জবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ

প্রকাশিতঃ জুন ৩০, ২০২৪ | ৯:১৮ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

মেয়াদোত্তীর্ণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছে। তার মোবাইলের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে এ প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র দিতে দেখা যায়। সম্প্রতি ছাত্রলীগ নেতার মেসেঞ্জারের স্ক্রিন রেকর্ডের ভিডিওসহ প্রশ্নফাঁসের সব তথ্য-প্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। মেসেঞ্জার রেকর্ডে দেখা যায়, জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইন তার মেসেঞ্জার থেকে একজনকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহ করছেন। ওই উত্তরপত্রের অধিকাংশই ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলে গেছে। মেসেঞ্জার রেকর্ডে দেখা যায়, যিনি উত্তরপত্র নিচ্ছেন তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতারকে বলছেন, \'সব দিছেন ভাই?\' জবাবে আকতার হোসাইন বলেন, \'হ্যা, কাউ কে দিয়ো না আবার।\' এরপর মেসেঞ্জারের স্কিন রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে আকতার হোসাইনের ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকে তার আইডির সত্যতা পাওয়া গেছে। এদিকে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি অনুসন্ধানে এসএম আকতার হোসাইনের মামাতো ভাই পরিচয়ে মাদারীপুরের কাঁকন মিয়ার একটি অডিও ক্লিপও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাতে তিনি অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে ভর্তি পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দেন। কাঁকন মিয়া বলেন, \'এখানে আমি আকতারের আপন মামাতো ভাই। আকতারও এটা বলেছে। আপনিও বলেছেন যে ভাই আপনি যে কয়টা কাজ দিয়েছেন, একটাও মিস হয় না।\' এ বিষয়ে কাঁকন মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, \'আপনি ওই যার পরিচিত তার কাছে শোনেন। আমার কাছে জানার কি আছে।\' এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের এরূপ নেতিবাচক সংশ্লিষ্টতার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জবি ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতারা। জবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পরাগ হোসেন বলেন, প্রশ্নফাঁস একটি গুরুতর অপরাধ। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ এ ধরণের অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠনকে কলুষিত করার ইজারা কাউকে দেওয়া হয়নি। আশা করি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। অপর সহ-সভাপতি মাসুম পারভেজ বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কাছে অনুরোধ জানাব, যাতে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জবি শাখা ছাত্রলীগের ১নং সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাত সাঈদ বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সেই সংগঠনের ইউনিট প্রধানদের কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়ার মতো না। এমন কর্মকাণ্ডে আমি কর্মী হিসেবে ব্যথিত এবং লজ্জিত। জবি ছাত্রলীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল রায়হান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। প্রশ্নফাঁসের মতো এই গুরুতর অভিযোগে সাংগঠনিক ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র বিরোধী এ কাজের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করে জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এম আকতার হোসাইন বলেছেন, \'এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।\' এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ একটি গুরুতর বিষয়। আমরা যদি কারও বিরুদ্ধে এমন সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই, তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি অবগত নই। যদি কেউ কোনো অপরাধে যুক্ত থাকে, তবে অপরাধীর স্থান ছাত্রলীগে নেই। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বলেন, যে কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান। অনৈতিক ও গঠনতন্ত্র বিরোধী, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও আদর্শ বিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলে অবশ্যই সংগঠন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি ইব্রাহিম ফরাজীকে সভাপতি ও এসএম আকতারকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে জবি ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ক্যাম্পাসের সব টেন্ডার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, ঠিকাদারদের চেক আটকে দেওয়া, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করা, রিসোর্টে নারী কর্মী নিয়ে কেলেঙ্কারী ও সদরঘাটে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে ৬ মাস পরেই এ কমিটি স্থগিত হয়ে যায়। পরে কমিটি ফিরে পেলেও দেড় বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে জবি ছাত্রলীগ।