প্রায় দুই বছর নেই রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয় কেন্দ্র থেকে। এর পর আর কোনো কমিটি দেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় রাজশাহীতে ছাত্রলীগের কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জন ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়লেও কমিটি না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অন্যদিকে রাজশাহী জেলার অধীন অধিকাংশ উপজেলার ছাত্রলীগের কমিটি নেই গত কয়েক বছর ধরে। জেলার তিনটি উপজেলা কমিটির মেয়াদ আগেই শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সাকিবুল ইসলাম রানাকে সভাপতি ও জকির হোসেন অমিকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩০ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিন খান জয় ও সাধারণ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তবে কমিটি ঘোষণার মাত্র সাত মাসের মাথায় জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জড়িয়ে পড়েন নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নারী কেলেংকারি ও মাদক গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙ্গে দেন। কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার পর গত ২১ মাসেও নতুন কমিটি দেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১০ জুলাই কেন্দ্রীয় কমিটি রাজশাহী জেলা কমিটির নতুন কমিটির জন্য আগ্রহীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করেন। এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে কর্মীসভা আহ্বান করে ছাত্রলীগ। পরে সেই কর্মীসভা আর হয়নি। তবে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপত্যাশীদের নিয়ে ঢাকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। মতবিনিময় সভার পর শিগগির কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও সেই কমিটি আর হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু জেলা কমিটিই নয়- রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, বাঘা, পুঠিয়া ও বাগমারা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি নেই গত দুই বছর ধরে। জেলার চারঘাট, পবা ও মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি হয় আট বছর আগে। পুর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই এই তিনটি উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে পাঁচ বছর আগে। রাজশাহীর অধিকাংশ উপজেলাতে আর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নেই। এদিকে দীর্ঘদিন জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় রাজশাহীতে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমও নেই। অনেকেই ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে নানান অপকর্ম করেন। যদিও সংগঠনে তাদের কারোরই কোনো পদ নেই। গত দুই বছর ধরে নতুন কর্মী সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ আছে। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়া জরুরি। কারণ এখন কমিটি না থাকার কারণে সাংগঠনিক সংকট তীব্র হচ্ছে। জেলায় ছাত্রলীগের কর্মী নেই এটা ভাবাই যায় না। নতুন করে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো এখন আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সংগঠন যারা করেন তাদেরই নেতৃত্বে আসা দরকার। রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক বলেন, জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় আমাদের সংগঠনের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী বিভাগীয় শহরের একটি জেলা। এখানে গত দুই বছর ধরে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। এভাবে চলতে থাকলে একসময় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোন নেতাকর্মী পাওয়া যাবে না। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনীল কুমার বলেন, রাজশাহীতে ছাত্রলীগ আগের মতো আর প্রাণবন্ত নেই। নতুন কমিটি হলে সংগঠনে প্রাণ চাঞ্চল্য তৈরি হবে। আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত সময়ে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার জন্য তাদেরকে অনুরোধ করেছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নিয়ে কাজ চলছে। যে কোনদিন জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেওয়া হবে। নেতৃত্ব পেতে আগ্রহীদের প্রোফাইল যাচাই বাছাই করার কাজ চলছে।