কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে না

প্রকাশিতঃ মে ২২, ২০২৪ | ৮:০৫ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাই-টেক পার্কে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ আর থাকছে না। আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে ব্যক্তি খাতে কালোটাকা প্রদর্শনের সুযোগ পুনরায় দেওয়া হচ্ছে। নতুন নিয়মে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে কালোটাকা সাদা করা যাবে। দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কালোটাকা অর্থনীতির মূলধারায় আনতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাই-টেক পার্কে বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে পণ্য বা সেবা উৎপাদনজনিত উদ্ভূত আয়কে ১০ বছরের জন্য বিভিন্ন হারে কর অব্যাহতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে শিল্প স্থাপনে অপ্রদর্শিত আয় থেকে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিলে ওই বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে না। এরপর কয়েক দফা অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাই-টেক পার্কে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছরে এ সুযোগ কেউ গ্রহণ করেনি। চলতি অর্থবছরের ৩০ জুন এ সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের অংশ হিসাবে নতুন করে অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাই-টেক পার্কে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হচ্ছে না। ৪ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় অর্থসচিব, বাণিজ্য সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর উপস্থিত ছিলেন। সভায় এনবিআর চেয়রাম্যান জানান, সরকার ইকোনমিক জোনের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে, যা একদিকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকার যে কর অব্যাহতি দিয়ে থাকে, তা খুব একটা ফলপ্রসূ হচ্ছে বলে মনে হয় না। সুতরাং বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে বলে মত দেন তিনি। এর পরিবর্তে সাধারণ ক্ষমার (ট্যাক্স অ্যামনেস্টি) আওতায় কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য এজন্য আগের চেয়ে বেশি আয়কর দিতে হবে। আগে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করা যেত, আগামী দিনে ১৫ শতাংশ হবে। এ পদ্ধতিতে টাকা বৈধ করলে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না। প্রসঙ্গত, বিদ্যমান আয়কর আইনে তিন পদ্ধতিতে বিশেষ কর প্রদানের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রদর্শনের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রথমত, এলাকাভেদে বর্গমিটারপ্রতি নির্দিষ্ট হারে আয়কর দিয়ে রিটার্নে ফ্ল্যাট প্রদর্শনের সুযোগ আছে। দ্বিতীয়ত, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে যে কোনো খাতে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তৃতীয়ত, ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাই-টেক পার্কে বিনা প্রশ্নে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ। সূত্রগুলো জানিয়েছে, অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় আনতে আগামী বাজেটে পুরোনো আয়কর আইনের ১৯এএএএএ ধারা বর্তমান আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পুরোনো আইনে ধারাটি ২০২০-২১ অর্থবছরে যুক্ত হয়। তখন ১২ হাজারের বেশি করদাতা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কালোটাকা সাদা করেন। পরবর্তী সময়ে কঠিন শর্তারোপ করায় তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ, সঞ্চয়পত্র, সরকারি সিকিউরিটিজ, ব্যাংক আমানত প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বর্গমিটারপ্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে ফ্ল্যাট প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তখন ১১ হাজার ৮৫৯ জন করদাতা কালোটাকা সাদা করেন। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন ২৮৬ জন, জমিতে ১ হাজার ৬৪৫ জন, ফ্ল্যাটে ২ হাজার ৮৭৩ জন এবং নগদ অর্থ প্রদর্শন করেছেন ৭ হাজার ৫৫ জন। নানা সমালোচনার মুখে এর পরের বছর (২০২১-২২ অর্থবছর) কালোটাকা সাদা করার বিধান রাখা হলেও করহার বাড়িয়ে কঠিন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। নগদ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, এফডিআর প্রদর্শনে পরিশোধযোগ্য করের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ কর (মোট ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ) পরিশোধের মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি প্রদর্শনের সুযোগ রাখা হয়। এতে সাড়া না পাওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। মূলত কালোটাকাকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে এ উদ্যোগ থাকছে। এক্ষেত্রে আগের মতোই অ্যামনেস্টি সুবিধা থাকছে। অর্থাৎ সরকারের অন্য কোনো সংস্থা এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না।