কারা অধিদপ্তরে জরুরি সিকিউরিটি সেল

প্রকাশিতঃ জুলাই ২৭, ২০২৪ | ৮:৪৮ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সারা দেশের সব কারাগারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় কারা অধিদপ্তরে খোলা হয়েছে একটি বিশেষ সিকিউরিটি সেল। ওই সেল থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ৬৮টি কারাগারে। কোনো কোনো কারাগারে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। যেসব কারাগারে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়নি, সেগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এ দুই বাহিনীর সঙ্গে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে সঙ্গে সঙ্গেই যেন এ দুই বাহিনীর সহায়তা নেওয়া যায়, সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন তারা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, কারাগারগুলোয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে সব ধরনের অস্ত্র। বাতিল করা হয়েছে কারাসংশ্লিষ্ট সবার ছুটি। বন্ধ রাখা হয়েছে স্বজনদের সঙ্গে বন্দিদের দেখাসাক্ষাৎ ও কথা বলার সুবিধা। জানতে চাইলে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান শুক্রবার বলেন, সব কারাগারের ভেতর ও বাইরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা দেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সশস্ত্র অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা পর্যায়ের কারাগারগুলোয় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। কারাগারগুলোর বাইরের গেটে কড়া পাহারা নিশ্চিত করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে যেন ছুটি দেওয়া না হয়, সে নির্দেশনা সব কারাগারে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কারা অধিদপ্তরে ২৪ ঘণ্টার জন্য একটি সিকিউরিটি সেল খোলা হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ওই সেলকে তথ্য জানাতে সব কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই সেল থেকে সময়ে সময়ে সংশ্লিষ্ট কারাগারগুলোয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত নতুন নতুন বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারাসংশ্লিষ্টরা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ ডিউটি করছেন। কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান আরও বলেন, কারাগারের ধরন অনুযায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য যেখানে যত ফোর্স প্রয়োজন, সেখানে তত ফোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে ডিসির সঙ্গে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। কারাগারগুলোয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে ৭৬ হাজারের বেশি বন্দি আছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই তাদের সঙ্গে স্বজনদের দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ রাখা হয়েছে মোবাইল ফোনে ভেতর থেকে বাইরে কথা বলার সুবিধা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারাগারের আকার বেড়েছে। বেড়েছে বন্দি ও কারাগারের সংখ্যাও। সে অনুযায়ী জনবল অপ্রতুল। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী চার বন্দির জন্য একজন কারারক্ষী প্রয়োজন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমাদের কারাগারে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সব জনবলকেই ডিউটিতে নিয়োজিত করা হয়েছে। যত ধরনের অস্ত্র আছে, সবই প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে নিরাপত্তার কাজে যুক্ত হয়েছে আনসার, পুলিশ ও র‌্যাব। সেনাবাহিনী ও বিজিবির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে যে কোনো মুহূর্তে কারাগারের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। আগের চেয়ে ফোর্স কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। যারা ছুটিতে ছিলেন, তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দেশের পরিস্থিতি স্বভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কাউকে ছুটি না দেওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। কারারক্ষীসহ সবার ডিউটি বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তায় এ মুহূর্তে ৬০০ নিজস্ব জনবল সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এছাড়া ৫০ জন পুলিশ এবং ২০ জন আনসার সদস্য সার্বক্ষণিক মোতায়েন আছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভেতরের কোনো লোকজন বাইরে যাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ডেকে দেওয়া হয়েছে কারাগারের ভেতর-বাইরে। কক্সবাজার জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম বলেন, ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই আমরা কারাগারের নিরাপত্তায় বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। নরসিংদীর ঘটনার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করেছি। কারাগারের বাইরে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তা ও কারাগারের শক্তি বৃদ্ধির জন্য স্থানীয়ভাবে একটি আর্মির দল মোতায়েন করেছি। ভেতর-বাইরে সব জায়গায় নিজস্ব নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ ও বিজিবির পাশাপাশি প্যাট্রল পার্টি অস্ত্রসহ টহল দিচ্ছে। চলছে টাওয়ার ডিউটি। বাড়ানো হয়েছে মোবাইল ডিউটি ও মনিটরিং। উল্লেখ্য, দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে সেখানে আট শতাধিক বন্দিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। কারাগার থেকে লুট হওয়া ৮৫টি অস্ত্রের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৫টি উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া লুট হওয়া ৭ হাজার রাউন্ড গুলির মধ্যে ১ হাজার ৯১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। খোয়া যাওয়া অন্য সরঞ্জামাদির মধ্যে ২২৭টি গুলির খোসা, ২০টি ম্যাগাজিন এবং ১০টি হাতকড়ার সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পালিয়ে যাওয়া নয় জঙ্গির মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া জেল পলাতাক নয় আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে ৪৮১ কয়েদি ইতোমধ্যে থানা ও আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্য কারাগারগুলোকে আনা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়ে।