কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণার পর ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সপ্তাহব্যাপী দূরপাল্লার কোনো বাস রাজধানী থেকে ছাড়তে দেখা যায়নি। তবে পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় সীমিত আকারে চলতে শুরু করেছে দূরপাল্লার বাস। কারফিউ শিথিলের ফাঁকে ফাঁকে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে এসব বাস। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার ভেতরও প্রবেশ করছে যাত্রীবাহী বাস। তবে অনেক রুটে যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ায় সময়মতো বাস ছাড়া হচ্ছে না। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন অনেক যাত্রী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকেই গাবতলী থেকে কিছু বাস উত্তরবঙ্গের দিকে, মহাখালী থেকে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনার দিকে, সিলেট রুটে এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দিকে ছেড়ে গেছে। এসব বাসে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। কারফিউ শিথিল থাকাকালে এসব বাস চলাচল করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া রাজধানীতে সিটি সার্ভিস বাসের সংখ্যাও কম। মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে আছেন সাধারণ যাত্রীরা। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাস্তায় যান চলাচল ও মানুষের সংখ্যা কম থাকলেও বিকাল থেকে চাপ বাড়তে থাকে। অনেক এলাকায় যাত্রীরা বাসের সংকটের কারণে হেঁটে গন্তব্যে যান। সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘গাড়ি স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে। আমরা কোনো ধরনের সমস্যা অনুভব করছি না।’ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে বাধা দেওয়া হয়। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বেশ কিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ফলে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির পর বন্ধ হয়ে যায় সব যাত্রীবাহী যান চলাচল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ ঘোষণা করে সরকার। তবে কারফিউ শিথিল করার পর ফের গত বুধবার থেকে সীমিত আকারে দূরপাল্লার ও সিটি সার্ভিসের যান চলাচল শুরু হয়েছে। সরেজমিন শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে যাত্রীর অপেক্ষায়। তবে বেশির ভাগ রুটে যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কম। ফলে সব রুটে চলছে না বাস। ওইসব রুটের অনেক যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টার্মিনালে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সাইদুর রহমান নামের এক যাত্রী জানান, জামালপুরে যাবেন তিনি। যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন মহাখালী বাস টার্মিনালে। প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাস পাচ্ছেন না। ফলে ভেঙে ভেঙে বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি। ঢাকা-রৌমারী-ঢাকা রুটে চলা সিয়াম এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার মো. মোজাফফর জানান, গত বুধবার থেকে তারা কারফিউ শিথিলকালীন সময়ে বাস ছাড়ছেন। শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মাত্র তিনটি বাস ছেড়ে গেছে। যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কম বলে জানান তিনি। ঢাকা-মদন-ঢাকা রুটে চলা নেত্র পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার মো. ইসমাইল হোসেন জানান, শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনটি বাস কাউন্টার ছেড়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। একটি বাসে চার জন এবং অপর দুটিতে ছয় ও ১১ জন যাত্রী ছিল বলে জানান তিনি। তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলা এনা পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার সজল জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের ৫০টি বাস ছেড়ে গেছে। যাত্রী সংখ্যাও ভালো ছিল। গাবতলীতে অবস্থিত রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকেও কারফিউ শিথিলের ফাঁকে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে বাস। তবে যাত্রীর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক কম বলে জানিয়েছেন বাসের কাউন্টার মাস্টাররা। ফলে বিভিন্ন কোম্পানির অল্পসংখ্যক বাস চলাচল করছে। ঢাকা-খুলনা-সাতক্ষীরা রুটে চলা কিংফিশার পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার সেলিম বলেন, সীমিত আকারে বাস ছাড়া হচ্ছে। সোহাগ পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার আসিফ বলেন, সকাল ৬টা থেকে বাস ছাড়া হচ্ছে। রাতেও কিছু বাস চলছে। গ্রিনবাংলা পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার মো. রিপন জানান, বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাস চলছে। যাত্রী সংখ্যা কম। তবে রাতে যাত্রী বেশি এলে বাস ছাড়া হচ্ছে। যাত্রী না এলে বাস ছাড়া হচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল রুটে চলা হানিফ পরিবহণের সায়েদাবাদ টার্মিনালের এসি কাউন্টারের মাস্টার মো. আরিফ জানান, কারফিউ শিথিল থাকা অবস্থায় বাস ছাড়া হচ্ছে। যাত্রী মোটামুটি ভালো। তবে কারফিউ চলাকালে কোনো বাস ছাড়া হচ্ছে না। ঢাকা-জয়পুরহাট রুটে চলা হানিফের কল্যাণপুর কাউন্টারের মাস্টার সাজ্জাদ জানান, শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জয়পুরহাটগামী একটি এসি বাস ছেড়েছে। যাত্রী সংখ্যা অন্যান্য সময়ের চেয়ে কম বলে জানান তিনি। এছাড়া শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামটর, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক ঘুরে দেখা গেছে গণপরিবহণ কম। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি ও রিকশার আধিক্য দেখা গেছে।