বিপুর মাফিয়া সিন্ডিকেট

প্রকাশিতঃ অগাস্ট ২২, ২০২৪ | ৯:১৩ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে চলেছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। এর মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এসব ঘটনাকে লুটপাটের মহোৎসব হিসাবে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব অপকর্মের নেপথ্যে ছিল একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট। এক যুগ ধরে এর (সিন্ডিকেট) নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসে সব অপকর্মকে নির্বিঘ্ন করতে যারা কলকাঠি নাড়তেন, তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমেদ কায়কাউস। নিজস্ব অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া থেকে শুরু করে অনুমোদন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টি ধাপে ওই সিন্ডিকেটকে টাকা দিতে হতো। এর মধ্যে ছিল প্ল্যানিং, সাইট ভিজিট, মেশিনপত্র অনুমোদন দেওয়া, নেগোসিয়েশন, প্রকল্পের সাইট সিলেকশন, মাটি ভরাট, জমি ক্রয়, বিদ্যুৎ ক্রয়ের দরদাম ঠিক করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা বা কমিশনিং, মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানো, ক্রয় অনুমোদন, বিল অনুমোদন, বিল ছাড় করা-অর্থাৎ প্রতিটি খাতে এ সিন্ডকেটকে টাকা দিতে হতো। এছাড়া পিডিবি চেয়ারম্যান কিংবা মন্ত্রী স্বাক্ষর করলে সেই স্বাক্ষরের পাশে সিল দেওয়ার জন্যও ঘুস দিতে হতো। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন কোম্পানির নানা কেনাকাটা এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পারচেজসহ লোভনীয় কমিটিতে পছন্দের কর্মকর্তাদের রাখা, পদোন্নতি, পোস্টিং দিয়েও এ চক্র হাতিয়ে নিত কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা পর্যদে যাওয়ার জন্যও এ সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা। এছাড়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে নিজস্ব লোকদের দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্ট করিয়ে প্রকল্পের পিডি বা কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য ছিলেন পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানসহ সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও একাধিক প্রধান প্রকৌশলী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন, প্রতিমন্ত্রীর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু এবং সাবেক সেতুমন্ত্রীর এক ভাতিজা। আর সিন্ডিকেটের অবৈধ আয়ের হিসাবনিকাশের দায়িত্বে ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস মুজাহিদুল ইসলাম মামুন, কেরানীগঞ্জের প্রভাবশালী শাহীন চেয়ারম্যান এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আসলাম। তারা সবার ক্যাসিয়ার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পাশাপাশি নানা কাজের মূল কারিগর ছিলেন পিডিবির বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের বিভিন্ন স্তরের নেতা। আলোচ্য সময়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ১০০টির বেশি কোম্পানির পকেটে ঢুকেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। আরও জানা যায়, দুর্নীতির নানা পরিকল্পনা যারা তৈরি করতেন অর্থাৎ পিডিবির বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতাদের জন্য খোদ পিডিবিতে রয়েছে আলাদা একটি অফিস। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত চলত অবৈধ কর্মকাণ্ড ও লেনদেন। ওই রুম থেকে পরিচালনা হতো অফিসারদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং আর পদোন্নতি বাণিজ্য। হাতবদল হতো শত শত কোটি টাকা। ক্ষমতায় থাকাকালীন সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়েছেন সামিট গ্রুপকে। আর এ কারণেই পুরস্কার হিসাবে অবসরের পর তিনি মুখ্য অ্যাডভাইজারের চাকরি পান সামিটে। আবুল কালাম আজাদ সামিট গ্রুপের অ্যাডভাইজার থাকাকালীন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সঙ্গে বিরোধে জড়ান। তার ক্ষমতার দাপটে বিদ্যুতের দাম বেশি দেখিয়ে সামিট গ্রুপ আরইবির কাছে থেকে ১২শ কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নেন। এ নিয়ে মামলা হয়। মামলায় আরইবি জয়ী হলেও আবুল কালাম আজাদের ক্ষমতার দাপটে সামিট গ্রুপ এই টাকা দিচ্ছে না। জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন প্রজন্মের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আওয়ামী লীগের দলীয় থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর রিসার্চ ইনফরমেশন বা সিআরআই-এর পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন। শেখ হাসিনার জীবনের ওপর নির্মিত “হাসিনা : এ ডটার’স টেল” তথ্যচিত্রটির একজন প্রযোজকও ছিলেন বিপু। সংশ্লিষ্টদের অভিমত-বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে কৃতিত্বের দাবিদার আওয়ামী লীগ সরকার ও নসরুল হামিদ বিপু। তবে সরকারের এই সাফল্য ম্লান হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে। পরিবারের লোকজন ছাড়াও এ সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন তার সাবেক একান্ত সচিব (পিএস) রোকন উল হাসান, সেলিম মোল্লা, পিডিবির সাবেক দুই চেয়ারম্যান আলমগীর কবির ও খালিদ মাহমুদ। এছাড়া সাবেক আইপিপি সেলের প্রধান ও পিডিবির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া, বাংলাদেশ চায়না মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম, পিজিসিবির সাবেক এমডি মাসুদ আল বিরুনী। এছাড়া পিডিবির বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সাবেক সভাপতি এবিএম সিদ্দিক, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি রায় ও ক্রয় বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ। তারা সবাই মিলে বিদ্যুৎ আর আইটি সেক্টরে গড়ে তুলেছিলেন একটি শক্তিশালী মাফিয়া সিন্ডিকেট। আর হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ। জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘১৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে। বিশেষ আইনের কারণে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা হয়নি। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার হতে হবে। নতুন সরকার এসেছে। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। ফলে এ খাতে নীতি ও কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে হবে। আর না হলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব না। তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে ১৪ বছরে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও আইপিপি (ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার) কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে দেওয়া হয়েছে ৮৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। গত জুলাইয়ে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ১৪ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে সরকার ৯০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে। ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাব যোগ করলে তা ১ লাখ কোটি টাকার বেশি হবে। সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে শেষ দুই মেয়াদে তার প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন আবাসন ব্যবসায়ী নসরুল হামিদ বিপু। সংশ্লিষ্টরা জানান, যোগ্যতা বিবেচনা না করেই তিনি নিজের পছন্দের লোকজনকে বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে বসিয়েছেন। এর সর্বশেষ উদাহরণ পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান। বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করা এ কর্মকর্তা নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই পিডিবির সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে দুর্নীতি। চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বাগিয়ে নেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। তিনি এতটাই শক্তিশালী যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরও আছেন বহাল তবিয়তে। বিগত সরকারের চুক্তিভিত্তিক সব কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তিনি সর্বোচ্চ দাপট নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নসরুল হামিদকে অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে রক্ষার জন্যই মূলত মাহবুবুর রহমানকে অদৃশ্য প্রভাবে বহাল রাখা হয়েছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে রেন্টাল, কুইক রেন্টালসহ যত প্রকল্প হয়েছে সেগুলোর রিভিউ করার কাজ। সংশ্লিষ্টরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এই সুযোগে মাহবুবুর রহমান বিদ্যুৎ খাতের সব অনিয়ম-দুর্নীতি জায়েজ করে ফেলতে পারেন। বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ডের তদন্ত করা হলে এ খাতের বড় বড় অনিয়ম ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমদ কায়কাউসও বড় বড় অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ দুজনই পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। আর তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বসে সব কলকাঠি নাড়তেন। পিডিবির তথ্যানুযায়ী, ১৪ বছরে বেসরকারি খাতে প্রায় ১০০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সব কেন্দ্রই কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংক্রান্ত বিশেষ আইনে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১০ সাল থেকে অনুমোদন দেওয়া ছোট-বড় এসব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটো দায়মুক্তি আইন পাশ করে বিচারের পথ রুদ্ধ করেছে সরকার। যদিও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের নতুন উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, এ বিশেষ আইনটি স্থগিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাতিল করা হয়নি। এ আইনে এখন থেকে আর কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে না। তবে এ আইনের অধীনে অতীতে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে গেছে, সেগুলো চলমান থাকবে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন অতীতে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেগুলো রিভিউ করা হবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, নসরুল হামিদের ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু এবং সেতুমন্ত্রীর এক ভাতিজা মিলে অন্তত ৪টি কোম্পানির মাধ্যমে ৫ বছরে বাগিয়ে নিয়েছেন ৮ হাজার কোটি টাকার কাজ। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সব খাতে ব্যাপক ওলটপালট হলেও বিদ্যুৎ সেক্টর থেকে এই ভূত এখনো দূর হয়নি। অভিযোগ আছে, শুধু আইটি সেক্টরে তারা বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ১২টি বড় মেগা প্রকল্প। জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ঢাকা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) থেকে অ্যাডভান্সড মিটারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এএমআই) নামের ২টি প্রকল্প হাতিয়ে নেয়। এ দুটি প্রকল্পের অর্থমূল্য ছিল ২০০০ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২১-২০২২ অর্থবছরে একই কোম্পানি মোবাইল অ্যাপস অ্যান্ড কাস্টমার পোর্টাল প্রতিষ্ঠার নামে ডিপিডিসির কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় আরও একটি বড় মেগা প্রকল্প। এ প্রকল্পটির ব্যয় মূল্য ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া গত ৫ অর্থবছরে নসরুল হামিদ বিপুর ভাই একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিলিং প্রকল্পের নামে ডিপিডিসি, নেসকো, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি), ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) থেকে প্রায় ৭টি মেগা প্রকল্প হাতিয়ে নেয়। প্রকল্পগুলোর মোট মূল্য ছিল ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। অপরদিকে ডেটা সেন্টার স্থাপনের নামে বিদ্যুৎ খাতের এ ৬ কোম্পানি থেকে তারা দুটি বড় টেক কোম্পানির মাধ্যমে হাতিয়ে নেন ৮টি মেগা প্রকল্প। শুধু তাই নয়, নসরুল হামিদ বিপুর ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার ছোট ভাই একটি কোম্পানির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিকিউরিটি নামে ৮টি মেগা প্রকল্প হাতিয়ে নেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ১ জুন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আরইবির কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৫০ লাখ মিটার স্থাপনের কাজ। এই প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। জাপানের মারুবেনি করপোরেশন, ডাচ-সুইস জ্বালানি কোম্পানি ভিটল এবং পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কোম্পানির একটি যৌথ ব্যবসায়িক জোট বা কনসোর্টিয়াম কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশের বৃহত্তম এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পায়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে ৩০৫ মিলিয়ন ডলার বা আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটি নির্মাণে কার্যাদেশ পায় এ কনসোর্টিয়াম। যদিও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ আছে, এই পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিটির বেশির ভাগ মালিকানায় ছিল নসরুল হামিদ বিপুর পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজন। কোম্পানিটি সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশে নিবন্ধিত। প্রতিমন্ত্রীর পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হামিদ গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্বাহীরাই পাওয়ারকোর হর্তাকর্তা। একসময় নসরুল হামিদ নিজেই হামিদ গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পারিবারিক এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করে। এর কয়েকটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবেও ছিলেন বিপু। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর বিপুল পরিমাণ শেয়ারের মালিক তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা। সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের ব্যবসা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানে দাখিলকৃত নথিপত্র অনুযায়ী, পাওয়ারকোর প্রধান শেয়ারধারী হলেন কামরুজ্জামান চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। তিনি হলেন নসরুল হামিদ বিপুর আপন মামা। কামরুজ্জামান চৌধুরী নিজেও দীর্ঘদিন হামিদ গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার ছেলে, ভাই ও ভাইয়ের ছেলেরা হামিদ গ্রুপের শীর্ষ নির্বাহী হিসাবে কাজ করেছেন ও করছেন। সিঙ্গাপুরে দাখিলকৃত নথিপত্র অনুযায়ী পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনালের একজন বিকল্প পরিচালক হলেন মুরাদ হাসান। পাশাপাশি তিনি কোম্পানিটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা বা সিওও হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, পাওয়ারকোর সিওও হিসাবে তিনি বিপিসির সঙ্গে সরাসরি মাতারবাড়ী এলপিজি টার্মিনাল প্রকল্পের দরকষাকষিতে অংশ নিয়েছিলেন। এই মুরাদ হাসানই আবার ‘ডেলকো বিজনেস অ্যাসোসিয়েট’ নামে হামিদ গ্রুপের একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও ছিলেন। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় নসরুল হামিদ নির্বাচনি হলফনামায় জানান, তিনি নিজেই ডেলকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সেসময় তিনি কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারেরও মালিক ছিলেন। বর্তমানে ডেলকোর মালিকানা তার ছেলে জারিফ হামিদ ও ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদের হাতে। বিপুর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ নিজেও হামিদ গ্রুপের একাধিক অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই ইন্তেখাবুল হামিদের সঙ্গে পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবিল খানের সংযোগ রয়েছে। এই ভারতীয় নাগরিক দুবাইভিত্তিক একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি শিপিং লাইনের মধ্যপ্রাচ্য শাখা পরিচালনা করেন। পাওয়ারকোর সঙ্গে জড়িত আরেক ব্যক্তি হলেন কোম্পানিটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক তারেক খলিল উল্লাহ, যিনি দীর্ঘদিন হামিদ গ্রুপে কর্মরত ছিলেন। তিনি ইন্তেখাবুল হামিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে হামিদ গ্রুপের আরও দুইজন কর্মকর্তা পাওয়ারকো গঠনের সময় আরজেএসসি অফিসে উপস্থিত ছিলেন। কোম্পানি হিসাবে পাওয়ারকোর নিবন্ধনের সময় এ দুইজনকে সাক্ষী হিসাবে রাখা হয়। জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন সাক্ষীর পরিচয়পত্র ও লিংকডইন প্রোফাইল অনুযায়ী তিনি হামিদ গ্রুপের একজন সহকারী ব্যবস্থাপক। সরকারি নথিপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য তিনটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেয়েছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। মারুবেনি-ভিটল-পাওয়ারকো কনসোর্টিয়ামের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে এ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় জাপানের মিতসুই করপোরেশন ও দক্ষিণ কোরিয়ার এসকে গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম এবং জাপানের সুমিতোমো করপোরেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি কনসোর্টিয়াম। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পিডিবি চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন প্রকৌশলী আলমগীর কবীর। এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। মন্ত্রী ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এনামুল কবীর। মূলত তৎকালীন বিদ্যুৎসচিব আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন আর পিডিবি চেয়ারম্যান আলমগীর কবীর সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে তৈরি করা হয় বিশেষ ক্ষমতা আইন। এরপর এ আইনের আওতায় একের পর এক বিদ্যুৎ প্রকল্প (রেন্টাল-কুইক রেন্টাল) হাতে নেয় সিন্ডিকেট। কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়া এসব রেন্টাল আর কুইক রেন্টালের লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয় দেশের প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর কাছে। এর মধ্যে ছিল এস আলম গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, কনফিডেন্স গ্রুপ, ডরিন গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, রিজেন্ট, ইউনিক গ্রুপ, বারাকাসহ অসংখ্য কোম্পানি। বিনিময়ে নিজেদের পাশাপাশি শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন সিন্ডিকেটকে। পুরস্কার হিসাবে অবসরের পর এস আলমের মতো একটি বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসাবে চাকরি বাগিয়ে নেন আলমগীর কবির। আর চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর সামিট গ্রুপের মুখ্য অ্যাডভাইজার হিসাবে চাকরি নেন আবুল কালাম আজাদ। আনোয়ার হোসেন পুরস্কারস্বরূপ সচিব হিসাবে পদোন্নতি পান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। মূলত তারই হাত দিয়ে তৈরি হয় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। যেখানে মোটা অঙ্কের অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে চলে যাওয়ার পর এই মহা দুর্নীতির গডফাদার হিসাবে আবির্ভূত হন আহমেদ কায়কাউস। বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সাবেক একজন সভাপতি ছিলেন তখন কায়কাউসের ডান হাত। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন নসরুল হামিদ বিপু। ২০১৬ সালের আগস্টে পিডিবির চেয়ারম্যান হন খালিদ মাহমুদ। কায়কাউসের নেতৃত্বে তখন বিদ্যুৎ খাতের সব উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়। এরপর তার রুমে বসে একের পর এক কমিশন বাণিজ্য চলত। এই সিন্ডিকেট এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করে। অভিযোগ আছে, সচিব থাকাকালীনও কায়কাউস ইউনাইটেড গ্রুপের কাছ থেকে প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের টাকা মাসোয়ারা পেতেন। জানা যায়, আবুল কালাম আজাদের সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার থেকে তরতর করে খালেদ মাহমুদ চেয়ারম্যান হয়ে যান। পিডিবিকে তিনি মহা দুর্নীতির এক স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলেন। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় রেন্টাল, কুইক রেন্টাল থেকে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা মাসোয়ারা আদায় করার কাজ। তার মূল কাজ ছিল নসরুল হামিদের সঙ্গে থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া, অনুমোদনের জন্য কমিটি করা, কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করা, কেন্দ্রগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করাসহ নানা কাজ। এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে তিনি নসরুল হামিদের জন্য প্রতিমাসে শত শত কোটি টাকা আয় করে দিতেন। বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, নসরুল হামিদ দেশে কোনো লেনদেন করতেন না। তার অধিকাংশ টাকা বিদেশে লেনদেন হতো। পিডিবির আইপিপি সেলের দায়িত্বে ছিলেন প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া। তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশেষ ক্ষমতা আইনে যত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন হয়েছে, সেগুলোর সাইট ভিজিটের দায়িত্বে ছিলেন। মূলত তিনি কেন্দ্রগুলো ভিজিট করে রিপোর্ট দিলেই সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্র অনুমোদন হতো। অভিযোগ আছে, ভাড়াভিত্তিক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, যেগুলোর ভেতরে কোনো ইঞ্জিনই ছিল না। মূলত বিদ্যুৎ না কিনে বসিয়ে বসিয়ে এসব কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ ক্যাপাসিটি চার্জ ভাগবাঁটোয়ারা করে নিয়ে গেছে সিন্ডিকেট। পুরস্কার হিসাবে আহমেদ কায়কাউস তাকে প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে নিয়োগ দেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে নিয়োগ পান পিজিসিবিতে। সেখানে বসেও তিনি ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। পিডিবিতে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ নামে একটি সংগঠন বানিয়ে সেখানে দুর্নীতির আসর বসানো হয়েছিল। এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন ড. এবিএম সিদ্দিক। তার সরকারি রুমের পাশাপাশি তিনি পিডিবিতে আলাদা রুম বরাদ্দ নিয়েছিলেন তদবির আর বিভিন্ন বাণিজ্য করার জন্য। এই রুমে বসে লেনদেন হতো কোটি কোটি টাকা। এই পরিষদের নেতা ছিলেন প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন। তিনিও পিডিবির চিফ ইঞ্জিনিয়ার হন সিন্ডিকেটের সহযোগিতায়। কাজল কান্তি রায় ছিলেন এ পরিষদের সদস্য। ক্রয় বিভাগের পরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। দুজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগের তদন্ত করেনি কমিশন। জানা যায়, নসরুল হামিদ ও মাহবুবুর রহমানের কল্যাণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি দুদক। নসরুল হামিদের শেষ সময়ে পিডিবি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ২৭টি সোলারভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফাইল চূড়ান্ত করেন। এগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৩৬০ মেগাওয়াট। অভিযোগ আছে, এই ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের মধ্যে অধিকাংশই সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি। তাদের মধ্যে নসরুল হামিদ বিপুর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া আছে নাঈম রাজ্জাকের ১টি, বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুসের ১টি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ১টি, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের ছোট ভাইয়ের ১টি, আবদুস সালামের ১টি, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ১টি, টাঙ্গাইলের ছোট মনিরের ১টি, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুর রহমানের ১টি, সিলেটের হাবিবুর রহমান এমপির ১টি এবং রাজশাহী অঞ্চলের এক এমপির ১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। অভিযোগ আছে, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফাইল চূড়ান্ত করার জন্য মাহবুবুর রহমান সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের যোগসাজশে বড় বড় প্রকল্পকে গোপনে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ডাইরেক্ট পার্চেজ মেথড (ডিপিএম) পদ্ধতিতে তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতেন প্রকৌশলী মাহবুব। নসরুল হামিদ বিপুর ক্যাশিয়ার হিসাবে ছিলেন তার এপিএস মামুন ও উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর আসলাম। পুরস্কার হিসাবে মীর আসলামকে এলএনজি আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) পরিচালনা পর্যদের সদস্যও করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী। যদিও বোর্ড মেম্বার হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার কোনো যোগ্যতাই ছিল না আসলামের। মূলত এলএনজি আমদানির কমিশন বাণিজ্য ঠিক রাখতে নসরুল হামিদ তাকে ওই কোম্পানির বোর্ড মেম্বার করেন। আসলাম ছাড়াও নসরুল হামিদ তার প্রভাব ধরে রাখার জন্য সব কোম্পানিতে তার পছন্দের লোকদের বোর্ড মেম্বার হিসাবে নিয়োগ দিতেন। তারা পরবর্তীকালে বোর্ড মিটিংগুলোয় তাদের পছন্দের কোম্পানির পক্ষে কাজ করতেন। হাতিয়ে নিতেন কার্যাদেশ। এভাবে চক্রটি হাতিয়ে নেয় শত শত কোটি টাকা। এছাড়া নসরুল হামিদ তার এলাকার শাহীন চেয়ারম্যানের মাধ্যমেও বড় বড় প্রকল্প মালিকদের কাছ থেকে কমিশন এবং ঘুসের টাকা উঠাতেন। যে কারণে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে শাহীন চেয়ারম্যান ছিলেন অঘোষিত সম্রাট। নসরুল হামিদের অবৈধ টাকা নিয়ে মিডিয়ার বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। অনেকে বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্পেয়ার পার্টস সরবরাহের সঙ্গেও যুক্ত। কেউ কেউ আছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অঘোষিত পরিচালক।