সিলেট নগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে ২০০০ কোটি টাকা পানিতে

প্রকাশিতঃ জুন ৮, ২০২৪ | ৮:০৩ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সিলেট নগরীকে বন্যামুক্ত করতে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা-খাল-ছড়া সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রকল্পে এ পর্যন্ত দুই সহস্রাধিক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অথচ লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এছাড়া নদী খননের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের এক নোটিশেই বন্ধ হয়ে যায় কাজ। এসব প্রকল্পে বরাদ্দের লক্ষ্য একটাই-সুরমা তীরবর্তী সিলেট নগরীকে জলাবদ্ধতা ও বন্যামুক্ত রাখা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অল্প বৃষ্টিতেই দফায় দফায় দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা, বন্যায় ডুবছে শহর। ফলে পুরো বরাদ্দের টাকাই গেছে জলে। এসব উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সাবেক-বর্তমান তিন মেয়রই সম্পৃক্ত ছিলেন। এরশাদ সরকারের আমলে সুরমা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে জলাশয় ভরাট করে গড়ে উঠেছিল উপশহর। এরপর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এবার সুরমা নদীর খনন কাজ শুরু হয়েছিল। উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তবে কেউ বলছেন, নদী খননে সমস্যা, বিলম্ব ও কাজ বন্ধ এসব অজুহাত মাত্র। এসব মেনে নেওয়ার মতো নয়। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সুরমার ১৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটার খনন সম্পন্ন হওয়ার পথে। জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল সেই কাজ। তবে হলো না। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক নোটিশের পর সিলেট সিটি করপোরেশন সেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আর সুরমার পানিও বেড়ে গেছে। তবে শিগগিরই বিভাগীয় কমিশনার অফিসের নির্ধারিত একটি স্থানে খননের বালু ফেলার শর্তে খনন কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি। পাউবো জানায়, সিলেট নগরীর কুশিঘাট থেকে লামাকাজি সেতু পর্যন্ত প্রথম দফায় প্রায় ১৮ কিলোমিটার নদী খনন করার কথা। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। নদী খনন করছে ঢাকার গুডম্যান এবং কনফিডেন্স নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই খনন কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চলে এখনও জলাবদ্ধতা ও বন্যার পানি রয়ে গেছে। বেশকিছু এলাকা থেকে পানি নামলেও দুর্ভোগ চরমে। এর আগে ২০২২ সালে ১৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছিল সিলেটে। এরপরই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সুরমা নদী খননে উদ্যোগী হন। এরই প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের চাঁনপুর এলাকায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরমা নদী খনন কাজের উদ্বোধন করেন আব্দুল মোমেন। সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল করিম কিম বলেন, বর্ষার আগেই সুরমার খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা। অথচ মেয়াদের শেষেও কাজ শেষ হয়নি। যা হচ্ছে তা রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় বলা যায়। তিনি সুরমা-কুশিয়ারাসহ প্রধান তিন নদী খননের দাবি জানান। নদী খনন কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্সের অপারেশন ম্যানেজার আজিম উদ্দিনের মতে, প্লাস্টিক বর্জ্যরে ধকল সামলে কাজ চলছিল, এখন বন্ধ। কাজ বন্ধের পেছনে পরিবেশ অধিদপ্তরও রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদার দাবি, উত্তোলিত বালু সরকারি সম্পদ। আর সেই বালু ফেলে তারা একটি জলাশয়ও ভরাট করে ফেলছে। সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতাই ছিল প্রধান সমস্যা। এর ওপর এখন দেখা দিচ্ছে বন্যাও। প্রয়াত মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, প্রয়াত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তারাও চেষ্টা করেছেন জলাবদ্ধতা নিরসনের। বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও এ নিয়ে পেরেশান। কিন্তু জলাবদ্ধতা ও বন্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। সিলেট সিটি করপোরেশন জানায়, ২০১৩ সালে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ওই বছরই জলাবদ্ধতা নিরসনে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এরপর ২০১৪ সালে ৭৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ২০১৫ সালে আরও ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। আর ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি বরাদ্দে ২৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। এছাড়া ২০১৯ সালে ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ আসে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যয় করা হয় ২৬৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৯৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। প্রকল্পটির আওতায় অন্যান্য কাজের সঙ্গে ৩২৭ কিলোমিটার ড্রেন ও ৮ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়। দুই সহস্রাধিক কোটি টাকা ব্যয়ের পরও সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও বন্যার অবসান ঘটেনি।