বস্তি থেকে বিশ্বকাপে!

প্রকাশিতঃ জুন ৩, ২০২৪ | ৮:১০ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

যে দেশকে নিয়ে একটা সময় ট্রল করা হত, যে দেশের রাজধানীরই ৬০ শতাংশ মানুষের বাস বস্তিতে, সেই দেশটিই এখন নতুন করে আলোচনায়। শুধু আলোচনায় বললে ভুল হবে, বরং ইতিবাচক আলোচনায় যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। বলছি আফ্রিকার উগান্ডার কথা। তবে এবার দেশটি আলোচনায় তাদের ক্রিকেট নিয়ে! যে দেশের মানুষ কয়েক বছর আগেও খেলা বলতে শুধুই ফুটবল বুঝতেন, সেই দেশের মানুষ এখন টিভির পর্দায় ভিড় করেন তাদের নতুন তারকা জুমা মিয়াগিকে দেখতে। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে নামবে আফ্রিকার এই দেশটি। সেখানে দলের বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেবেন এই মিয়াগি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে- ক্রিকেট জায়গা করে নিল কীভাবে এই ফুটবল পাগল দেশটিতে? এর প্রধান কারণ হলো- অর্থ বা টাকা।! ক্রিকেট খেললে রোজগার বেশি। উগান্ডায় আগে ক্রিকেটের চল না থাকলেও আফ্রিকার অপর দুই দেশ কেনিয়া, জিম্বাবুয়ের মতো দেশে তো ছিলই। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে আফ্রিকার এই দেশে ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেট। দু’বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও খেলে ফেলে উগান্ডা। সেই দলেই ছিলেন রাজধানী কামপালার এক বস্তিতে জন্ম নেওয়া মিয়াগি। ২১টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ৩৪ উইকেট নিয়েছেন মিয়াগি। তার সতীর্থ সিমন সেসাজি, ইনোসেন্ট মেওয়েবাজেরাও উঠে এসেছেন বস্তি থেকেই। তারা মূলত এমন একটা জায়গায় বসবাস করেন, যেখানে সুপেয় পানি, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো মৌলিক বিষয়গুলোই ঠিকমতো পাওয়া যায় না। কিন্তু হাল ছাড়েননি তারা। ক্রিকেট খেলে যে অর্থ পেতেন, তা দিয়েই নিজ নিজ এলাকার উন্নতি করার চেষ্টা করেন তারা। ক্রিকেটারদের এই লড়াইটা কাছ থেকে দেখেছেন দলের প্রধান কোচ অভয় শর্মা। বিশ্বকাপের আগেভাগেই দায়িত্ব নেন এই ভারতীয়। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা অভয় শর্মা জানেন বস্তির জীবনটা আসলে কেমন। কারণ, এশিয়ার সবচেয়ে বড় বস্তি মুম্বাইয়ের ধারাভিকেই যে খুব কাছ থেকে দেখা আছে তার। বিশ্বের যে দেশই হোক না কেন, বস্তি থেকে রাজপথে উঠে আসার গল্পটা তাই অনেকটা একইরকম। তেমনি বিশ্বকাপে খেলা মিয়াগিদের কাছে আছে জবাব দেওয়ার লড়াই। আছে নিজ নিজ এলাকাকে, এলাকার মানুষকে বিশ্ব মানচিত্রে তুলে ধরার লড়াই। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উগান্ডার কোচ অভয় শর্মা বলেন, দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারই উঠে এসেছে নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। আমি দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে অবশ্য জানতাম না ওরা কোন পরিবেশে বড় হয়েছে। যেখানে বেঁচে থাকার জন্যই লড়াই করতে হয়, সেখানে কিনা ক্রিকেট খেলেছে ওরা! কোচকে ওরা সম্মানও দিতে জানে। ওরা জানে, বিশ্বকাপে একটু ভালো খেলতে পারলে গোটা বিশ্বের নজরে পড়বে। ফুটবল পাগল উগান্ডায় ক্রিকেট এখনও সেভাবে পেশাদার নয়। তাই জীবিকা নির্বাহের জন্য খেলার পাশাপাশি অন্যান্য কাজও জুটিয়ে নিতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। তবে সবাই যে অন্য কোনো কাজ করেন, তা-ও কিন্তু নয়। তবে আমেরিকা, কানাডা বা ওমান ক্রিকেট দলের মতো অন্য দেশের নাগরিক দিয়ে নয়, শতভাগ নিজ দেশের ক্রিকেটারদের নিয়েই গঠিত হয়েছে উগান্ডা ক্রিকেট দল। ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার অভয় শর্মার হাত ধরেই এখন ক্রিকেটে পরিচিতি চাইছে উগান্ডা। তাদের এই কোচও তাই চান না, কেনিয়ার মতো অবস্থা হোক তাদের। সেই কারণেই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগোতে চাইছেন অভয়। এই ভারতীয় কোচ বলেন, ২০১১ সালের আগে ক্রিকেটে এক পরিচিত নাম ছিল কেনিয়া। কিন্তু তার পরেই ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল তারা। আমি চাই না উগান্ডার সঙ্গেও সেটা হোক। তাই অনূর্ধ্ব-১৬ স্তরে আরও উন্নতি দরকার। এখন অনূর্ধ্ব-১৯ স্তরে আমরা ভালো করছি। কিন্তু আরও অল্প বয়স থেকে ক্রিকেটার তুলে আনতে হবে। ওদের ভিত মজবুত করতে হবে। তাহলেই দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকতে পারবে ওরা। বেশ গরিব দেশ হলেও এখন পর্যন্ত যতটুকু সম্বল আছে তা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাইছেন অভয়। তিনি বলেন, আমাদের সাধারণ কিছু বিষয়ে আগে জোর দিতে হবে। যেমন- ভালো অনুশীলনের মাঠ থাকতে হবে। কুকাবোরা বলে খেলতে হবে। ঠিক মতো ডায়েট মেনে চলতে হবে। মিয়াগির বয়স মাত্র ২১ বছর, আর এই বয়সেই সে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারে। ঠিকমতো তৈরি করতে পারলে সে আরও ভয়ঙ্কর বোলার হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোরেই (সাড়ে ৬টা) বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে উগান্ডা। প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। কয়েক বছর আগে রশিদ-নবিদের আফগানিস্তানও এই উগান্ডার মতোই ক্রিকেটের মঞ্চে নিজেদের পরিচিত করার জন্য লড়াই করছিল। সেই লড়াইয়ে তারা এখন বিজেতা। সেই আফগানদের বিপক্ষেই এবার আরও একটা দেশের লড়াই শুরু হতে চলেছে। এবার সেটা করবে আফ্রিকার গরিব দেশ উগান্ডা!