বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে

প্রকাশিতঃ জুন ৬, ২০২৪ | ৫:৩১ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ভারতে নির্বাচনের পর নতুন সরকারের আমলেও ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সম্পর্কে তেমন কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। এবার ভোটে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে ভারতে একটি জোট সরকার গঠনের তোড়জোড় চলছে। শনিবার নতুন সরকার শপথ নিতে যাচ্ছে। এনডিএ জোটে ভাঙন ধরাতে না পারলে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করবে। এদিকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠানো এক বার্তায় ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোটের বিজয়ে এ অভিনন্দন জানান তিনি। শেখ হাসিনার অভিনন্দনের তাৎক্ষণিক জবাবও দিয়েছেন মোদি। এক্সে দেওয়া এক বার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার আন্তরিক শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ জানাই। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে, যা গত এক দশকে অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি আমাদের জনকেন্দ্রিক অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ। ভারতে সাধারণত পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে একটা সমঝোতা থাকে। ফলে সরকার পরিবর্তন হলেও পররাষ্ট্রনীতিতে বড় পরিবর্তন হয় না। ফলে এবারও পরিবর্তিত বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য পররাষ্ট্রনীতিকে যতটুকু পরিবর্তন করা প্রয়োজন ততটুকুই পরিবর্তন হবে। মোদির ‘প্রতিবেশীবান্ধব’ নীতিতে তেমন পরিবর্তন হবে না বলেই বিশ্লেষকরা বলছেন। ২০২১ সালে গ্যালভান সীমান্তে চীনের সঙ্গে ভারতের সংঘর্ষের পর দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। অরুণাচলকে চীন মানচিত্রে নিজেদের অংশ বলে উল্লেখ করেছে। ফলে ভারতও তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের প্রতি নজর রাখছে। বিশেষ করে মালদ্বীপে চীনপন্থি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের প্রতি ভারতের দৃষ্টি বেড়েছে। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সহযোগিতা বরাবরই ভারতের কাছে স্পর্শকাতর। বিশ্লেষকরা বলছেন, জোটের আঞ্চলিক শরিকদের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নাইডু এবং বিহারের নীতিশ কুমারের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বেশি থাকবে। তবে দলগুলো পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাবে না বলেও মনে করা হচ্ছে। অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশেও নাইডু মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তখন কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোট ছিল। নাইডু কিংবা নীতীশ কুমারের বিশেষ আগ্রহ থাকবে নিজেদের রাজ্যে বেশি বরাদ্দ পাওয়া এবং তাদের দল থেকে মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার প্রতি। বিজেপি সংখ্যালঘূ মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিকপঞ্জি নিয়ে খুব বেশি দূর অগ্রসর হয়নি। যদিও বিজেপির এসব বিষয় নিয়ে ভিন্ন আদর্শের নাইডু কিংবা নীতীশের দল খুব বেশি উচ্চবাচ্য করেনি। আঞ্চলিক রাজ্যের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকে। জ্যোতিবসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তার সহযোগিতায় গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি হয়েছিল। তখন বিজেপি কিংবা কংগ্রেসের বাইরের দেবগৌড়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কংগ্রেস কিংবা বিজেপির আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ধরন প্রায় একই থাকে। ফলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীনা সিক্রি বুধবার বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন হবে না। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সব সময়েই একটি দ্বিদলীয় সমর্থনপুষ্ট নীতি। এই সমঝোতা পার্লামেন্টের বাইরেও আছে। আগামীতেও বিজেপির নেতৃত্বাধীন শক্তিশালী সরকার হবে। মোদির প্রতিবেশীবান্ধব নীতি বহাল থাকবে। ভারতে নির্বাচনে যত মানুষ ভোট দিয়েছে সেটা গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। ভারত একটা বিরাট গণতান্ত্রিক দেশ। রাজনীতিতে আপস অ্যান্ড ডাউন থাকে। নির্বাচন হয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু। ইভিএম নিয়ে কথা উঠেছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, ইভিএম ব্যবহার করে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের মধ্যেও ভারতে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে আসছেন। ভারতের জনগণ তাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। বাংলাদেশে ভারতের আরেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, ফরেন পলিসিতে বড় বেশি পরিবর্তন হবে না। সরকার বদল হোক বা না হোক, সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। বৈশ্বিক নীতির পরিবর্তনের সঙ্গে কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হতে পারে। পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করা হয় জাতীয় স্বার্থে। সরকার বদল হলেও জাতীয় স্বার্থ একই থাকে। পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো আদর্শিক ফ্যাক্টর নেই। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, মোদিই প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। বিজেপিই প্রধান দল। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক যা ছিল তার কোনো হেরফের হবে না। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় নতুন জোট সরকারকে বিজেপির নীতি নিয়ে জোটে বেশি আলোচনা করতে হবে। ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংস্কারে চ্যালেঞ্জ হতে পারে; কিন্তু পররাষ্ট্রনীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। সাবেক রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে। দুপক্ষের নেতারা বলছেন, এটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়। এই সম্পর্ক আরও ভালো করার সুযোগ থাকলে সেটাও হবে। মোদির পার্টি যে পরিমাণ আসন পেয়েছে তাতে তার আশপাশেও কোনো দল নেই। ফলে সম্পর্কের পরিবর্তন হওয়ার কোনো আভাস নেই।