কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকার উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় ১৯ জুলাই বিকালে গুলিবিদ্ধ হন রাকিব (২২)। তার ডান কানের উপর দিয়ে গুলি ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে মস্তিষ্কের কিছু অংশসহ বেরিয়ে যায়। আরেকটি গুলি মাথাতেই আটকে থাকে। এ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উত্তরা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আগারগাঁও নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে ভাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংবাদে হাসপাতালে যাওয়ার সময় পথে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয় বড় ভাই সাকিবকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখনো হেঁটে কখনো দৌড়ে আবার রিকশায় অবশেষে হাসপাতালে পৌঁছলেও ভাইকে আর জীবিত দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপ তার। এ হাসপাতালে রাকিবকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ২২ জুলাই দুপুরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ নিয়ে আসা হয় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুরে নিজ বাড়িতে। পরদিন পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। চোখের পানি মুছতে মুছতে সাকিব বলেন, দুই ভাই মিলে উপার্জন করে অনেক কষ্ট করে মাত্র সংসারের হাল ধরেছি। ভেবেছিলাম মায়ের কষ্ট দূর করব। তা আর হলো না। তিনি জানান, তাদের দুভাইয়ের বন্ধন খুব মজবুত ছিল। মায়ের পাশে থাকতে চাকরি ছেড়ে এখন সস্ত্রীক গ্রামের বাড়ি চলে এসেছেন। নিহতের গ্রামের বাড়ি সন্তোষপুরে শুক্রবার বিকালে গিয়ে দেখা যায়, পুরো পরিবারে শোকের মাতম চলছে। কাঁদতে কাঁদতে সবাই পাগলপ্রায়। প্রতিবেশী ও স্বজনরা বাড়িতে এসে তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। রাকিবের বড় ভাইয়ের স্ত্রী পোশাককর্মী শারমিন আক্তার বলেন, ওইদিন সকালে রাকিব ফোন করে আমাদের সচেতন করছে-ভাবি, বাসা থেকে বের হবেন না। রাস্তায় অনেক সমস্যা। ভাইকেও সাবধানে থাকতে বলবেন। পরে রাতেই খবর আসে রাকিব গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। জানা যায়, রাকিব তার মায়ের কষ্ট দেখে লেখাপড়া বাদ ৫ বছর আগে ঢাকায় চলে যান। উত্তরা সিকদার মার্কেট এলাকা ও দিয়াবাড়িতে থাকা দুটি ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার হিসাবে কাজ করতেন। সেদিন উত্তরা থেকে দিয়াবাড়ী যাওয়ার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। মা জোসনা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার পোলা (ছেলে) তো ছাত্র না, ও তো কোনো আন্দোলনও করেনি তাহলে ওরে কেন মারল। ওর কী দোষ? তিনি বলেন, আমার ছেলে খালি বলত আম্মা তুমি কোনো চিন্তা কইরো না, তোমার কোনো চিন্তা নাই। আল্লাহ দিলে আর কোনো কষ্টই থাকব না। আমি এ কাজের পাশাপাশি গাড়ি চালানো শিখেছি। ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে দিছি। লাইসেন্স হয়ে গেলে বেশি টাকা কামাই করমু। তোমাকে আমার কাছে নিয়া আসমু। জোসনা খাতুন আর্তনাদ করে আরও বলেন, মাস শেষ হয়েছে, ছেলে আমার মাস শেষ হলেই দোকানের বাকি পরিশোধে টাকা পাঠাইত। এ মাসে কে টাকা পাঠাইব? রাকিব তো আমার সঙ্গে একদিন মোবাইলে কথা না কবার পারলেই পাগল হয়ে যেত। এখন তো আমার কেউ খোঁজ নেয় না। আমার ছেলের অনেক স্বপ্ন ছিল। এই স্বপ্ন কাইড়া নিল কেডা? আমি এর বিচার চাই। প্রতিবেশীরা জানান, রাকিবের বাবা দুই ছেলে, দুই মেয়ে রেখে মারা যান। পরে তার মা গার্মেন্টে চাকরি করে অনেক কষ্টে সন্তানদের লালনপালন করেন। সরকারি ভাবে অসহায় এ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানান তারা।