নেতাদের জন্য টকশো নীতিমালা করছে বিএনপি

প্রকাশিতঃ মে ২২, ২০২৪ | ৭:৫৭ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরালো করতে নতুন করে রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণ করছে বিএনপি। এজন্য নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর দাবি আদায়ের আন্দোলনে আবারও জনগণকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি নেতাকর্মীকে চাঙা করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে এবার তরুণদের টার্গেট করে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের দল, জোট ও সমমনাদের সঙ্গেও প্রথম দফার বৈঠক শেষ করেছে। এখন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে দফায় দফায় করছে বৈঠক। রাজপথের পাশাপাশি অন্যান্য মাধ্যমও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নেওয়া দলীয় নেতা ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সতর্ক হওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। টকশোতে দলের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে একটি গাইডলাইনও তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সব দলের অংশগ্রহণে শিগগিরই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দাবির পক্ষে সরকারের ওপর ‘দেশি-বিদেশি চাপ’ তৈরিতে কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সোমবার জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া করণীয় ঠিক করতে সমমনাদের সঙ্গে টানা পাঁচ দিন ধারাবাহিক বৈঠক করেছে বিএনপি। মঙ্গলবারও সমমনা রাজনৈতিক দলের কয়েক শীর্ষ নেতার সঙ্গে দলের মহাসচিব বৈঠক করেন। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক অনানুষ্ঠানিক ছিল। সূত্র জানায়, সম্প্রতি তরুণদের নিয়ে একটি জরিপ করেছে বিএনপি। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে দেশের রাজনীতি, প্রতিবেশী দেশ নিয়ে তাদের ভাবনাসহ বেশ কিছু প্রশ্ন ছিল এই জরিপে। তাতে বর্তমান পরিস্থিতিতে তরুণরা রাজনীতিবিমুখ হচ্ছে-এমনটা উঠে এসেছে। এই জরিপকে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও ছাত্রদলকে রাজনীতির পাশাপাশি আন্দোলনে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে জেলা সফরের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ছাত্রদল ইতোমধ্যে জেলা সফর শুরু করেছে, বাকি তিন সংগঠনও কয়েকদিনের মধ্যে সফর শুরু করবে। টেলিভিশনে টকশো করেন-এমন নেতাদেরও সাত জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনসহ বিএনপির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে গঠনমূলক আলোচনার পাশাপাশি বেশকিছু কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে সোমবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে টকশোতে যাওয়া দলীয় নেতা ও পেশাজীবীদের নিয়ে বৈঠক করে বিএনপি মিডিয়া সেল। সেখানে স্কাইপিতে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন-পরবর্তী অনেক বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে টকশোর বিষয়টিও ছিল। জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরে তিনটি টেলিভিশনের আচরণ তাদের কাছে পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে হয়েছে। তাই সেখানে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। টেলিভিশনের টকশোতে দলের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে একটি গাইডলাইন তৈরির কথা হয়েছে। বিভিন্ন টকশোতে যারা দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, তারা কতটা উপযুক্ত, তাদের প্রস্তুতি কেমন, কাদের সঙ্গে যাচ্ছেন, তারা তথ্যনির্ভর কথা বলছেন কিনা-সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেকে আছেন সাবেক নেতা বা বিএনপির নেতা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু তারা আসলে হয়তো এখন আর বিএনপিকে প্রতিনিধিত্ব করেন না। কিছু টেলিভিশন আছে, যেগুলোর লক্ষ্য থাকে বিএনপিকে উদ্দেশ্যমূলক সমালোচনা করা। সেসব ক্ষেত্রে বিএনপির যে নেতা ওখানে যান, তার বা তাদের আরও সতর্ক, গঠনমূলক এবং তথ্যনির্ভর বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনে অনিয়মের নানা তথ্য সেখানে যথাযথভাবে তুলে ধরা এবং বিএনপি সব সিদ্ধান্তই সঠিক আছে-এসব বিষয়ে নেতাদের গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বৈঠকে কমপক্ষে ৩৫ নেতা ও পেশাজীবীর কাছ থেকেই বেশি পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘গণমাধ্যম সরকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং কঠিন একটি নজরদারির মধ্যে আছে। দেশের প্রকৃত চিত্র গণমাধ্যমে অনেক সময় প্রতিফলিত হয় না। এ কারণে আমরা যারা টকশোতে যাই, আমাদের দেশের প্রকৃত চিত্র, বিশেষ করে গণতন্ত্র, নির্বাচন, সার্বভৌমত্ব, জনগণের জীবন-জীবিকা, অর্থনৈতিক সংকট-এগুলোর প্রকৃত তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জনগণ যেন আমাদের মাধ্যমে সত্যটা জানতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে যে বর্তমানে রাজনৈতিক সংকট চলছে, অস্থিরতা চলছে, এখানে কী করণীয়, কীভাবে সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারি-এ নিয়ে আমাদের কাছ থেকে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। আমাদের কী করণীয় এবং হাইকমান্ডের কী করণীয়-দুটোই জানতে চাওয়া হয়েছে। দুটি নিয়ে মিডিয়া সেলের মাধ্যমে আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আবার বসব।’ বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘কিছু বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করছি। এখন তারুণ্যের জাগরণ ছাড়া তো এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা কঠিন। তারুণ্যের জাগরণ প্রয়োজন। তাই ছাত্র-যুবক-তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করছি। একই সঙ্গে যারা টকশোতে যান তাদের কিছু অভিমত নিয়েছি, আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হলে কি অগ্রাধিকার দেব। সেখানে তরুণ-যুবক ও ছাত্রদের কথা উঠে এসেছে। তরুণরা ছাত্র হতে পারে, যুবক হতে পারে, শ্রমিক-কৃষক হতে পারে। এসব নিয়ে তাদের কাছ থেকে কিছু পরাপর্শ নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কীভাবে টকশোতে কথা বলব, কী গাইডলাইন-সেসব আলোচনায় উঠে এসেছে। ওনাদের পরামর্শগুলো নিয়েছি, শিগগিরই আবারও বসব। আমাদের টকশো গ্রুপ আছে, অনলাইন অ্যাক্টেভিস্ট গ্রুপ আছে, ইউটিউব, এক্স হ্যান্ডেল আছে। তাতে করে আমরা আমাদের পেশাজীবীদের সঙ্গেও শেয়ার করি। তাদেরও একটা গ্রুপ আছে। তাদের পরামর্শও নিচ্ছি। আন্দোলন চলমান আছে। সামনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে হলে আরও কিছু কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। কুরবানির ঈদের পর গোলটেবিল সভা করব। সেখান থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেব।’ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে। দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা, সরকারের দুর্নীতি, নির্বাচনে অনিয়ম, মানুষের নিরাপত্তাহীনতা, নতুন প্রজন্মের যারা চাকরি পাচ্ছেন না তাদের মাঝে হতাশা কাজ করছে-সবকিছু নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমরা যারা টকশোতে যাই, সেখানে দেশ ও জনগণের স্বার্থে সব তথ্য তুলে ধরতে হবে।