ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সোমবার ভোররাত থেকে রাজধানীতে ঝড়ো হাওয়াসহ প্রবল বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। সকাল থেকে বৃষ্টির মাত্রা বাড়তে শুরু করে। রাত অবধি বিরতিহীনভাবে চলতে থাকে বৃষ্টি। সঙ্গে দমকা হওয়া। তুমুল বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কর্মজীবী মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও খেটে খাওয়া মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হয়েই পড়েন বিপাকে। দিনভর ছিল অন্তহীন দুর্ভোগ-ভোগান্তি। সড়কে গাড়ির সংখ্যাও কমে যায়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে রিকশা-অটোরিকশা বা গণপরিবহণের সাক্ষাৎ মেলে। ফলে পরিবহণ সংকটে মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। যানবাহনের তীব্র সংকটের সুযোগে সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও রিকশার ভাড়া হয়ে যায় দ্বিগুণ, কোথাও তিনগুণ। যারা দিনের বেলা বাইরে এক-দুবেলা খাবার খান, তারাও পড়েন বিপাকে। অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট পানির নিচে চলে যায়। যেখানে খোলা ছিল, তাতে একদিকে যেমন ভিড় লেগে ছিল, তেমনি দামও নিয়েছে অন্যদিনের চেয়ে বেশি। কাঁচাবাজারেও জিনিসপত্রের দাম বেশি রাখার খবর পাওয়া গেছে। অবিরাম বৃষ্টিতে রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশাল, সিদ্দিকবাজার, সিক্কাটুলি লেন, আগামাছি লেন, নাজিরাবাজার, দয়াগঞ্জ, মিরহাজিরবাগ, নবীনগর, কমলাপুর টিটিপাড়া, গোপীবাগ, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সামনের সড়ক, আব্দুল গনি রোড ও সচিবালয়ের সামনের সড়ক, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ নিচু এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়া মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের বনানী অংশ, কুড়িল এলাকায় সড়কে জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করে। বৃষ্টির কারণে অনেক সড়ক অচলও হয়ে পড়ে। মিরপুরে জলাবদ্ধতার সঙ্গে ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমে যায়। পরে উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মীরা তা নিরসনে কাজ করেন। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ধানমন্ডির ২৭ নম্বর, গ্রিনরোড, নিউমার্কেট, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে মিরপুর-১৪ নম্বর যাওয়ার রাস্তাসহ পুরান ঢাকার বেশ কিছু নিচু এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এছাড়া বৃষ্টিতে নিউমার্কেট, কাওরান বাজার এলাকার আশপাশসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ সময় এসব সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসের কারণে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় গাছও ভেঙে পড়েছে। মিরপুর পাইকপাড়া এলাকায় সরকারি ডি-টাইপ কোয়ার্টার এলাকায় বড় আকারের একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ ঝড়ে ভেঙে গেছে। এছাড়া মিরপুর, উত্তরা, কুর্মিটোলা, বারিধারা ও মোহাম্মদপুরে গাছ উপড়ে পড়া এবং কিছু জায়গায় গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। উপড়ে যাওয়া এবং গাছের ডাল ভেঙে পড়া অংশ অপসারণে কাজ শুরু করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয় ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। এদিকে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকার দুই সিট করপোরেশন ভোর থেকে তৎপরতা দেখিয়েছে। হটলাইন নম্বর শেয়ার করে নগরবাসীকে কোথাও পানি জমে থাকলে তা জানানোর অনুরোধ করেন। পাশাপাশি মাঠে নেমে পড়ে ‘কুইক রিসপন্স টিমে’র সদস্যরা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র মকবুল হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বিরতিহীন বৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি পানি নিষ্কাশন স্বাভাবিক রাখতে তৎপরতা চালাচ্ছে। তবে কোথাও পানি জমে থাকলে হটলাইন নম্বর ১৬১০৬ নম্বরে কল কলার অনুরোধ জানান। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও সংস্থার মুখপাত্র মো. আবু নাছের জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। তা নিরসনে দক্ষিণ সিটির ৯১টি দল কাজ করছে। জলাবদ্ধতা হয়েছে অথচ সিটি করপোরেশন কাজ করছেন না, এমন কোনো খবর থাকলে ০১৭০৯৯০০৮৮৮ নম্বরে ফোন করে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।