ফেসবুক বন্ধ থাকায় ই-কমার্স ব্যবসায় ধস প্রথম ১০ দিনেই ক্ষতি ১৪০০ কোটি টাকা

প্রকাশিতঃ জুলাই ৩১, ২০২৪ | ৬:০০ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ই-কমার্স ও ফেসবুকভিত্তিক (এফ-কমার্স) উদ্যোক্তারা। ২৩ জুলাই রাতে দেশে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড এবং ২৮ জুলাই বিকাল ৩টা থেকে মোবাইল ফোনে ফোরজি ইন্টারনেট সেবা চালু হলেও বন্ধ রয়েছে ফেসবুকের ব্যবহার। অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাতের ব্যবসার প্রচারণা ফেসবুকনির্ভর হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অন্তত ৫-৬ লাখ উদ্যোক্তা। শুধু প্রথম ১০ দিনেই ১৪০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। তবে এ ক্ষতি আরও বাড়বে। কারণ, পরবর্তী তিনদিনের হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জানতে চাইলে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘১০ দিনে ক্ষতি অনেক। কারণ, এখানে আছেন ই-কমার্স, এফ-কর্মাস, মার্কেটপ্লেস, ওয়েবসাইট, ডেলিভারি, কুরিয়ারসহ বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা। এ খাতে প্রায় ৫-৬ লাখ উদ্যোক্তা এবং ১৪-১৫ লাখ কর্মী রয়েছেন। সব মিলিয়ে এখানে ২০-২৫ লাখ লোক জড়িত। ১০ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করা গেলেও ফেসবুক বন্ধ রয়েছে। এ খাতে ফেসবুকই একমাত্র মাধ্যম, যেখান থেকে ক্রেতা বেশি আসেন। আর তাই যত দ্রুত সম্ভব ফেসবুক চালু করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, এখানে ৯০ শতাংশই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তারা ফেসবুক থেকেই বেশি ব্যবসা পান। আর ১৭ হাজারের মতো উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। সব মিলিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ পেলেও ফেসবুক ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করা তাদের জন্য দুরূহ হয়ে উঠছে। তবে আশার কথা, তারা ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ায় অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ায় চালানো বিজ্ঞাপনগুলো বন্ধ করতে পেরেছে। এতে তাদের কিছুটা হলেও ক্ষতি কমেছে। ফেসবুকভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) ট্রাস্টের সভাপতি ও ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আকতার নিশা বলেন, বর্তমানে উই-এর ফেসবুক গ্রুপে ১৪ লাখের বেশি নারী যুক্ত রয়েছেন, যাদের ৫ লাখই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, ই-কমার্স এফ-কমার্সসহ সব ধরনের মাধ্যমে প্রতিদিন ৮০-১০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রথম ১০ দিনেই ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বাকি তিনদিনের হিসাব যোগ করলে ক্ষতির অঙ্ক অনেক বেড়ে যাবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ফেসবুকে ব্যবাসায়িক বিনিয়োগের অঙ্ক ৩৬২ কোটি টাকা। ফেসবুক কমার্স ব্যবসায়ীর বেশির ভাগ তরুণ। মোট উদ্যোক্তার ৫০ শতাংশ নারী। ফেসবুক কমার্স সম্পর্কিত ফেসবুক পেজের সংখ্যা ৩ লাখের ওপরে। উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ই-কমার্সের চেয়ে দেশে ইন্টারনেট তথা সোশ্যাল মিডিয়ানির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক বেড়েছে। সরকারিভাবে এ উদ্যোক্তাদের প্রমোশনও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কেবল নারী উদ্যোক্তারাই প্রতিদিন হারাচ্ছেন ৬০ কোটি টাকার বাজার। ই-কমার্স মিলিয়ে এই ক্ষতির অঙ্ক শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তবে ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়বদ্ধতার অধীনে আনতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষভাবে হাত বাড়িয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উই। সংস্থাটির সদস্যদের বিকল্প প্ল্যাটফরম হিসাবে উই হাটবাজার এবং দারাজ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হচ্ছে। এক উদ্যোক্তা জানান, ‘আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ছয়-সাত হাজার অর্ডার পেয়ে থাকি। ইন্টারনেট না থাকার কারণে সেটা নেমে এসেছে দুই হাজারে, যা কল সেন্টারের মাধ্যমে গ্রহণ করেছি। বেশির ভাগ অর্ডার আসে মূলত ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এখন যত দ্রুত সবকিছুর সমাধান হয়, ততই ভালো।’ অপর এক উদ্যোক্তা বলেন, ‘অসংখ্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হোলসেল প্লাসের মাধ্যমে চীন থেকে পণ্য কিনে নিজেদের ওয়েবসাইটে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু ফেসবুক চালু না থাকায় তারা পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের, যার প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর পড়তে পারে।’ প্রসঙ্গত, ছাত্রদের কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশে ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার।