দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম দুষ্ট ক্ষত খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি। এ সমস্যা দেশের অর্থনীতিতে কী ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করেছে তা বহুল আলোচিত। অতীতে নানা উদ্যোগ গ্রহণের পরও এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুফল মেলেনি। এমনকি নানা ধরনের ছাড় দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক; বরং দিনদিন তা বেড়েছে। জানা যায়, খেলাপি ঋণের হার কমাতে ও আদায় বাড়াতে ব্যাংকগুলোর আইন বিভাগ বা লিগ্যাল টিমকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়ে দায়ের করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলে খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না। মামলার জালে অনেক খেলাপি ঋণ আটকে রয়েছে। খেলাপি ঋণের হার কমাতে ও আদায় বাড়াতে ব্যাংকগুলোয় আদালতে দায়ের করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করে ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়ে দায়ের করা মামলার অনুপাতে প্রয়োজন অনুযায়ী আইন বিভাগে দক্ষ জনবল নিয়োগ করা দরকার। একই সঙ্গে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া দরকার। অতীতে লক্ষ করা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের আদায় বাড়াতে এবং নতুন ঋণখেলাপি হওয়া ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পর আবার ছাড় দিয়েছে। ধারণা করা যায়, বড় ঋণখেলাপিদের পক্ষে রাজনৈতিক চাপেই নেওয়া হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঋণখেলাপির ঝুঁকি কমাতে দরকার জোরালো পদক্ষেপ। কারণ নামমাত্র পদক্ষেপগুলোকে ঋণখেলাপিরা তেমন আমলে নেন না। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির কারণে ব্যাংক খাত ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যাংকে সুশাসনের অভাবে মন্দ ঋণের পাশাপাশি অর্থ পাচারও বাড়ছে। খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করেছে। কাজেই ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে শৈথিল্য প্রদর্শন করা উচিত হবে না। দেশে ব্যাংক খাতের এক বড় সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতি রোধে এ খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা দরকার। শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে এ খাতে অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে খেলাপি ঋণ আদায়ে যা যা করণীয়, সবই করতে হবে।