উপজেলা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ এমপিদের ভোট কোথায়!

প্রকাশিতঃ মে ১০, ২০২৪ | ৯:১৪ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সন্দ্বীপ উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৩ সংসদীয় আসন। চলতি বছরের গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী এ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান (মিতা) পান ৫৪ হাজার ৭৫৬ ভোট। ওই সময়ে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯১৪ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়ে ৮৭ হাজার ৫৮১টি। ভোট পড়ার হার ছিল ৩৬ শতাংশের বেশি। গত বুধবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এই সন্দ্বীপে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৬ জন ভোটারের মধ্যে মোট ভোট পড়েছে ৪৫ হাজার ৩৬২টি। ভোট পড়ার হার ১৮.৪৬ শতাংশ। জাতীয় সংসদের মাত্র চার মাস পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমেছে প্রায় এক লাখ ৯৩ হাজার। মাহফুজুর রহমান (মিতা) যে সংখ্যক ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তার চেয়ে কম ভোট পড়েছে এই উপজেলার সব কেন্দ্রে। একইভাবে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৪ লাখ ২০ হাজার ৮৩৩ জন ভোটারের মধ্যে এবার ভোট পড়েছে ৭৩ হাজার ২৯৯টি। ভোট পড়ার হার ১৭.৪২ শতাংশ। এ উপজেলায় ৬৭ হাজার ৪৮১টি ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. আতাউর রহমান। অথচ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া সদর আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবউল আলম হানিফ এক লাখ ২৭ হাজার ৮০৩ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন ৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৪ ভোটের মধ্যে পড়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৩ ভোট। অর্থাৎ এই আসনেও সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে যে সংখ্যক ভোট পড়েছে পুরো উপজেলা নির্বাচনে ওই সংখ্যক ভোট পড়েনি। জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু চট্টগ্রাম-৩ বা কুষ্টিয়া-৩ সংসদীয় আসন নয়, অনেক এলাকায় সংসদ নির্বাচনের চেয়েও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অন্তত ১৪টি উপজেলায় ২৫ শতাংশ বা তার কম ভোট পড়েছে। আরও ১৫টি উপজেলায় ২৬-৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রথম ধাপে যে ১৩৯টিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে সেগুলোতে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৬.১০ শতাংশ। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৪১.৮ শতাংশ। সাধারণত সংসদের তুলনায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি হয়। এবার উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলে উলটো চিত্র দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও কী ভোটকেন্দ্রে যাননি? এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, সামনের ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সেজন্য কাজ করবে আওয়ামী লীগ। আমরা আশা করছি, সামনে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে যে সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছেন তা সন্তোষজনক। যারা ভোটার উপস্থিতি কমের কথা বলছেন তারা শুধু বিরোধিতা করার জন্যই এগুলো বলছেন। আমরা বলতে পারি-সব মিলে নির্বাচন সন্তোষজনক হয়েছে। বিক্ষিপ্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে বুধবার দেশের ১৩৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনের সুযোগ থাকলেও এবার প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে নির্বাচনে প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে এবং ভোটার উপস্থিতিও বেশি হবে বলে আশা করেছিল দলটি। অপরদিকে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করে। বিএনপির যেসব নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে আহ্বান জানানো হয়। অন্যান্য দলও দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেয়নি। এ কারণে প্রথম ধাপের সব প্রার্থীই স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেন। তবুও আগের উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটার উপস্থিতি কম। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে বেশিরভাগ স্থানে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বনাম বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে ভোট হয়। তখন প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৪৩ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এবার প্রথম ধাপে ভোট পড়ার হার ৩৬.১০ শতাংশ। এ ধাপে ১৩৬ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়। ওই ১৩৬ উপজেলায় ২ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪১৩ জন ভোটার ছিলেন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ৯৮ লাখ ৬৮ হাজার ১৫২টি। ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমে যাওয়া ইসি কীভাবে মূল্যায়ন করছে তা জানতে চাওয়া হয় নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের কাছে। তার মতে, মোটা দাগে পাঁচ কারণে এবার উপজেলা নির্বাচনে ভোট কম পড়েছে। এগুলোর মধ্যে বৈরী আবহাওয়া, ভোটে বিএনপি অংশ না নেওয়া, জনপ্রিয় প্রার্থীর অভাব, ধান কাটার মৌসুম এবং সাধারণ ছুটি থাকায় শ্রমিকরা নিজ এলাকায় চলে যাওয়ায় উপজেলায় ভোট কম পড়েছে। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের মাঠ প্রশাসন থেকে আগেই বলেছিল যে, ধান কাটার মৌসুমের জন্য ভোট কম পড়তে পারে। এছাড়া ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। আবার একটি বড় দল রাজনৈতিকভাবে অংশ না নেওয়ায় ভোট কম হয়েছে। শহর এলাকার ছুটি থাকলে শ্রমিকরা বাড়ি চলে যায়। এর উদাহরণ গাজীপুর। সেখানে ভোট কম পড়েছে। শুধু ধান কাটা নয়, নানা কারণে ভোট কম পড়েছে। আরও কোনো কারণ থাকলে তা গবেষকরা বলতে পারবেন। ভোট পড়ার হারে বড় ব্যবধান : ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এক উপজেলার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী আরেক উপজেলার ভোট পড়ার হারে বড় ব্যবধান রয়েছে। প্রথম ধাপে জয়পুরহাটের খেতলাল উপজেলায় সর্বোচ্চ ৭৩.১৬ শতাংশ ভোট পড়ে। অপরদিকে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় ভোট পড়ে মাত্র ১৭ শতাংশ। পঞ্চগড় জেলার সদর, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া উপজেলায় একইদিন ভোটগ্রহণ হয়। পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ২৩.০৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। অথচ পার্শ্ববর্তী আটোয়ারী উপজেলায় ৫২.০৭ এবং তেঁতুলিয়ায় ৬৬.১৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ভোট পড়ার হার ১৭.৪২ শতাংশ। অথচ একই জেলার খোকশা উপজেলায় ভোট পড়েছে ৬০.২১ শতাংশ। আরও অনেক জেলায় ভোটের এমন ব্যবধান দেখা গেছে। ইভিএম ও কাগজের ব্যালটে ভোটের ব্যবধান : প্রথম ধাপে ২১টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হয়। ওই ২১ উপজেলায় ৫১ লাখ ৯০ হাজার ২৫৪টি ভোটের মধ্যে পড়েছে ১৬ লাখ ২৫ হাজার ২৮২টি। ভোট পড়ার হার ৩১.৩১ শতাংশ। অপরদিকে ১১৫টি উপজেলায় কাগজের ব্যালটে ভোট নেওয়া হয়। সেখানে ভোট পড়ার হার ৩৭.২২ শতাংশ। অর্থাৎ ইভিএম ও ব্যালটের ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়ার হারের ব্যবধান ৭ শতাংশ।