কুষ্টিয়ার আলোচিত সেই আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে এনআইডি ও জমি জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতি করে অন্যের জমি বেচাকেনা ও দখল চেষ্টার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রবিউলসহ ৩৫ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডি। মঙ্গলবার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করেছেন বলে নিশ্চিত করেন ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া সিআইডির অতি: বিশেষ পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, তদন্তে ৪১ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের বিষয়টি দুদকের শিডিউলভুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আদালতকে অবহিত করেছি। মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আ.লীগ নেতা রবিউল, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা আশরাফুজ্জামান সুজন, জালিয়াতির ঘটনায় সরাসরি অংশ নেওয়া জাহানারা বেগম, আজেরা খাতুন, পিঞ্জিরা খাতুন ও আমির হোসেন। মামলায় রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে অভিযুক্ত আ.লীগ নেতা রবিউল বলেন, এ মামলার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। যেহেতু পুলিশ মামলায় চার্জশিট দিয়েছে, আমি আদালতে মোকাবিলা করব। মামলার বাদী এমএম ওয়াদুদ বলেন, প্রায় চার বছর লেগেছে মামলার চার্জশিট দিতে। চার্জশিটে কী বলা হয়েছে তা এখনো দেখিনি, তাই এখনই মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে আসে অভিযুক্ত প্রতারক চক্রের খবর। চক্রটি কুষ্টিয়ার মজমপুর মৌজার প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের ২২ শতক জমির ভুয়া মালিক সেজে মাত্র ৭৭ লাখ টাকায় একজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। চক্রটি পরিবারের সবার ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে রাতারাতি অন্যের জমির মালিক বনে যান। ওই জমির প্রকৃত মালিক শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা এমএম ওয়াদুদ ও তার শরিকরা। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর ওয়াদুদ প্রতারক চক্রের ১৮ সদস্যের নাম উলেখ করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় উঠে আসে আ. লীগ নেতা রবিউলের নাম। জমা দেওয়া অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, সাক্ষীদের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি এবং ১৫ জন আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে ৪১ জনের অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা রবিউল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। দুদক কর্মকর্তারা জানান, রবিউল এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। তাদের সম্পদের একটি হিসাব আমাদের হাতে আছে। তার দাখিল করা সম্পদের হিসাব মিলিয়ে দেখা হবে। এছাড়া জেলা পরিষদে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে।