বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনর (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কিছু কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (চতুর্থ গ্রেড) ও সমপর্যায়ের পদে পদোন্নতি দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার এই পদোন্নতি বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত দ্রুত অনুমোদনের জন্য একদিনের ব্যবধানে আজ শনিবার সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়েছে। এর আগে কয়েকবার বাছাই বোর্ডের আয়োজন করলেও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞায় ভিসি সফল হতে পারেননি। তাই এবারে নতুন কৌশলে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমর্যাদার কিছু পদে পদোন্নতি দিতে শুক্রবার বাছাই বোর্ডের আয়োজন করা হয়। গোপনীয়তার মধ্যে এই আয়োজনে প্রার্থীদের মোবাইলে কল করে বোর্ডে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বাছাই বোর্ডে উপস্থিত হতে ডাক পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একাধিক প্রার্থী। এ বিষয়ে কোনো নোটিশ বা পত্র মাধ্যমে জানানো হয়নি। এমনকি তাদের কোনো ই-মেইল মাধ্যমে ডাকা হয়নি। কঠোর গোপনীয়তা রাখার জন্য শুধু প্রার্থীদের গোপনে মোবাইলে ডাকা হয়। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমর্যাদার চতুর্থ গ্রেডের পদসমূহে কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দিতে হবে। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অর্থ ও হিসাব এবং লাইব্রেরি এই চার দপ্তরে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদ থাকবে। এই পদসমূহে ইউজিসি’র অনুমোদন সাপেক্ষে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে, পদোন্নতি/আপগ্রেডেশন/পর্যায়োন্নয়ন দেওয়া যাবে না। ইউজিসির এই নির্দেশনা অমান্য করে বেরোবির ভিসি অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমানের পদে পদোন্নতির জন্য ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রথম বার কর্মকর্তাদের চতুর্থ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য বাছাই বোর্ডের আয়োজন করেছিলেন। বিষয়টি ইউজিসির নজরে এলে ১১ ডিসেম্বর পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় এবং দুই কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা তলব করেছিল ইউজিসি। এরপর ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর আবার একই পদে আপগ্রেডেশনের জন্য বাছাই বোর্ডের সভা আহ্বান করা হলে কমিশন আবারও ১০ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দুই কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে বলে। ফলে দ্বিতীয় দফায় বোর্ডের কার্যক্রম ভেস্তে যায়। একটি সূত্র জানিয়েছে, একজন শিক্ষক নেতার স্ত্রী, জুনিয়র এক কর্মকর্তা এবং জনসংযোগ দপ্তরে কর্মরত এক কর্মকর্তাসহ উপাচার্যের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তার চতুর্থ গ্রেডে আপগ্রেডেশন দিতেই মূলত মরিয়া হয়ে উঠেছেন উপাচার্য। এভাবে আপগ্রেডেশন দেওয়া হলে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা বঞ্চিত হবেন এবং তারা চাকরির সিনিয়রিটি হারাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখার উপরেজিস্ট্রার শামিমা সুলতানা বাছাই বোর্ড আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বাছাই বোর্ডে উপাচার্যের সভাপতিত্বে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. মজিব উদ্দিন আহমেদ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার উপস্থিত ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী কোনো উচ্চ গ্রেডে পদোন্নতির বোর্ডে যাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে তার উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তার সমন্বয়ে বোর্ড গঠিত হবে- এ ক্ষেত্রে তাও মানা হয়নি। উপাচার্য প্রফেসর হাসিবুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ইউজিসিরি সচিব ড. ফেরদৌস জামান জানিয়েছেন, এটি গুরুতর অনিয়ম এবং অবৈধ। এভাবে পদোন্নতির কোনো বিধান নেই। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ্যে নিয়োগ দিতে হবে। যারা এই অপকর্ম করছেন তাদের অতীতের অনেকের মতো শাস্তির আওতায় আসতে হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমরা দুদিন আগেও বেরোবির ভিসিকে এই অবৈধ পন্থা বন্ধে চিঠি দিয়েছি। তবুও তা মানা হয়নি। এ জন্য ইউজিসি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।