প্রথমবারের মতো আদালতে মুখোমুখি হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস। মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের আদালতে উপস্থিত স্টর্মির পরনে ছিল কালো রঙের ঢিলেঢালা পোশাক। তার চুল ছিল পেছন থেকে বাঁধা। আদালতে অবস্থনের বেশিরভাগ সময় তিনি ট্রাম্পের দিকে তাকাননি। দুজনের মধ্যকার যৌন সম্পর্ক এবং অর্থ লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে কয়েক বছর ধরেই আলোচনা চলছে। মঙ্গলবার ট্রাম্পের উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন স্টর্মি। এবারই প্রথম আদালতে অভিযুক্ত ট্রাম্পের উপস্থিতিতে তার থেকে সামান্য কয়েক ফুট দূরত্বে বসে সে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন স্টর্মি। সকালের অধিবেশনে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় স্টর্মিকে বেশ বিচলিত দেখাচ্ছিল। তিনি এত দ্রুত কথা বলছিলেন যে তাকে একটু ধীরে কথা বলতে অনুরোধ করেন কৌঁসুলি সুসান হফিংগার এবং বিচারপতি মারচান। কৌঁসুলি হফিংগারের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কখনো কখনো তিনি তাল হারিয়ে ফেলছিলেন। বিচারপতি তখন কৌঁসুলিকে বলেন, তিনি যেন তার সাক্ষীর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসেন। অভিযোগকারী স্টর্মি ফৌজদারি মামলার শুনানির ১৩তম দিন গতকাল মঙ্গলবার যে আদালতে হাজির হবেন, তা আগেই মোটামুটি চাউর হয়েছিল। তবে এদিন তার জবানবন্দির মধ্য দিয়ে এ বিচার প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে নাটকীয় দিনটি দেখা গেছে। ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে তিনি বেশ বিস্তারিত কথা বলেছেন। আদালতে দাঁড়িয়ে স্টর্মি যতটা সময় কথা বলেছেন, তার বেশির ভাগটাই ছিল ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন কেলেঙ্কারির বিষয়ে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, ২০০৬ সালে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পরে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে মুখ না খুলতে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া হয়েছিল স্টর্মিকে। আর ব্যবসায়িক রেকর্ডে এ তথ্য গোপন করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যবসায়িক তথ্য নিয়ে জালিয়াতি করার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে। ড্যানিয়েল স্টর্মির মুখ বন্ধ রাখতে তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার অর্থ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর এসব অভিযোগ আনা হয়। ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও দাবি করেছেন, স্টর্মির সঙ্গে তার কোনো যৌন সম্পর্ক হয়নি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, স্টর্মি যা বলে বেড়াচ্ছিলেন, তা থেকে থামাতে ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন স্টর্মিকে অর্থ দিয়েছিলেন। স্টর্মির বক্তব্যের কিছু অংশে ট্রাম্প মাথা নেড়ে একমত না হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তা দেখে বিচারপতি ট্রাম্পকে সতর্ক করেন। গতকাল দিন শেষে আদালতের প্রকাশিত নথি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। স্টর্মি ড্যানিয়েলস এবারই যে প্রথম ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ বিস্তারিত আকারে প্রকাশ করেছেন, তা নয়। মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্পের সঙ্গে তার চুক্তি হওয়ার খবরটি প্রকাশ্যে আসার পর জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকার, নিজের নামে তৈরি হওয়া একটি প্রামাণ্যচিত্র, যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকার এবং নিজের বই ‘ফুল ডিসক্লোজার’–এ তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের বর্ণনা দিয়েছেন। ২০০৬ সালের ঘটনাগুলো বর্ণনার সময় স্টর্মি জুরির দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, একটি তারকা গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়। ট্রাম্প তখন তাকে খাবারের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। স্টর্মি ড্যানিয়েলস আদালতে বলেছেন, তিনি শুরুতে ট্রাম্পের সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দিতে চাননি। তবে ট্রাম্পের প্রচারবিষয়ক সহযোগী তাকে উদ্বুদ্ধ করেন। বলেন, ‘এতে কী আর এমন সমস্যা হয়ে যাবে?’ কথাটি বলার পর আদালতে উপস্থিত ব্যক্তিদের কেউ কেউ হেসে ওঠেন। পরে স্টর্মি নৈশভোজে যোগ দিতে ট্রাম্পের হোটেলের স্যুটে যান। সেখানে তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়। স্টর্মি বলেছেন, এ ক্ষেত্রে তার সম্মতি ছিল। ট্রাম্পের আইনজীবীদের ক্ষোভ দিনের শুরুতে ট্রাম্পের আইনজীবীরা অনুরোধ জানান, সরকারি কৌঁসুলিরা স্টর্মিকে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগের বিষয়ে কী কী জিজ্ঞাসা করতে পারবেন, তা নিয়ে আদালত যেন সীমারেখা টেনে দেন। তবে কৌঁসুলিরা যুক্তি দেখান, স্টর্মিকে ট্রাম্পের অর্থ দেওয়ার কারণ উদ্ঘাটনের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই হবে। সরকারি কৌঁসুলিরা স্টর্মিকে যখন বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলেন, তখন ট্রাম্পের আইনজীবীরা বারবারই উঠে উঠে আপত্তি জানাচ্ছিলেন। এতে আদালত কক্ষে কিছুটা হট্টগোল হয়। এদিন বিচারপতি হুয়ান মারচানও স্বীকার করেছেন, মঙ্গলবার আদালতে যা বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তার কিছু কিছু না বলাই ভালো ছিল। তিনি সরকারি কৌঁসুলিদের ব্যক্তিগত ধরনের প্রশ্নগুলো সুনির্দিষ্ট করে করার অনুরোধ করেন। ট্রাম্পের আইনজীবী সুসান নেচেলেসও মঙ্গলবার স্টর্মিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি এমন অভিযোগের পেছনে স্টর্মির উদ্দেশ্য আছে বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় দুজনের মধ্যে অনেকটা ঝগড়া বেধে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। স্টর্মিকে নেচেলেস বলেন, ‘ওখানে বসে বসে আপনি কথাগুলো সাজাচ্ছিলেন, তাই না?’ আদালতের অধিবেশন শেষ হওয়ার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি মনে করেন বিচার কাজ ভালোভাবে চলছে। সূত্র: বিবিসি নিউজ।