স্থগিত হচ্ছে ৩৯৫ প্রকল্পের ব্যয়

প্রকাশিতঃ মে ৯, ২০২৪ | ৮:০৩ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব অবহেলায় নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছে ৩৯৫ উন্নয়ন প্রকল্প। জুনে এসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। নিয়মানুযায়ী মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার তিন মাস আগেই এগুলোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথা। কিন্তু এক মাস বাকি থাকলেও কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। ফলে এসবের অর্থছাড় ও ব্যয় বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (এনইসি) সভায়। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এতে ভবিষ্যতে এসব প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ১৬ মে অনুষ্ঠেয় এনইসির বৈঠকে সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। তবে একেবারেই বাতিল না করে আগামী বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হচ্ছে প্রকল্পগুলো। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান আইএনএম-এর নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কে. মুজেরী বুধবার বলেন, এটা অবশ্যই পরিকল্পনা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ। কেননা, এসব প্রকল্পে মনিটরিং ঠিকমতো হয়নি। যদি সেটি হতো, তাহলে জুনে মেয়াদ শেষ হবে-এটি সংশ্লিষ্টদের চোখে পড়ত। এতে প্রকল্প পরিচালকসহ জড়িতদের গাফিলতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন সেই গাফিলতিকে ছাড় দিয়ে নীতিমালার বাইরে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পগুলো যোগ করবে। ভবিষ্যতে যারা দায়িত্বে অবহেলা করবেন, এর মাধ্যমে তাদের উৎসাহিত করা হবে। তাই যাদের গাফিলতির ফলে এমন ঘটনা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সূত্র জানায়, এডিপি তৈরির নীতিমালায় বলা হয়েছে-যেসব প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হবে, সেসব প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া পরবর্তী অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না। কিন্তু এটি না মেনেই আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ৩৯৫টি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলোর মেয়াদ জুনেই শেষ হয়ে যাবে। তবে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, মেয়াদ বৃদ্ধি যথাসময়ে না হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম ৪/৫ মাস এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ করা টাকা ছাড় বা ব্যয় করা সম্ভব হয় না। ফলে এডিপির বরাদ্দ কমে যায় এবং সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রকল্পগুলো ৩০ জুনের মধ্যে মেয়াদ বৃদ্ধি বা সংশোধনের সব প্রক্রিয়া শেষ করা প্রয়োজন। যাতে অর্থবছরের শুরুতেই অর্থছাড় বা ব্যয় করা যায়। এজন্য আগামী অর্থবছরের এডিপিতে ‘তারকাচিহ্ন’ দিয়ে রাখা যেতে পারে। তবে বাস্তবায়ন মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া কোনো প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থছাড় বা ব্যয় করা যাবে না। এ বিষয়ে এনইসির নির্দেশনা জানতে চাওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামন-আল-রশীদ বলেন, এটা অবশ্যই দায়িত্বে অবহেলা। কেননা, প্রকল্পের মেয়াদ কবে শেষ হবে, সেটি প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সভাপতিত্বে এডিপি বাস্তবায়ন সভাও হয়। সেখানে এসব বিষয় উঠে আসার কথা। পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) এবং প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) বৈঠকগুলোয়ও এ নিয়ে অবশ্যই আলাপ-আলোচনার কথা। কিন্তু কেন সেটি হয়নি, বোঝা যাচ্ছে না। তাই প্রকল্প পরিচালকসহ (পিডি) সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। বছরের পর বছর একই ঘটনা ঘটছে; কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই-এটা হতে পারে না। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনেরও একটা ভূমিকা থাকা দরকার। আরও কঠোর হতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থবছরের ৪-৫ মাস যদি বাস্তবায়ন কাজ বন্ধ থাকে, তাহলে মেয়াদ ও ব্যয়বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে যায়। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) এডিপিতেও ঘটেছিল একই ঘটনা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপি থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প তারকাচিহ্ন দিয়ে যোগ করা হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে ১৫ বছর চলমান প্রকল্প ছিল একটি এবং ১৩ বছর চলমান একটি। এছাড়া এক যুগ বা এরও বেশি সময়ের তিনটি, ১১ বছর ও এর বেশি দুটি, ১০ বছর ও এর বেশি সময়ের পাঁচটি এবং নয় বছর ও এর বেশি সময় চলা প্রকল্প ছিল ছয়টি। আগামী অর্থবছরের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প গুলোরও প্রায় একই অবস্থা। পরিকল্পনা কমিশন জানায়, এডিপিতে আগে থেকেই কয়েকটি ধীরগতির প্রকল্প ছিল। এর মধ্যে ১৬ বছর ধরে চলছে ‘পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্প। ২০০৭ সালে হাতে নেওয়া হয় এটি। ‘বিসিক শিল্পপার্ক সিরাজগঞ্জ’ প্রকল্পেও রয়েছে ধীরগতি। চার বছরের এ প্রকল্প ১৪ বছর ধরে চলছে। গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পও একই অবস্থা।