‘অলস’ নেতাদের তিরস্কার সক্রিয়রা পাবেন পুরস্কার

প্রকাশিতঃ ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২৩ | ৮:৫৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সরকারবিরোধী আন্দোলনে গতি আর দলীয় শৃঙ্খলা অটুট রাখতে কড়া শাসনে যাচ্ছে বিএনপি। দলের সব নেতাকর্মীকে আনা হচ্ছে কৈফিয়তের আওতায়। কর্মসূচিতে যাঁরা নিয়মিত অনুপস্থিত থাকছেন কিংবা কুঁড়েমি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে দলটি। বিপরীতে কর্মঠ নেতাদের জন্য থাকছে পুরস্কারের ব্যবস্থাও। যাঁরা মামলা-হামলা গায়ে মেখে আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় থাকছেন, তাঁদের \'লাইমলাইটে\' নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় না থাকা বিএনপি। কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রা না করে বনভোজনে আনন্দে মেতে থাকায় এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা চাঁদপুরের ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনসহ ৯ স্থানীয় নেতাকে শোকজ (কারণ দর্শানো) করা হয়েছে। একইভাবে সারাদেশের সরকারবিরোধী ধারাবাহিক আন্দোলনে যেসব স্থানে কর্মসূচি পালনে গাফিলতি হয়েছে, সেসব ইউনিটের নেতাকর্মীর নাম খুঁজে খুঁজে তালিকায় তোলা হচ্ছে। দলটির শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অতীতে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে যাঁরা নির্বাচন করেছিলেন বা জনপ্রতিনিধি হয়েছিলেন, এখন আন্দোলন কর্মসূচিতে লাপাত্তা- তাঁদের দিকে বিশেষ নজর রেখেছে দলের দপ্তর শাখা। এ ছাড়া মনোবেদনা, অভিমানসহ নানা কারণে দলীয় কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা নেতাকর্মীর তালিকাও হচ্ছে। তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা করে বিএনপি। কোথাও স্বাভাবিক, আবার কোথাও হামলা-প্রতিরোধের মুখে দেশজুড়ে এই কর্মসূচি পালিত হলেও চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার কোনো ইউনিয়নেই পদযাত্রা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালন না করে ওই এলাকার নেতারা বনভোজনে যান। ওই বনভোজনে দায়িত্বশীল নেতাদের নাচানাচির ভিডিও এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এ পটভূমিতে দলের শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং প্রকৃত ঘটনা জানতে গত জাতীয় নির্বাচনে চাঁদপুর-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনসহ ৯ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর। একই ঘটনায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। এ ব্যাপারে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, \'অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। যেহেতু তদন্তের বিষয়, তাই এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না।\' এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের পতনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি রাজপথের কর্মসূচি পালন করছে। এর আগে থেকেই আমরা দল পুনর্গঠনের কাজে হাত দিয়েছি। এটা দলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কয়েক বছর দলকে শক্তিশালী করতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এর সুফল বিএনপি পেতে শুরু করেছে। এখনও তাদের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। যারা যত বেশি সক্রিয়, তাদের তত বেশি মূল্যায়ন করা হবে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির সব নেতাকর্মীই যোগ্য আর ত্যাগী। তা না হলে দলের সব কর্মসূচি এত বেশি সফল হতো না। ১৬ বছর ধরে অত্যাচার-নির্যাতনের পরও নেতাকর্মীরা মাটি কামড়ে, ধৈর্য ধরে জাতীয়তাবাদী আদর্শকে ধরে রেখেছেন। আগামীতেও তাঁরা থাকবেন। এর মধ্যেও যাঁরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়, তাঁরা সবচেয়ে বেশি পুরস্কৃত হবেন। যাঁরা নিষ্ফ্ক্রিয় থাকবেন, তাঁরা হারিয়ে যাবেন। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের বাধার মুখে পড়েন তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মী। তবে চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতারা ড. জালাল উদ্দিনের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রিসোর্টে বনভোজনে অংশ নেন। বনভোজনের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং তৃণমূলের ক্ষোভ দমাতে তারেক রহমানের নির্দেশে গত সোমবার কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়ার সইয়ে সংশ্নিষ্টদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সংশ্নিষ্ট নেতারা শোকজের জবাব দিয়েছেন। শোকজ পাওয়া নেতারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, মতলব উত্তর বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক সরকার হান্নান, সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জিতু, সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মঞ্জুর আমিন স্বপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর সরকার, মতলব দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি এনামুল হক বাদল, সাবেক সভাপতি এমদাদ হোসেন খান, ছেঙ্গারচর পৌর বিএনপির সভাপতি নান্নু মিয়া প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান। জানতে চাইলে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, \'এটি সাংগঠনিক বিষয়। সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষায় অনেক সময় কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ওনারা জবাবও দিয়েছেন।\' চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, \'বিষয়টি সরাসরি কেন্দ্র থেকে করা হয়েছে। এতে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।\' অভিযোগের ব্যাপারে ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, \'কর্মসূচি সফল করতে ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে মতলবে আমার বাসায় নেতাকর্মী নিয়ে প্রস্তুতি সভা করি। শনিবার সকালে দু-একটি ইউনিয়নে কর্মসূচি শুরু হলেও সেদিন সরকারদলীয় স্থানীয় এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মতলবে অবস্থান করায় থানার ওসি তাঁকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। নতুবা গ্রেপ্তারের কথা বলেন। এ অবস্থায় দুপুর ১২টার পর নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হই। পথে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকায় হৃদয়ে মতলব নামে একটি সামাজিক সংগঠনের পূর্বনির্ধারিত বনভোজনে অংশ নেই। দলীয় কর্মসূচি বাদ দিয়ে এটাকে আনন্দফুর্তির অভিযোগ বলা অত্যন্ত দুঃখজনক।\' বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, এরই মধ্যে সারাদেশে এ রকম অনেক ঘটনা তাঁদের সামনে এসেছে। তৃণমূল থেকে লিখিত অভিযোগও পেয়েছেন তাঁরা। সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও ওই সব নেতার কাছে কৈফিয়ত জানতে চাওয়া হয়েছে। যুক্তিসংগত কারণ বলতে না পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।