লেবার পার্টির জয়ে বৈশ্বিক সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে?

প্রকাশিতঃ জুলাই ৬, ২০২৪ | ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

যুক্তরাজ্যে কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে লেবার পার্টি। ভোটের মাঠে দলটির সাড়া জাগানো সাফল্যের নায়ক কিয়ার স্টারমার। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পাশাপাশি নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতার লাগাম ধরলেন তিনি। তবে দীর্ঘ সময় পর দলটির ফিরে আসা নিয়ে উদ্বেগ চলছে দেশটিতে। লেবার পার্টির জয়ে কী প্রভাব পড়বে বিশ্ব রাজনীতিতে? অথবা স্টারমারের অধীনে কেমন হবে যুক্তরাজ্যের বৈশ্বিক সম্পর্ক? তাই এখন আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে নিজ দেশসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্টারমার। রয়টার্স, ফস্টপোস্ট। যুক্তরাষ্ট্র : বৈদেশিক ইস্যুগুলোর মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো রাখা। স্টারমার বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি হোন না কেন তার সঙ্গে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখবেন তিনি। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে বলেও উল্লেখ করেছেন স্টারমার। অর্থনৈতিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা এবং বুদ্ধিমত্তাসহ মূল্যবোধ এবং সাধারণ স্বার্থের ভিত্তিতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথাও ব্যক্ত করেছেন তিনি। গাজা : স্টারমার বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চান। তবে শান্তি প্রক্রিয়ায় এই ধরনের পদক্ষেপ সঠিক সময়ে আসতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। লেবার পার্টি তার ইশতেহারে বলেছে, আমরা একটি স্থায়ী ও টেকসই শান্তি প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে প্রতিশ্রুতি“তিবদ্ধ। যার ফলস্বরূপ একটি কার্যকর ও সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পাশাপাশি একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত ইসরাইলসহ দ্বিরাষ্ট্রীয় অবস্থানের দিকে এগিয়ে যাবে। ইউক্রেন : যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের অন্যতম কট্টর সমর্থক। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য অর্থ, অস্ত্র এবং সেনা প্রশিক্ষণ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশটি। চলতি বছর যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে ৩০০ কোটি পাউন্ড সমমূল্যের সামরিক সহায়তা দিতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি ইউক্রেনে আগামী বছরগুলোতেও সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলেও আশা করা হচ্ছে। দলীয় ইশতেহারে লেবার পার্টি বলেছে, লেবার পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাজ্যের সামরিক, আর্থিক, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমর্থন অব্যাহত থাকবে। স্টারমার বলেছেন, ইউক্রেনের প্রতি আমাদের সমর্থন এই দেশে একটি ঐক্যফ্রন্টে রয়েছে। এ ছাড়াও স্টারমার ব্যক্তিগতভাবে তার সমর্থন পুনর্নিশ্চিত করতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইউরোপ : এবারের যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে নন-কনজারভেটিভ সরকারের মুখোমুখি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এরই মধ্যে ইইউ’র অভিন্ন বাজার অথবা শুল্ক ইউনিয়নে পুনরায় যোগদানের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন স্টারমার। তবে তার দল বলেছে, ইইউ জোটের সঙ্গে কিছু বাণিজ্য বাধা অপসারণ করা এখনো সম্ভব। লেবার পার্টি সহযোগিতা জোরদার করতে এবং ফ্রান্স ও জার্মানিসহ মূল ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য একটি নতুন ইউকে-ইইউ নিরাপত্তা চুক্তির পরিকল্পনা করছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। স্টারমার ফ্রান্সের অতি-ডান জাতীয় সমাবেশ (আরএন) দলের সঙ্গেও কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে তিনি বলেছেন, আমরা (লেবার পার্টি) নির্বাচিত হলে আমি ইউরোপে এবং সারাবিশ্বের যেকোনো সরকারের সঙ্গে কাজ করব। চীন : কনজারভেটিভ পার্টির শাসনামলে চীনের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক কিছুটা নিম্নমুখী হয়। এই বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্য চীনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বলেছিল-সাইবার আক্রমণ এবং গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত থাকলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে লেবার পার্টি বলেছে, তারা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদি এবং কৌশলগত পন্থা নিয়ে এগোবে। দলটি আরও বলেছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি নিরীক্ষার মাধ্যমে চীন যে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো তৈরি করেছে তা বোঝার এবং তার প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্রিটেনের সক্ষমতা উন্নত করার দিকে নজর দেওয়া হবে। এছাড়াও হংকং সম্প্রদায়ের সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোর এবং তাদের সমর্থন করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ভারত : স্টারমারের বৈদেশিক নীতির এজেণ্ডায় নয়াদিল্লি বিশিষ্টভাবে বৈশিষ্ট্যযুক্ত। তিনি যুক্তরাজ্য-ভারত সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বেশ কিছু দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অচলাবস্থায় আটকে আছে। নয়াদিল্লি এবং লন্ডন দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে লেবার পার্টির ভূমিধস জয় এটি পরিবর্তন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্টারমার নয়াদিল্লির সঙ্গে একটি নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার এবং নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। লেবার নেতা স্টারমার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনার ক্ষেত্রে পার্টির অতীতের ভুলগুলোকেও স্বীকার করেছেন। সেই সঙ্গে স্টারমার পার্টির মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও যুক্তরাজ্যে ভারতীয় প্রবাসীদের সঙ্গে টানাপড়েন সম্পর্ক মেরামত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। বৈশ্বিক বিষয় ছাড়াও অভ্যন্তরীণ ফ্রন্টেও মনোনিবেশের কথা জানিয়েছেন স্টারমার। ব্রিটেনের বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদক কোম্পানি টাটা থেকে শুরু করে বেসরকারি পানি সরবরাহ কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে উন্নত চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে স্টারমারের। দেশের উন্নয়নে এবং বেকারত্ব রোধে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এছাড়াও ডাক্তারদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টিতেও মনোযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে লেবার পার্টি। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪১২টি আসনে জয় পেয়েছে লেবার পার্টি। কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ১২১টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য কোনো দলের প্রয়োজন হয় ৩২৬ আসন।