গণমিছিলে সংঘর্ষে নিহত দুই

প্রকাশিতঃ অগাস্ট ৩, ২০২৪ | ৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালনকালে শুক্রবার মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল চলাকালে বাধা দিলে কোথাও পুলিশের সঙ্গে, কোথাও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে ঢাকার উত্তরা, হবিগঞ্জ, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, নরসিংদী, সিলেট, কুমিল্লার দাউদকান্দিতে হামলা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় দুজন নিহত এবং অর্ধশত গুলিবিদ্ধসহ দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। ৫ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে খুলনা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। এ সময় মিছিলকারীদের পিটুনিতে সুমন কুমার ঘরামী নামে পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। হবিগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন পথচারী পিডিবির অস্থায়ী কর্মচারী মোস্তাক মিয়া। আন্দোলনকারীরা হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ-সদস্য আবু জাহিরের বাসায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ও ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। সিলেটে এক শিশু গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দুদফা সংঘর্ষ চলাকালে দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ সিটি এসবির একজন এসআইসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। মিরপুর ১০ ও ২ নম্বর এবং ইসিবি চত্বরে কয়েকশ শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। এসময় উত্তেজনা দেখা দেয়। সায়েন্স ল্যাবেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে পুলিশের উপস্থিতিতে দেখা দেয় উত্তেজনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গণমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ছাত্র-জনতা। জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে গণমিছিল বের করে প্রেস ক্লাব হয়ে শাহবাগে গিয়ে অবস্থান নেন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য আন্দোলনকারীরাও যোগ দেন। আন্দোলনকারীদের কয়েকজন প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানের (এপিসি) ওপর উঠে উল্লাস করেন ও লাল রং দিয়ে ‘ভুয়া ভুয়া’ লিখে দেন। তারপর মিছিল নিয়ে তারা প্রেস ক্লাব থেকে সায়েন্স ল্যাবের দিকে যান। এদিকে, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ‘দ্রোহযাত্রা’ কর্মসূচিতেও অংশ নেন শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ নাগরিক সমাজের হাজার হাজার মানুষ। এছাড়া আইনজীবী, চিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, আলেম-ওলামা, শ্রমিক, অভিভাবক, কবি-সাহিত্যিকও সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেন। দ্রোহযাত্রা প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এ সময় তারা গান-কবিতা-পথনাটক পরিবেশন করেন। কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীসহ সব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা হত্যার দায় নিয়ে সরকারেরও পদত্যাগের দাবি জানান। রণক্ষেত্র উত্তরা, গুলিবিদ্ধ ২ : বিকালে উত্তরার জমজম টাওয়ারসংলগ্ন মাইলস্টোন কলেজের সামনের সড়কে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পালটাধাওয়া হয়েছে। এ সময় দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানান, বিকাল ৪টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজের সামনের গাউসুল আজম অ্যাভিনিউ সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলে এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক ছাত্রীর গলা চেপে ধরে কাউসার হোসেন সজিব নামের উত্তরা পশ্চিম থানা ছাত্রলীগের এক নেতা। এ ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এর আগে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফুর রহমানের নেতৃত্বে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর মসজিদের সামনে অবস্থান নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী। ছাত্রদের সঙ্গে হট্টগোলের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে এ সময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেক্টরের ৮ ও ৯ নম্বর রোডে ঢুকে আশপাশের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়েও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অংশ নেওয়া ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হাতে রামদা, লোহার পাইপসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, দুজন গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের নাম জানতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। এর আগে সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। রাজধানীর উত্তরায় সংঘর্ষে নিহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মির্জা সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়েছে সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি এসব দৃশ্য এই এলাকারই নয়। এডিসি সালাউদ্দিন বলেন, আজকের ঘটনায় আমাদের ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাশেদুল ইসলাম নামে একজন সাব ইনস্পেকটর গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পেয়েছেন। এছাড়া এক ব্যক্তি উপর থেকে ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। এর মাঝে অনেকেই গুলিবিদ্ধ। পুলিশ শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। দুপুর সোয়া ২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। নিহত ব্যক্তির নাম মোস্তাক মিয়া (২৮)। তিনি পিডিবির অস্থায়ী কর্মচারী ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শামছুল হক জানান, মৃত্যুর বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। ইট-পাটকেলে আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদের প্রকৃত সংখ্যা আমরা এখনও পাইনি। সদর আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোমিন উদ্দিন চৌধুরী মোশতাক মিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত মোশতাক মিয়ার পরিবারকে জানানো হয়েছে। তিনি জানান, নিহত ব্যক্তির ডান দিকের পিঠে এবং ডান হাতে গুলির আঘাত রয়েছে। জানা গেছে, বাদ জুমা শহরের কোর্ট মসজিদ চত্বর ও শহরের অপর প্রান্তে খোয়াই নদীর তীরে নূরুল হেরা জামে মসজিদের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এ সময় সাইফুর রহমান টাউন হলের সামনে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। বেলা আড়াইটার দিকে নূরুল হেরা জামে মসজিদের সামনে থেকে মিছিল বের হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পালটাধাওয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কোর্ট মসজিদের সামনে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরা এসে তাদের ধাওয়া দেন। তখন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরের বাসার সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন। আন্দোলনকারীরা হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ-সদস্য আবু জাহিরের বাসায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। নিমিষেই শহরের দখল নেন আন্দোলনকারীরা। পরে বিকাল সোয়া ৪টায় পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। তারা রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ চলাকালে তিনকোণা পুকুরপাড় এলাকায় মোশতাক মিয়া (২৮) নামের এক পিডিবির অস্থায়ী কর্মচারী আহত হন। তাকে সদর আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। তিনি সিলেট জেলার টুকেরবাজার এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। সিলেটে গুলিবিদ্ধ এক শিশু, আহত অর্ধশতাধিক : সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল কর্মসূচিকে ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে আখালিয়া, মদিনা মার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় মিছিলে থাকা এক শিশুসহ অন্তত ৫০ জন শটগানের গুলিতে আহত হন। সংঘর্ষে পুলিশকে টিয়ারশেল, শটগানের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। আন্দোলনকারীরা পালটা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। সংঘর্ষ চলাকালে ১১ জনকে আটক করে পুলিশ ভ্যানে তুলতে দেখা গেছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা ৩টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে নগরীর সুরমা আবাসিক এলাকায় অবস্থান নেন কয়েকশ ছাত্র-জনতা। বিপুল পরিমাণ পুলিশ সুরমা গেটের দুদিকে আখালিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। সুরমা গেট এলাকা থেকে গণমিছিল শুরু হলে পুলিশ পিছু নেয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। মিছিল নিয়ে শহরের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ প্রথমে বাধা দেয়। পরে বাধা উপেক্ষা করে মিছিল সামনের দিকে এগোতে থাকে। পুলিশও পিছু নেয়। মিছিলটি আখালিয়া বিজিবি ক্যাম্প পার হতেই মদিনা মার্কেট এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সামনের দিক থেকে আসতে থাকে। মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের কিছু আগে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ। মিছিলকারীরাও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে দুদিক থেকে পুলিশ আক্রমণ করলে বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেন মিছিলকারীরা। বিভিন্ন গলি থেকেই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন ছাত্রজনতা। পুলিশও টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় আখালিয়া নয়াবাজারের গলি থেকে মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। পুলিশও তাদের ধাওয়া করে টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি নিক্ষেপ করে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। এ সময় পাশের ড্রেনে পড়ে থাকা মনাফ নামের ১০ বছরের শিশুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাঁধে নিয়ে আসতে দেখা যায় এক পুলিশ সদস্যকে। তার গলায় ও বুকে শটগানের গুলি লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। আরও দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ তিনজনের অবস্থাই স্থিতিশীল। চট্টগ্রামে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিল, ভাঙচুর : চট্টগ্রামে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষও। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে নগরীর কোতোয়ালি থানার আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ থেকে মিছিলটি শুরু হয়। শুরুতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও একপর্যায়ে পিছু হটে পুলিশ। মিছিলটি আন্দরকিল্লা হয়ে বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা একাধিক পুলিশ বক্স ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নামফলক ভাঙচুর করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। জুমার আগে আন্দরকিল্লা মসজিদের আশপাশে অবস্থান নেন বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যদের সেখানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। নামাজের পরপর বৃষ্টি শুরু হলেও মিছিল নিয়ে লালদীঘি ময়দান হয়ে নিউমার্কেট মোড়ের দিকে যান তারা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট মোড়ে পৌঁছে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান নেন। ততক্ষণে সমাবেশটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে আশপাশের এলাকা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে টাইগারপাস অবস্থান নেন তারা। এ সময় প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়কের উভয়দিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপর একটি অংশ নগরীর টাইগারপাস এলাকা থেকে কর্মসূচি শেষ করলেও অপর একটি অংশ বহদ্দারহাট পর্যন্ত মিছিল নিয়ে যেতে দেখা যায়। এদিকে কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব রুখতে চট্টগ্রাম মহানগর-উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। জুমার নামাজ শেষে চকবাজার থানার পল্টন রোডে অবস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনের সামনে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। তবে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় নেতাকর্মীরা সেখান থেকে সরে যান। খুলশী থানার ওসি (তদন্ত) মো. নুরুল বাসার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ জাদুঘরের নামফলক তুলে ফেলেছে।’ পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় মুরাদপুর ট্রাফিক বক্সে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করেছে। পরে তারা বহদ্দারহাট এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেয়। এর বাইরেও অন্য কোথাও ক্ষয়ক্ষতি করেছে কিনা খবর নেওয়া হচ্ছে।’ কালীগঞ্জে পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ৫ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গণপদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এসময় পুলিশের লাঠির আঘাতে পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পুলিশ পাঁচ ছাত্রকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এরপর তাদের অভিভাবকদের থানায় ডেকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা জানান, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শহরের সরকারি মাহতাবউদ্দিন কলেজ মাঠে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এসময় পুলিশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এসময় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পুলিশের লাঠির আঘাতে পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পুলিশ পাঁচজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। পরে তারা শহরের নলডাঙ্গা ভ্যানস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এসময় বক্তারা আটক শিক্ষার্থীদের ১২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তির আলটিমেটাম দেন। দাউদকান্দিতে ৫ শিক্ষার্থী আহত : কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ঢাকা-চটগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বাদ জুম্মা দাউদকান্দি মডেল মসজিদসংলগ্ন বিশ্বরোড থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ঢাকা-চটগ্রাম মহাসড়কের বিশ্বরোড থেকে শুরু করে বলদাখাল হয়ে পুনরায় বিশ্বরোড এলাকায় এসে মহাসড়ক ঘেরাও করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এসময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়ায় ৪-৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন নুসরাত, শাহনাজ, ইমন। তাৎক্ষণিকভাবে অন্যদের নাম জানা যায়নি। লক্ষ্মীপুর শহরে সংঘর্ষে আহত ১৫ : লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এসময় উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিক কারও নাম পরিচয় জানা যায়নি। আহতরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা যায়। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের তমিজ মার্কেট এলাকার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর শহরের বাসার সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। লক্ষ্মীপুরে শটগান হাতে চেয়ারম্যানের গাড়িচালক : লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গণমিছিলে ধাওয়া করে লাঠিসোঁটা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনা ঘটেছে। এসময় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর গাড়িচালক রাসেল শটগান নিয়ে অন্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন। তার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক চেয়ারম্যানের এক শুভাকাক্সক্ষী জানিয়েছেন, অস্ত্রটি উপজেলা চেয়ারম্যানের নামে লাইসেন্সকৃত। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের তমিজ মার্কেট এলাকায় টিপুর বাসায় ইটপাটকেল ছুড়লে শিক্ষার্থীদেরকে ধাওয়া করে পিটিয়ে আহত করে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জুমার নামাজ শেষে চকবাজার এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান টিপু নেতাকর্মীদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে অবস্থান নেন। তখন তারা শিক্ষার্থীসহ মুসল্লিদের ধাওয়া করেন। ঘটনার সময় চেয়ারম্যানের সরকারি গাড়িটি মসজিদের সামনেই ছিল। সেখান থেকে গাড়িটি তার বাসভবন তমিজ মার্কেট এলাকায় নিয়ে রাখা হয়। সেখানে গাড়িচালক রাসেল অস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের পেছনে ধাওয়া করেছে। নরসিংদীতে শিক্ষার্থী-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে আহত ৬ : সাড়ে ৩টার দিকে প্রথমে শহরের অরশিনগর এলাকায় জমায়েত হন শিক্ষার্থীরা। পরে অ্যাডভোকেট শিরিন সুলতানার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা উপজেলা মোড়ে আসেন। ওই সময় তাদের বাধা দেন মহিলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। স্থানীয়রা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আগে থেকেই লাঠিসোঁটা নিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হয়। এতে গোলাম রাশেদ তমালসহ ছয় শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে জমায়েত হন আন্দোলনকারীরা। রামগঞ্জে আ.লীগ-ছাত্রলীগের হামলায় আহত ১২ : রামগঞ্জে পৌর ট্রাফিক পুলিশ বক্স চত্বরের সামনে বিকাল ৫টার দিকে গণমিছিলে হামলা করেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অতর্কিত এ হামলায় ডেইলি নিউ এজ’র লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি মো. ফারুক হোসেন, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাহাত, আতিকুর রহমান শাকিব ও শিক্ষার্থী নেছার আহম্মেদসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। দাউদকান্দিতে গণমিছিলে পুলিশের বাধা : জুমার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি বিশ্বরোড থেকে গণমিছিল শুরু করে শিক্ষার্থী-জনতা। মিছিলটি টোলপ্লাজা হয়ে বলদাখাল ইউটার্ন পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশের বাধায় মিছিলটি আবারও বিশ্বরোডে চলে আসে। সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিছিলকারীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীসহ অন্যরা ভুয়া ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। যশোরে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিছিল : বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে যশোর শহরতলীর পালবাড়ি মোড় থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অভিভাবকরাও। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দড়াটানাতে কর্মসূচি শেষ করেন তারা। মিছিলের শেষের দিকে শহরের দড়াটানায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্যানা বিলবোর্ড ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা বিএনপি।