বিশাল আকারের চার মাদার ভেসেল পাচ্ছে বিএসসি

প্রকাশিতঃ জুলাই ৪, ২০২৪ | ৯:০১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

প্রতিষ্ঠার ৫২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের চারটি মাদার ভেসেল (গভীর সমুদ্রগামী জাহাজ) পাওয়ার পথে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। চারটি মাদার ভেসেলের মধ্যে দুটি ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ। বাকি দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরে এ চারটি জাহাজ নির্মাণে দেশটির সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি ঋণচুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও বিএসসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই চুক্তি সই হলে দুই হাজার ৬২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকায় জাহাজ চারটি নির্মাণ করবে দেশটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)। এতে চীন ঋণ দেবে দুই হাজার ৪৮৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ওই টাকা ২ শতাংশ সুদসহ ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। যদিও ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ড পাবে বিএসসি। বাকি ১৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার জোগান দেবে বিএসসি। বাংলাদেশের পতাকাবাহী ১০১টি জাহাজের চেয়ে ওই সব জাহাজ ধারণ ক্ষমতার দিক থেকে অনেক বড় আকারের হবে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও বিএসসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, চারটি মাদার ভেসেল নির্মাণ শুরুর সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। শুধু বাকি আছে ঋণচুক্তি সইয়ের। আমি যতটুকু জেনেছি, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে এ ঋণচুক্তি সইয়ের কথা রয়েছে। ওই চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব সই করবেন। আমরা ঋণচুক্তির সব ধরনের কাগজপত্র ইআরডিতে পাঠিয়েছি। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের এজেন্ডায় বেশকিছু পয়েন্ট যুক্তের প্রস্তাব করে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চারটি জাহাজ নির্মাণে ঋণচুক্তি ছাড়া বাকিগুলোর বিষয়ে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এই ঋণচুক্তি সই হবে এমনটিও নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। জানা গেছে, ঋণচুক্তি হলে এর আওতায় যে চারটি জাহাজ সংগ্রহ করা হবে, সেগুলোর মধ্যে দুটি ক্রুড অয়েল ট্যাংকারের একেকটির ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ১৪ হাজার ডেড ওয়েট টনেজ (ডিডব্লিউটি)। একটি জাহাজে কী পরিমাণ ওজন নিরাপদে ধারণ করতে পারে সেটাই হচ্ছে ডিডব্লিউটি। এ দুটি জাহাজের দৈর্ঘ্য ২৫০ মিটার। জাহাজের গভীরতা ১৫.১ মিটার। ক্রুড অয়েল জাহাজের একেকটির নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ দুটির প্রত্যেকটির ধারণ ক্ষমতা ধরা হয়েছে ৮১ হাজার ৫০০ ডিডব্লিউটি। এর দৈর্ঘ্য ২২৯ মিটার এবং গভীরতা ১৪.২৮ মিটার। বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজের প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ৪৬২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এগুলো বিএসসির বহরে যুক্ত হলে সংস্থাটির জাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১টিতে। সংগ্রহের প্রক্রিয়াধীনে থাকা চারটি জাহাজে বছরে ২০ লাখ টন ক্রুড অয়েল এবং ১৫ লাখ ২০ টন কার্গো বহন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে বিএসসি ভাড়া করা জাহাজে ক্রুড অয়েল পরিবহণ করছে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিএসসির বহরে বর্তমানে সাতটি সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভ নামক তেলবাহী জাহাজ ১৯৮৬ সালে নির্মাণ করা হয়। সেগুলোর ধারণ ক্ষমতা যথাক্রমে ১৪৫৪১ ও ১৪৪৯৪ ডিডব্লিউটি। আর ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সংগ্রহ করা ছয়টি জাহাজের একেকটির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩৯ হাজার ডিডব্লিউটি। ওই ছয় জাহাজের মধ্যে বাংলার সমৃদ্ধি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বিএসসি যে দুটি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার সংগ্রহ করছে সেগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৭৫ হাজার ডিডব্লিউটি সম্পন্ন। আর বাল্ক ক্যারিয়ারের সক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বাংলাদেশের পতাকাবাহী ১০১টি সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ওমেরা লিগেসি নামক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি জাহাজ। ওই জাহাজের সক্ষমতা এক লাখ ৭ হাজার ৯১ ডিডব্লিউটি। বিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরে ঋণচুক্তি হলে কয়েক মাসের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এ জাহাজ নির্মাণে ৩২-৩৪ মাস সময় লাগবে। এরপর সেগুলোতে পণ্য পরিবহণ শুরু হবে। বিশ্বের সব বন্দরে এসব জাহাজ আমদানি-রপ্তানি পণ্য পৌঁছে দিতে পারবে। তারা আরও জানান, নতুন সংগ্রহ করা চারটি জাহাজের আকৃতি ও গভীরতা এত বড় যে এগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারবে না। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে। আর এগুলোর গভীরতা ১৪.২৮ থেকে ১৫.১ মিটার। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হলে সেখানে সরাসরি ভিড়তে পারবে এসব জাহাজ। বিএসসির সব জাহাজের মেরিন অফিসার ও ক্রুরা বাংলাদেশি নাগরিক। নতুন জাহাজ তৈরি হলে সেখানে বছরে প্রায় ২৫০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিএসসির বার্ষিক আয়ও অনেক বেড়ে যাবে।