চাকরি প্রত্যাশীর সঙ্গে ইবি উপাচার্যের ফোনালাপ ফাঁস

প্রকাশিতঃ ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২৩ | ৭:৩৩ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের পাঁচটি ফোনালাপের অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। Advertisement বৃহস্পতি ও শুক্রবার ‘ফারাহ জেবিন’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে তিনটি এবং ‘মিসেস সালাম’ নামে আরেক আইডি থেকে দুটি ক্লিপ ফাঁস হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এগুলো ভাইরাল হয়েছে। তবে এসব অডিও ক্লিপে এক প্রান্তের কথা শোনা গেলেও অপর প্রান্তের ব্যক্তির কণ্ঠ শোনা যায়নি। এসব অডিওতে একজন চাকরি প্রত্যাশীর সঙ্গে নিয়োগ বোর্ড, প্রশ্নপত্র ফাঁস, চাকরির বিনিময়ে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কথা বলতে শোনা যায় উপাচার্যকে। এ ঘটনায় শনিবার উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডে-লেবার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। এ সময় তারা তার অপসারণও দাবি করেন। এ ছাড়া অডিও ফাঁসে শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম। এদিকে ইবি থানায় উপাচার্যের নির্দেশে জিডি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে উপাচার্য ড. শেখ আবদুস সালাম গণমাধ্যমকে বলেন, অডিওর শব্দগুলো আমার, তবে কনটেক্সটগুলো ফেইক। রুচিহীন মানুষের দ্বারা এসব কাজ সম্ভব। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরামের বিবৃতির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, এসব অপপ্রচারের বিষয়ে শিক্ষক সমিতি বিবৃতি দিলে আমি খুশি হতাম। কিন্তু তারা আমার কাছে না জেনেই একটি বিবৃতি দিয়েছে। আমি অন্যায় করলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৫ অক্টোবর বোর্ডের কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিয়োগ বোর্ড স্থগিত হয়। এতে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে আবেদনকারীরা ছিলেন ড. মো অলিউর রহমান, মোশারফ হোসেন ও বিউটি মণ্ডল। এ সময় বোর্ডে তিনজন প্রার্থী উপস্থিত না হওয়ায় বোর্ড স্থগিত হয়। পরে ওই বছরের ২ নভেম্বর নিয়োগ বোর্ড পুনঃবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর আগেই এ সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। জানা যায়, পরবর্তী নিয়োগ বোর্ডের নিয়োগপ্রার্থী অলীউর রহমান অলী বর্তমানে সাংবাদিকতা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক। ওই বিভাগের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া। ফাঁস হওয়া প্রথম তিনটি ক্লিপের একটিতে ‘অলী’ নামের একজন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে উপাচার্যকে কথা বলতে শোনা যায়। ধারণা করা হচ্ছে-তিনি অলীউর রহমান অলী। তিনটি অডিওতে উপাচার্য অলী নামের ওই ব্যক্তিকে পূর্ব নির্ধারিত নিয়োগ বোর্ড স্থগিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন এবং পরবর্তী নিয়োগ বোর্ড আয়োজন করে তাকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে ওই বোর্ড আয়োজনে তার করণীয় ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন। তাকে বলা হয়, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বোর্ড আয়োজন করা হবে। বোর্ড সম্পন্ন করতে টাকার বিনিময়ে অন্তত তিনজন প্রার্থী রেডি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের প্রশ্ন সরবরাহ ও কিভাবে লিখতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শও দেওয়া হয় এসব অডিওতে। এছাড়া ট্রেজারারের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ ও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়। ৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডের প্রথম অডিওর শেষাংশে বলা হয়েছে ‘আচ্ছা আপনি সব দিয়ে রেডি থাকেন। যেদিন সব দিয়ে দিবেন তার ঠিক একুশ দিনের মাথায় সবকিছু গোছায় দিব।’ দ্বিতীয় পর্বের ১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের অডিওতে অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে কোন কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসবে, কিভাবে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, কতটুকু কোন বিষয়ে লিখতে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। ২ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের তৃতীয় ক্লিপে পরীক্ষায় কোথা থেকে প্রশ্ন আসবে সেই সোর্স এবং উত্তর ইংরেজিতে লেখার প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ট্রেজারারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং তাকে বুঝায়ে বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব অডিও ক্লিপের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি নিয়োগপ্রার্থী অলীউর রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষক হিসাবে তার (উপাচার্য) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। অডিওর বিষয়ে আমার কোনোরকম সংশ্লিষ্টতা নেই। এদিকে ফাঁস হওয়া অপর দুটি অডিও ক্লিপের প্রথমটিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ১৬-১৮ লাখ করে টাকা নেওয়া হয়, এ টাকা টিচার নেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নেন। এমনকি কনট্রাক্টরও নেন। অপর অডিওতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অস্থায়ী চাকরিজীবীদের অধিকাংশই ছাত্রলীগ। তারা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে লেবার হিসাবে কর্মরত। এতে তাদেরকে স্থানীয় মাস্তানও বলা হয়। ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার রাতে ইবি থানায় ভিসির নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান। এ বিষয়ে এইচএম আলী হাসান বলেন, উপাচার্য স্যার আমাকে জিডি করতে বলেছেন, তাই ইবি থানায় জিডি করেছি। অডিও পোস্টদাতার অ্যাকাউন্টটি আইডেন্টিফাই করতে জিডি করা হয়েছে। অডিও কার এটা তো আমি জানি না, এটা প্রশাসন বের করবে। ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আন নূর জায়েদ বিপ্লব বলেন, শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জিডি করেছেন। সেখানে একটি আইডি থেকে ভিসির ‘কণ্ঠ সদৃশ’ অডিও ফাঁস হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। শনিবার উপাচার্য কার্যালয়ে তালা দিয়ে তার অপসারণ চেয়ে কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। এ সময় তারা ‘দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের’ অপসারণ দাবি করেন। অপসারণ না হলে কঠোর আন্দোলন করার হুঁশিয়ারি দেন তারা। শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরামের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উপাচার্যের এমন মন্তব্যে শিক্ষক সমিতি হতবাক ও বিস্মিত। প্রচারিত অডিওর বক্তব্যের বিষয়ে অনতিবিলম্বে উপাচার্যের অবস্থান জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসাবে উপাচার্য কখনোই কোনো প্রার্থীর সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারেন না।