উজানে অতিরিক্ত পানির চাপের কারণে ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশের পদ্মার উজানে ভারতের গঙ্গা নদীতে থাকা এ বাঁধটিতে মোট ১০৯টি গেট রয়েছে। সোমবার সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। তবে ফারাক্কার ভাটিতে পদ্মার কূলবর্তী জনপদের বাসিন্দারা বলেছেন, ফারাক্কার সব গেট খুলে দেওয়ার পরও ফারাক্কার নিকটবর্তী বাংলাদেশের সর্ব পশ্চিমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার পানির অস্বাভাবিক স্ফীতি নেই। অস্বাভাবিক মাত্রায় পানিও বাড়েনি। রাজশাহীতেও একই তথ্য পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য ফারাক্কা বাঁধের মহাব্যবস্থাপক আর দেশ পাণ্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশি বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, খুব কম সময়ের মধ্যে ফারাক্কার উজানে পানির চাপ তৈরি হয়েছে। এর ফলে ১০৯টি গেটের সব খুলে না দিলে বাঁধের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছিল। তাই ফিডার ক্যানেলে ৪০ হাজার কিউসেক ও ভাটিতে ১১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ছাড়াও সামাজিক মাধ্যমে খবর ও তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ফারাক্কার নিকটবর্তী বাংলাদেশের দুই জেলায় পদ্মায় জলস্ফীতি ঘটেনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দারা বলছেন, প্রকৃত পরিস্থিতির চেয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বেশি। এদিকে ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দেওয়ায় পদ্মা নদীতে প্রতি ৩ ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর সংশ্লিষ্ট দপ্তর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা বলছেন এই সময়ে পদ্মায় পানির বৃদ্ধির এই হার অস্বাভাবিক কিছু নয়। সোমবার ফারাক্কা বাঁধের গেট খোলার কথা বলা হলেও রোববার থেকেই একটু একটু করে নদীতে পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগ। পাউবোর এই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খোলার ব্যাপারে আমাদের কিছু জানায়নি। এই রকম কোনো চুক্তিও আমার জানামতে নেই। তবে আমরা দেখেছি যে, ১ জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফারাক্কা বাঁধের অধিকাংশ গেট খোলা রাখা হয়। এ সময়ে ফারাক্কার উজানে বিহার অঞ্চলে বন্যা হয়ে থাকে। উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগ আরও বলছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা এলাকা দিয়ে ভারতের গঙ্গা নদী পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পাঁকা পয়েন্টে সোমবার ভোর ৬টা ও সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ২০ দশমিক ৪৮ মিটার। বিকাল ৩টায় তা বেড়ে হয় ২০ দশমিক ৫০ মিটার। পাঁকা পয়েন্টে পদ্মার পানির বিপৎসীমা ২২ দশমিক শূন্য ৫ মিটার। ফলে ফারাক্কার সবচেয়ে নিকটবর্তী বাংলাদেশের সর্ব পশ্চিমের গ্রাম পাঁকায় পদ্মার পানি এখনো বিপৎসীমার অনেকটা নিচে অবস্থান করছে। এদিকে পাঁকা ইউনিয়নের চর বিশরশিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। বিভিন্নভাবে ছড়ানো হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাকি ভেসে যাচ্ছে। এসব গুজব আমরা দেখছি সামাজিকমাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, গত তিন চার দিনে পদ্মার পানি কিছুটা কমেছিল। রোববার থেকে একটু একটু করে বাড়ছে। চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, যা প্রতি বছরই হয়ে থাকে। এটা আমাদের কাছে অস্বাভাবিক কিছু নয়। পদ্মার বুকের এই চরে ৫০ হাজার মানুষের বসবাস বিগত ৩০ বছর ধরে। অন্যদিকে ভাটিতে রাজশাহী নগরের বড়কুটি পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার। সোমবার ভোর ৬টায় এখানে পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ১৬ দশমিক ২৭ মিটার। সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা আরও এক সেন্টিমিটার বেশি পাওয়া যায়। বিকাল ৩টায় পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৬ দশমিক ৩০ মিটার। পাউবোর তথ্যমতে, বড়কুঠির আরও ভাটিতে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৬ দশমিক ৯২ মিটার। সোমবার ভোর ৬টায় এই পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক শূন্য ৫ মিটার এবং সকাল ৯টা ও বিকাল ৩টায় পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ১৫ দশমিক শূন্য ৬ মিটার। এখন রাজশাহীর বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মা বিপৎসীমার ১ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্বাভাবিক কিছু ঘটার আশঙ্কা নেই বলে পাউবোর সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে পদ্মার অন্যতম প্রধান শাখা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দায় সোমবার ভোর ৬টা ও সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ১৮ দশমিক ৪৭ মিটার। বিকাল ৩টায় পানি বেড়ে হয় ১৮ দশমিক ৪৯ মিটার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পয়েন্টে মহানন্দা নদীর পানির বিপৎসীমা ২০ দশমিক ৫৫ মিটার। রাজশাহী অঞ্চলের নদীগুলোর মধ্যে আত্রাই, শিব, বারনই ও পুনর্ভবা নদীর পানিও এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব নদীরও পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। নদীগুলোর দিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখছে উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগ। এ দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, আমরা সাধারণত ১০ দিনের জন্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিই। আমরা এখনো মনে করি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে পদ্মাসহ অন্যান্য নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না। তারপরও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না পানি বাড়ছে বলে। রোববার দুপুর থেকেই পানি বাড়ছে। আরও ২ থেকে ৩ দিন পার হলে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে। এসব নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।