কয়লা সরবরাহের কার্যাদেশ: দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশিতঃ জুন ১১, ২০২৪ | ৭:৫৬ পূর্বাহ্ন
মোঃ রাছেল রানা, প্রধান সম্পাদক

পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারি ক্রয় আইন লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন কারসাজির বিষয়টি বহুল আলোচিত। মহেশখালীতে অবস্থিত মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের কার্যাদেশ নিয়ে শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) বিরুদ্ধে অভিযোগ-দরপত্র প্রক্রিয়ায় বাতিল হওয়া একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে চলছে নানা তৎপরতা। সম্প্রতি দরপত্র প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছে দরপত্রে অংশ নেওয়া একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম। এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ এ ঘটনায় দ্রুত দরপত্র মূল্যায়নে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট মতামত দিতে সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়েছে। জানা যায়, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি দরপত্রে অংশ নেওয়া চারটি কনসোর্টিয়ামের আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন না করেই সবকটি প্রতিষ্ঠানকে রহস্যজনকভাবে বাতিল ঘোষণা করে। অভিযোগ উঠেছে, বাতিলকৃত একটি আর্থিক প্রস্তাবকে কৌশলে পুনর্বহাল করার জন্য সংস্থার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্য কাজ করছেন। শুধু তাই নয়, গোপনে ওই কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়ার জন্য বেশকিছু অত্যাবশ্যকীয় শর্তও শিথিল করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ওই কোম্পানির সঙ্গে একটি নেগোসিয়েশন বৈঠকও করে সিন্ডিকেট। উল্লেখ্য, সম্প্রতি সিপিজিসিবিএলের বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনায় বাতিলকৃত একটি কনসোর্টিয়ামকে নিয়ে সমঝোতা করার অনুমোদন দেওয়া হয়। স্বচ্ছতার স্বার্থে অযোগ্য বিবেচিত একটি প্রতিষ্ঠানকে কয়লা সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করার আগে আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাতিল হওয়া কোনো একক কোম্পানির সঙ্গে যদি নেগোসিয়েশন করা হয়, তাহলে সেটি ক্রয় নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দরপত্রের প্রাথমিক শর্তানুযায়ী কমপক্ষে ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা আমদানির অভিজ্ঞতার শর্ত উল্লেখ ছিল, যা কয়লা আমদানিসংশ্লিষ্ট দরপত্রের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। ওই শর্ত শিথিল করে ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন লোহা, সার, কেমিক্যাল, সিমেন্ট অথবা খাদ্যশস্য আমদানির অভিজ্ঞতাকে যোগ্যতা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি কতটা যৌক্তিক হয়েছে, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। এ ধরনের দরপত্র মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হবে, এটাই প্রত্যাশা। এ দরপত্র প্রক্রিয়ায় যাতে কোনো দুর্নীতি না হয়, এটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ দরপত্র প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার কারণে দেশে দুর্নীতির পাশাপাশি নানা অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে। দেশে সব ধরনের সরকারি কেনাকাটা ও দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।