বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। একই সঙ্গে আন্দোলনের ন্যায্য দাবি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমন প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দলটি। নিহত ছাত্রছাত্রীদের বীর মুক্তিসেনা আখ্যায়িত করার পাশাপাশি একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত শহিদের তালিকা প্রকাশের দাবিও জানানো হয়েছে। রোববার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে এক জরুরি যৌথ সভা শেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান দলটির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু। সভায় দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের এমপি সভাপতিত্ব করেন। চুন্নু বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার পর দেশের মানুষ ভেবেছিল শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত একটি দেশ হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক এবং অধিকার আদায়ের আন্দোলন হলেও এটি আর ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ আন্দোলন ছিল না। এক পর্যায়ে এটি ছাত্র জনতার আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিনের শোষণ, বঞ্চনা, গণতন্ত্রহীনতায় মানুষের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনের ওপর অত্যাচার শুরুর পর থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য জনগণও তাদের সঙ্গে নেমে পড়ে। ছাত্রদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন, অসংখ্য ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। আহত করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। এমন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন আমরা অতীতে দেখিনি। এমন বর্বর ও নিপীড়নমূলক হত্যাকাণ্ড জাতি কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। আন্দোলনরত ছাত্ররা রাজনৈতিক দলগুলোকে সরাসরি পাশে চায়নি বলেই আমরা তাদের সঙ্গে মাঠে ছিলাম না। কিন্তু গেল সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের দীর্ঘ ১০ মিনিট কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী আইন করে কোটা সংস্কারের প্রতি আমাদের সমর্থন আছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সহিংসতার নামে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দায় স্বীকার করে চলে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, কোনো মন্ত্রী বা এমপির বাড়িতে তো হামলা হয়নি। সেখানে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি স্থাপনাগুলো রক্ষায় তাদের কোনো উদ্যোগ ছিল না। আন্দোলনরতদের গ্রেফতারের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার বাণিজ্য চালাচ্ছে। এর আগে ছাত্রদের অহিংস আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজেনের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, দলের সভায় ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাইদসহ শহিদদের মামলার এজাহারে প্রকৃত মৃত্যুর কারণ না দিয়ে মিথ্যা এজাহার দাখিলের নিন্দা জানানো হয়েছে। এছাড়াও ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত সব সরকারি কর্মকর্তা, উসকানিদাতাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। ছাত্রনেতাদের হয়রানি/ নির্যাতন না করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ছাত্রদের নামে করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে গ্রেফতার সব ছাত্রনেতার মুক্তি দাবি করা হয়েছে। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টির এই সভা ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবার-পরিজনকে সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহতদের সুচিকিৎসা দাবি করছে। অবিলম্বে দেশের ইন্টারনেটসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ খুলে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সভা মনে করে কেপিআইভুক্ত স্থাপনাসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব সরকারের। সরকার এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। সভা মনে করে, অবিলম্বে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রকৃত ছাত্রদের হল প্রশাসনের মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতায় নিহত ও আহত সাংবাদিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যৌথ সভায় জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, মেজর (অব.) রানা মো. সোহেল, মো. জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল আলম রুবেল, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, সৈয়দ মো. আব্দুল মান্নান, নাসরিন জাহান রতনা, সৈয়দ দিদার বখত্, নাজমা আখতার, মো. আতিকুর রহমান আতিক, শেরীফা কাদের প্রমুখ।