গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জানা যায়, নোয়াখালীর মাইজদীতে হাঁটুপানি জমেছে। এছাড়া এ জেলার ৯টি উপজেলার সবকটিতেই বহু বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে লাখ লাখ মানুষ। অনেক এলাকায় ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাকসবজি খেত। মাঠে পানি বেশি থাকায় কৃষক আমন ধান লাগাতে পারছেন না। ডুবে গেছে সড়ক। বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। পানি বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছে নিু-আয়ের মানুষসহ মৎস্যচাষিরা। ইতোমধ্যেই বহু মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। এদিকে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে দু-একদিনের মধ্যে কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। দেশের ভেতরে ও উজানে ভারি বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে যে কোনো সময় যে কোনো এলাকায় বন্যার আশঙ্কা থাকে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় দরিদ্র মানুষ যাতে পর্যাপ্ত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পানিবন্দিদের উদ্ধারের পাশাপাশি তাদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় খাবার বিতরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। যারা গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে তাদেরও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে হবে। বন্যা বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে তোলে। বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষের প্রধান সমস্যা হিসাবে দেখা দেয় খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকট। নিরাপদ পানির অভাব থেকে নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। এছাড়া দেখা দেয় যোগাযোগ সংকটও। কাজেই বন্যা মোকাবিলার পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। বাংলাদেশ ভাটির দেশ হওয়ায় এখানে প্রতিবছরই কম-বেশি বন্যা দেখা দেয়। দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নদীর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে। অভিন্ন নদীগুলোর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আগামী দিনেও দেশে কিংবা উজানে অসময়ে ভারি বর্ষণ হতে পারে। তাতে বন্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।