আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে আসছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে। নতুন এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ২ হাজার কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এদিকে সবচেয়ে কম বরাদ্দপ্রাপ্ত খাত হলো প্রতিরক্ষা। এখানে ধরা হয়েছে ৭১০ কোটি টাকা। মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৬ মে এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায়। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এদিকে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাড়াতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে প্রথমবার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে এনইসি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা মেনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রকল্পের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে অংশ দেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পে জমির বিষয় থাকলে আগে থেকেই জমি অধিগ্রহণের জন্য আলাদা প্রকল্প নিতে হবে। এছাড়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রকল্প পরিচালকদের দক্ষ করাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন মঙ্গলবার বলেন, এত বড় এডিপি তো কখনোই সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এবারও দেখা গেল স্বাভাবিকভাবেই এডিপি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ মূল এডিপির তুলনায় কম বৃদ্ধি মনে হলেও সংশোধিত এডিপির তুলনায় অনেক বেড়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দরকার ছিল এডিপির প্রকল্প সংখ্যা যৌক্তিক বা পরিষ্কার করা। এর মানে হলো, বছরের পর বছর যেসব প্রকল্প চলছে, তা অল্প অল্প বরাদ্দ দিয়ে রাখা হচ্ছে। সেগুলোর কাজ না হলেও তো খরচ ঠিকই হচ্ছে। যেহেতু এবার নির্বাচনের অজুহাত নেই এবং নির্বাচনের পর প্রথম এডিপি, সেহেতু এরকম ছোট ছোট প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল। যেটি রাজনৈতিক কারণে অন্য সময় হয়তো কঠিন হয়ে পড়ে। সেই সুযোগটি হারিয়ে গেল। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, এডিপির গুণগতমানের বিষয়টি বাকির খাতায়ই থেকে গেল। সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এডিপিতে সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তা মিলে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরেও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন আছে ১৩ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ধরলে নতুন এডিপির আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। খাতভিত্তিক বরাদ্দ : ১৫টি খাতের বরাদ্দ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে শিক্ষা খাত ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অন্যান্য খাতের বরাদ্দ হচ্ছে-গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি ৩ লাখ, স্বাস্থ্যে ২০ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৮ লাখ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি ২১ লাখ এবং কৃষি খাতে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। আরও আছে শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৬ হাজার ৪৯২ কোটি ১৮ লাখ, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৪ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯২ লাখ, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনে ৩ হাজার ৪৯২ কোটি, সামাজিক সুরক্ষায় ৩ হাজার ৩০৪ কোটি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় ৩ হাজার ৩০৮ কোটি এবং সাধারণ সরকারি সেবা খাতে দেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, বৈদেশিক সহায়তার যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, আশা করছি সেটি পূরণ করা সম্ভব হবে। কেননা চলতি অর্থবছর যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ অর্থ খরচে ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলোকে কম বরাদ্দ দিয়ে যারা বেশি ভালো করেছে, তাদের চাহিদামতো বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ইআরডি প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে আগামী অর্থবছরের এডিপির বাস্তবায়ন বাড়ানোর কাজ চলছে। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ : আগামী অর্থবছরের এডিপিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগকে ৩২ হাজার ৪২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিভাগ ২৯ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। আরও আছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে যত উন্নয়ন প্রকল্প : আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৩৩৭টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১৪৯টি, কারিগরি সহায়তার ৮৬টি এবং সমীক্ষা প্রকল্প রয়েছে ২৩টি। মোট প্রকল্পের মধ্যে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তর হবে ১ হাজার ২৭৭টি প্রকল্প। বাকিগুলোর মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৬০টি। এছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে নতুন কিন্তু অনুমোদনহীন প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৮৯৪টি, বৈদেশিক অর্থায়নের সুবিধানে অনুমোদনহীন নতুন ২৫৭টি প্রকল্প এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রকল্প থাকবে ৮০টি।