ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বাগেরহাটে সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে। সেখানে নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় ৫ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ৫ শতাধিক বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, রাত ৮টা পর্যন্ত ৭০ হাজার মানুষ ও ৩ হাজার গবাদি পশু আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তবে অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর প্লাবিত জানা গেছে, ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা উপজেলার রাজৈর এলাকার স্লুইসগেট নির্মাণের জন্য দেওয়া বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া এই উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের তেরাবেকা এলাকায় রিংবেরি বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এতে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি, বাগেরহাট সদর উপজেলার ভৈরব, মোংলার পশুর নদীর পানি বিভিন্ন স্থানে বেরিবাঁধ ও সড়ক উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশে করেছে। এছাড়া প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণি প্রজনন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকা। সুন্দরবনের বন্যপ্রাণির প্রাণহানির শঙ্কা বন বিভাগ বলছে, ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট উঁচু জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসের কারণে সুন্দরবনের হরিণ, বানর, রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির প্রাণহাণির আশঙ্কা রয়েছে। মিঠাপানির পুকুর তলিয়ে যাওয়ার কারণে বনের প্রাণিকুল ও বনকর্মীদের বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট তৈরি হতে পারে। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সুন্দরবনের বিস্তৃর্ণ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে পানির অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছে। রোববারের দুপুরের জোয়ারের পানি সুন্দরবনের সব নদ- নদীতে কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। কোথাও কোথাও পানির উচ্চতা ছিল পাঁচ থেকে আট ফুট পর্যন্ত। সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকাই এ সময় তলিয়ে যায়। বন্যপ্রাণির প্রাণহানির শঙ্কা জানিয়ে তিনি বলেন, রাতে উঁচু জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস হলে পুরো বন আবারও প্লাবিত হবে। দুর্যোগ চলে যাওয়ার পর প্রাণিকূলসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত বলতে হবে। রাতের জোয়ারের পানির চাপ আরও বাড়লে বনপ্রাণীর জন্য বড় ক্ষতির ভয় দেখছে বন বিভাগ। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাগেরহাটের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি রোববার দুপুরে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সবচেয়ে বেশি পানি বেড়েছে জেলার মোংলা উপজেলার পশুর নদে। মোংলা বন্দরের এই নদে দুপুরে বিপৎসীমার ৫ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। আর বলেশ্বর ও ভৈরব নদে বিপৎসীমার দুই থেকে তিন ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।