বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর ৪৪৮ কোটি টাকা

প্রকাশিতঃ মে ১৯, ২০২৪ | ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সরকারের ৩৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে ৪৪৮ কোটি ৭০ লাখ ১১ হাজার ৩১৪ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে। এর পরিমাণ প্রায় ১৭৬ কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯২৬ টাকা। শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই ওই সংস্থার বকেয়া ১৮ কোটি ৩ লাখ ৮৫৮৭ টাকা। কোনো ব্যক্তি পরপর ৩ বছর ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করলে জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সে ধরনের কোনো বিধান নেই। ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া রেখেই চলছে। এই ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন ভূমিসংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেন, আগের চেয়ে বকেয়ার পরিমাণ অনেক কমে এসেছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এক সময় চেকের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করত। এখন আমরা সরকারি কর্মচারীদের বেতনের মতো আইবাসের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অর্থ থেকে ভূমি উন্নয়ন কর কেটে নিচ্ছি। ফলে বকেয়া রাখার সুযোগ থাকবে না। যা বকেয়া আছে আশা করি শিগগিরই আদায় হয়ে যাবে। সচিব আরও জানান, ভূমি উন্নয়ন পরিশোধের বিষয়ে এখন সবাই আন্তরিক। ভূমি সংস্কার বোর্ড সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো চলতি অর্থবছরের ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া রেখেছে তা কিন্তু নয়। সরকারের ৩৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বছরের পর বছর ধরে ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া রেখেই চলছে। তবে আগের তুলনায় বকেয়ার পরিমাণ কমে এসেছে। আগে যেখানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাছে প্রায় ১ হাজার ৫শ কোটি টাকা পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া ছিল, এখন তা কমে এসে শত কোটির ঘরে ঠেকেছে। বর্তমানে সব মণালয়ের কাছে ভূমি উন্নয়ন করের সাকুল্য বকেয়া ৪৪৮ কোটি ৭০ লাখ ১১ হাজার ৩১৪ টাকা। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে ভূমি উন্নয়ন করের দাবি রয়েছে ৫৩৩ কোটি ৬ লাখ ৩৪ হাজার ২০২ টাকা। সম্প্রতি ভূমি সংস্কার বোর্ড থেকে এ পরিমাণ ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া রয়েছে বলে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এসংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুধু চলতি বছর ৩৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে বকেয়া ৮৪ কোটি ৩৬ লাখ ২২ হাজার ৮৮৮ টাকা। সবচেয়ে বেশি রেলওয়ের কাছে। তারপর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কাছে পাওনা ১০ কোটি ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৯৫৪ টাকা। এই সংস্থার কাছে আগের বকেয়া ২৭ কোটি ৪৬ লাখ ৫৬ হাজার ১৬৬ টাকা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বকেয়া ৭ কোটি ৮৭ লাখ ৭৪ হাজার ৭০৬ টাকা। এদের কাছে আগের বকেয়া ২১ কোটি ৮৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৭৩ টাকা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে বকেয়া এক কোটি ৪৮ লাখ ৬২ হাজার ৩২৪ টাকা। এই সংস্থার আগের বকেয়া দুই কোটি ১৬ লাখ ৯২ হাজার ১৫৩ টাকা। বন অধিদপ্তরের কাছে চার কোটি ৮২ লাখ ৫৩ হাজার ৬১৯ টাকা এবং আগের বকেয়া ৭৭ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার ৫০২ টাকা। বাংলাদেশে সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের কাছে ভূমি উন্নয়ন করের চলতি বছর বকেয়া এক লাখ ৮ হাজার ১০৭ টাকা এবং আগের বকেয়া রয়েছে ৩১ লাখ ৬৩ হাজার ৭০ টাকা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ সংস্থার কাছে চলতি বছরের বকেয়া ১৩ লাখ ১৫ হাজার ৩৬৭ টাকা এবং আগের বকেয়া রয়েছে ২৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭৮ টাকা। বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের কাছে ভূমি উন্নয়ন করের বকেয়া ২৯ হাজার ২৪০ টাকা এবং এই সংস্থার কাছে আগের বকেয়া রয়েছে ২৫ হাজার ৮২০ টাকা। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে বকেয়া পাঁচ লাখ ৪২ হাজার ১২০ টাকা এবং আগের বকেয়া আছে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৫ টাকা। পানি সম্পদ সংস্থার কাছে চলতি অর্থবছরের বকেয়া দুই হাজার ৪২০ টাকা এবং আগের বকেয়া রয়েছে ৮ হাজার ১৬৮ টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে চলতি বছরের ভূমি উন্নয়ন করের বকেয়া এক কোটি দুই লাখ এক হাজার ৬৩৭ টাকা এবং আগের বকেয়া এক কোটি ৭৩ লাখ ১৫ হাজার ৮৯৫ টাকা। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে চলতি অর্থবছরের বকেয়া ৪৯ হাজার,৮৬০ টাকা এবং এই প্রতিষ্ঠানের কাছে আগের বকেয়া রয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪৪৩ টাকা। সরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজগুলোর কাছে চলতি অর্থবছরের ভূমি উন্নয়ন করের বকেয়া ৩৩ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬৯ টাকা এবং আগের বকেয়া রয়েছে ২৬ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৩ টাকা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চলতি বছরের ভূমি উন্নয়ন করের বকেয়া এক কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬৭ টাকা এবং আগের বকেয়া তিন কোটি ৬৪ লাখ ৩৩ হাজার ২৭২ টাকা। একইভাবে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন সব প্রতিষ্ঠান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনের রাজউক, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং আবাসন অধিপ্তরের কয়েক কোটি টাকার ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া রয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের, বাংলাদেশ জরিপ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর, মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থা, সেনানিবাসগুলো, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর প্রশিক্ষণ একাডেমি, সামরিক ভূসম্পত্তি প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছেও ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া রয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন পাঁচটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ে অধীন পাঁচটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন তিনটি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন ১০টি প্রতিষ্ঠানের ভূমি উন্নয়ন করের কোটি কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন দুইটি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ তিনটি, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন চারটি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন চারটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন আটটি, ডাক টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন তিনটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে কয়েক কোটি টাকার ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া রয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন চরটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন তিনটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দুইটি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন পাঁচটি, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন তিনটি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন দুইটি প্রতিষ্ঠানের কাছেও কর বকেয়া রয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন তিনটি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাতটি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন দুটি, শ্রম ও কর্মস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন তিনটি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভূমি উন্নয়ন করের টাকা বকেয়া। এছাড়া মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি প্রতিষ্ঠান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া।