নোরা ফাতেহি বর্তমানে বলিউডের আইটেম গার্ল হিসেবে অতিপরিচিত মুখ। একাধিক ছবিতে তার ধুন্ধবি ধামাকা নাচ নজর কেড়েছে দর্শকের। তার নাচের ভিডিও মানেই অনুরাগীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। সমাজমাধ্যমেও তার অনুসরণকারীর সংখ্যা ৭ কোটির বেশি! সম্প্রতি বলিউডে ক্যারিয়ারের ১০ বছর পূর্ণ করলেন নৃত্যশিল্পী-অভিনেত্রী নোরা ফাতেহি। নাচের রিয়্যালিটি শোয়ে বিচারকের আসনেও জায়গা পান নোরা। এভাবেই ধীরে ধীরে বলিউডের অন্দরমহলে নিজের জায়গা করে নিতে দেখা গেছে তাকে। সম্প্রতি মুম্বাইয়ে পা রেখে তার শুরুর দিনের স্মৃতিচারণায় ডুব দিলেন নোরা। প্রকাশ্যে আনলেন অজানা তথ্য। এক সাক্ষাৎকারে ক্যারিয়ার শুরুর দিনগুলো নিয়ে কথা বলেছেন নোরা। তিনি জানান, মুম্বাই শহরে এসে ক্যারিয়ার গড়ার পথ খুব সহজ ছিল না। কানাডা থেকে মুম্বাই এসে নিজের ভিত তৈরি করতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল নোরাকে। ছোট থেকেই পরিবারকে সেভাবে পাশে পায়নি নোরা ফাহেতি। প্রতিটা মুহূর্তে কড়া শাসনের মধ্যে বেড়ে উঠতে হয়েছে নোরাকে। ছিল না কোনো নাচের প্রশিক্ষণ। ছোট থেকেই কড়া শাসনে বড় হয়েছেন নোরা ফাহেতি। মেনে চলতে হয়েছে একাধিক নিয়ম। হিন্দি গান শুনে নাচের স্বভাব ছিল ছোট থেকেই। তবে অনুমতি ছিল না। লুকিয়ে লুকিয়ে মা কেবল সাপোর্ট করতেন নোরা ফাতেহিকে। তবে নাচিয়ে নয়, তিনি হতে চেয়েছিলেন একজন অভিনেত্রী। বলিউডে পা রেখে বুঝেছিলেন সফরটা এতটাও সহজ নয়। নাচের প্রস্তাব পাওয়ার পর তাই গ্রহণ করেছিলেন নোরা। জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক হলেও নৃত্যশৈলীর নিরিখে ভারতে এখন তার আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। তবে ভারতের বুকে এসে তাকে কম কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়নি। একের পর এক কাজের প্রস্তাব পেয়ে তাকে রীতিমতো ঠকতে হয়েছে। ভয়ানক পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে তাকে। নোরা বলেন, ‘১ হাজার ডলারের (মার্কিন) মূল্য তখন বুঝতাম না।’ বিগ বস ৯ সিজনে অংশগ্রহণ করেছিলেন নোরা। প্রিন্স নারুলার সঙ্গে তার রোমান্টিক লিংক আপ আলোচিত হয়েছিল সে সময়। বিগ বসের বাড়িতে তাদের প্রেম শিরোনাম তৈরি করত রোজ। বিগ বসের পর তাকে দেখা যায় ব্লকবাস্টার ‘বাহুবলী’ ছবির একটি নাচের দৃশ্যে। ক্যারিয়ার শুরু হয় সেই থেকে। তার আগে প্রথমদিকে অনেক নাজেহালের শিকার হয়েছিলেন নোরা। নোরা জানান, এখনো পর্যন্ত সেই ‘বিভীষিকা’ তাকে তাড়া করে। এভাবেই ধীরে ধীরে বলিউডের অন্দরমহলে নিজের জায়গা করে নিতে দেখা যায় তাকে। ঠিকমতো হিন্দি বলতে পারতেন না অভিনেত্রী। একটি সাক্ষাৎকারে নোরা স্পষ্টই স্বীকার করেন, ‘হিন্দি শিখতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু অডিশনের সময় ভয়ানক অবস্থা হত আমার। মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতাম না। নিজেকে খুব বোকা বলে মনে হতো। কিন্তু কিছু মানুষ তো ক্ষমা করেন না। সামনাসামনি হাসাহাসি করতেন তারা। বলতেন, আমি সার্কাস থেকে এসেছি। আমাকে বলি করেছেন তারাই। খুব অসম্মানজনক বলে মনে হয়েছে আমার। বাড়ি ফেরার সময় কাঁদতাম।’ পকেটে টাকা ছিল না, নয় জনের সঙ্গে ঠাসাঠাসি করে এক ফ্ল্যাটে থাকতে হয়েছে। সূত্র আনন্দবাজার অনলাইন। নোরা বলেন, পকেটে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ভারতে এসেছিলাম আমি। ভারতে এসে একটি তিন কামরার ফ্ল্যাটে উঠি। তিন কামরার সেই ফ্ল্যাটে নয় জন ‘উন্মাদ’ মেয়ের সঙ্গে একটি ঘর শেয়ার করে থাকতাম আমি আর ভাবতাম নিজেকে কোথায় এনে হাজির করলাম। আমার ঘরে আরও দুটি মেয়ে থাকত। সেই সময় ভাবতাম, ‘আমি নিজেকে কোথায় এনে হাজির করলাম!’ এখনো ভাবলে ভয় লাগে। খাওয়াদাওয়ার সঙ্গেও সেই সময় আপস করতে হয়েছিল নোরাকে। মুম্বাইয়ে সুযোগ পেতে অনেকেই কাস্টিং সংস্থার শরণাপন্ন হন। নোরাও তার ব্যতিক্রম নন। তবে সেই সংস্থা যে নোরাকে যোগ্য পারিশ্রমিক দিত না, সে কথাও জানান। নোরা বলেন, ‘সংস্থা বড় পরিমাণ অর্থ কেটে নিয়ে আমাকে কম টাকা দিত। একটা ডিম আর এক টুকরো পাউরুটি খেতাম দিনে। যা রোজগার হতো তার অধিকাংশই দিয়ে দিতে হতো তার ‘ট্যালেন্ট এজেন্সি’কে। নোরার কথায়, ‘খুব কঠিন সময় ছিল সেটা। এই লড়াইও খুব কষ্টের ছিল।’ নোরা আরও জানান, পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে এতটাই কঠিন হতে শুরু করে যে তিনি চিকিৎসকের সাহায্য নিতে বাধ্য হন। কিন্তু হাল ছাড়েননি নোরা। তবে লড়াইয়ের দিন কাটিয়ে সময়ের সঙ্গে নোরার দাবি বলিউডে তার পায়ের নিচের জমি শক্ত করেছেন। ‘রকি হ্যান্ডসাম’, ‘সত্যমেব জয়তে’ বা ‘বাটলা হাউস’-এর মতো সিনেমাতে তার উপস্থিতি দর্শকের নজর কেড়েছে। সম্প্রতি কুনাল খেমু পরিচালিত ‘মাডগাঁও এক্সপ্রেস’ সিনেমাতে দর্শক নোরাকে দেখেছেন। আর হালে মুম্বাইয়ের বস্তি থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড এক্সট্রিম স্পোর্টসজগতে একজন মানুষের যাত্রার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে পরিচালক আদিত্য দত্তর পরবর্তী সিনেমা ‘ক্র্যাক’। ‘ক্র্যাক’ সিনেমায় বিদ্যুৎ জামালের বিপরীতে অভিনয় করেছেন নোরা ফাতেহি।