্রকে আমরা সমূলে উৎখাত করব ইনশাআল্লাহ। এজন্য অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি এবং শিক্ষকসহ সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। রোববার মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে কিশোর গ্যাং দমনে মাঠ পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এর আগে শনিবার এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ১০টি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যের অপরাধ লক্ষ করা যায়। এসবের মধ্যে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি। তিনি বলেন, ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সি কেউ অপরাধ করলে আমরা তাকে কিশোর অপরাধী বলছি। এই বয়সি কিশোররা দলবদ্ধভাবে অপরাধ করলে তাকে আমরা বলছি ‘কিশোর গ্যাং’। আমরা ‘কিশোর গ্যাং’ শব্দ বলতে চাই না। তিনি বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কিছু অনুসারী রয়েছেন, যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি। এলাকায় রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ কিশোরদের ব্যবহার করছেন।