বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) বলেছেন, যারা সচিবালয়ে হামলা করেছে তারা কেউ আনসার নয়। আওয়ামী লীগ সরকার এদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আনসারে নিয়োগ দিয়েছে। আনসারের পোশাকে আড়ালে এরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডার। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল আয়োজিত ‘দলের আহ্বায়ক ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সদ্য প্রয়াত রফিকুল ইসলাম মাহাতাবের স্মরণসভায় তিনি এসব কথা। আয়োজক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম মিঞার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আব্দুর রহিমের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক পাটোয়ারী প্রমুখ। মেজর হাফিজ বলেন, অনেকে দাবি দাওয়া দিয়ে এই সরকারকে অতিষ্ঠ করার চেষ্টা করছে। তাই প্রতিবিপ্লব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। ভারত সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যদি বন্ধুত্ব চান তাহলে স্বৈরাচার খুনি শেখ হাসিনাকে দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠান। তিনি প্রতিবেশী দেশের মদদে তারা এতদিন ক্ষমতায় ছিলেন। বাংলাদেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। মেজর হাফিজ বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা সরকার এতো তাড়াতাড়ি বিদায় নেবে তা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। বিএনপি গত ১৬ বছর ধরে রাজপথে আন্দোলন করেছে। বহু মানুষ গুম হয়েছে, অনেকের রক্তে রাজপথ লাল হয়েছে। আওয়ামী লীগ মানবাধিকার সীমা লংঘন করেছিল বলেই আল্লাহর গজব তাদের ওপর নাজিল করেছে, ছাত্রজনতাকে নির্দেশ দিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছে। শেখ হাসিনাসহ তাদের নেতাকর্মীরা কতো বড় বড় কথা বলেছেন, আর এখন তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ছাত্রজনতাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেনানিবাসে ৫ জন বিচারপতিসহ ৬২২ জন কারা আশ্রয় নিয়েছেন। কারা কারা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের নাম তালিকা প্রকাশ করুন। অন্যায় করেছে বলেই তারা পালিয়েছে। কারণ সেনানিবাসে কোনো দুর্বৃত্তদের জায়গা হতে পারে না। স্বৈরাচার সরকার উৎখাতে সেনাবাহিনীর সহায়তা ও ভূমিকার জন্য তাদেরকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। অন্তর্বর্তী সরকারকে ছাত্রজনতার বিপ্লবী সরকার বলে উল্লেখ করে মেজর হাফিজ বলেন, উপদেষ্টাদের অনেকের মধ্যে সেই বিপ্লবী মনোভাব দেখা যায় না। এদের কেউ কেউ শেখ হাসিনা সরকারকে অতীতে সর্মথন দিয়েছেন। কিন্তু এখন আর কোনো তিক্ততা দেখতে চাই না। অন্তর্বর্তী সরকারে তরুণ সমাজ ও আন্দোলন সংগঠিত করতে পেছনে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। নির্বাচনের জন্য অন্তবর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে জানিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে হলে অবশ্যই নির্বাচন দিতে হবে। এই সরকারকে সময় দিতে চাই, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সময় লাগবে। দ্রুত নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করুন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত সংলাপে বসুন। গণতন্ত্র উত্তরণে তাদের কাছ থেকে উত্তরণ পরামর্শ নিন। দেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপি সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। জনগণের প্রতিনিধিদেরকে রাষ্ট্রের দায়িত্বভার গ্রহণ করার সুযোগ করে দিন। তিনি জানান, যেসব অস্ত্র সেনাবাহিনীর কাছে থাকার কথা সেসব অস্ত্র শেখ হাসিনা মানুষকে দমন করার জন্য পুলিশকে দিয়েছে। মিয়ানমারের বাহিনীরা সীমান্তে এসে মানুষ মেরে চলে যায় কিন্তু আমাদের বিমানবাহিনীরা কোনো জবাব দেয় না। আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ছাত্র জনগণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সিটিজেন আর্মি গড়ে তোলা হবে। যাতে কোনো দেশী আগ্রাসন বা বিপ্লব নস্যাৎ করতে না পারে। আমাদের আগ্রাসী কোনো পরিকল্পনা নেই দেশের মানুষ বিএনপিকে দায়িত্ব দিলে সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনার চেষ্টা করবে।