চাকরি জাতীয়করণের একদফা দাবিতে সচিবালয় অবরুদ্ধ করে রাখা এবং ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত আনসার সদস্যরা চাকরি হারাচ্ছেন। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে। তাছাড়া এরই মধ্যে আন্দোলনে জড়িত আনসার সদস্যদের সাময়িক বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আনসার সদর দপ্তরের অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে চাকরিচ্যুত করা হবে। আনসার সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আনসার একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এই বাহিনীর যেসব সদস্য সচিবালয় অবরুদ্ধ এবং ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন, শিগগিরই তাদের চাকরিচ্যুতির আদেশ দেওয়া হবে। এছাড়া তদন্তের মাধ্যমে আন্দোলনে এবং সংঘর্ষে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বরখাস্ত করা হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনকারী আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। কুমিল্লায় মঙ্গলবার ৯৬ আনসার সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কুমিল্লা আনসার ভিডিপি কার্যালয়ের সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট মো. মনিরুল ইসলাম মঙ্গলবার বিকালে বলেন, বেআইনিভাবে সমাবেশে যোগদান, সচিবালয় অবরুদ্ধ এবং ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ৯৬ আনসার সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে আরও খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, কুমিল্লায় ১১৮০ জন আনসার সদস্য কর্মরত আছেন। ৯৬ জনকে চাকরিচ্যুত করায় ডিউটিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু কুমিল্লায়ই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনকারী আনসার সদস্যদের চিহ্নিতের কাজ চলছে। তাদেরও চাকরিচ্যুত করা হবে। তাদের জায়গায় যারা ৬ মাসের রেস্টে আছেন তাদের নিয়োজিত করা হবে। এছাড়াও প্রয়োজনে নতুন আনসার সদস্য নিয়োগ করা হবে। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে আনসার সদর দপ্তরের উপমহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. সাইফুল্লাহ রাসেলকে থেকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে আনসার সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক (ভিডিপি প্রশিক্ষণ) ও জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রুবেল হোসাইন জানিয়েছেন, আন্দোলনকারী আনসার সদস্যদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, চাকরি জাতীয়করণ করার একদফা দাবি আদায় করতে গিয়ে ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে রীতিমতো আলোচনায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। আনসারকে বিলুপ্ত করার দাবিসহ তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। আনসারের মারমুখী আচরণের কারণে এমন প্রশ্নও উঠেছে, এই আন্দোলনের নেপথ্যে তৃতীয় কোনো পক্ষের ইন্ধন রয়েছে কিনা? নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনসারের একজন কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয় অবরুদ্ধ এবং ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় আনসার বাহিনীর সদস্যরা যে আচরণ করেছেন, এর দায় পুরো বাহিনীর নয়। এই আন্দোলনকারীরা পুরো বাহিনীর প্রতিনিধিত্বও করেন না। তারা আনসার বাহিনীর অস্থায়ী সদস্য। তারা বাহিনীতে অঙ্গীভূত আনসার হিসাবে পরিচিত। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন স্থরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাহিনীতে ৭০ হাজারের মতো অঙ্গীভূত আনসার সদস্য রয়েছেন। যারা সবাই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। তবে প্রতি ৩ বছর দায়িত্ব পালনের পর ৬ মাস করে তাদের ছুটিতে পাঠানো হয়। প্রয়োজনে তাদের ডেকে আবার দায়িত্বে নেওয়া হয়। সচিবালয় এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন, রমনা, শাহবাগ ও বিমানবন্দর থানায় পৃথক চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪৬৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১২ হাজারের বেশি। সংঘর্ষের পর গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৯০ আনসার সদস্যকে। তারা কারাগারে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতির ব্যবস্থার পাশাপাশি অন্য যারা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলছে। আনসার বাহিনীর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের মধ্যে রোববার পর্যন্ত ৫৫ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৫ হাজার সদস্য বিশ্রামে ছিলেন। এখন যারা গ্রেফতার হচ্ছেন বা যারা আন্দোলনের নামে নাশকতা করেছেন, তাদের বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদের জায়গায় বিশ্রামে থাকা সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। জানা গেছে, অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা মূলত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বৈধ ভাড়াটে কর্মী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার সদস্য প্রয়োজন হলে বাহিনীতে আবেদন করলে তাদেরকে সেই দায়িত্বে পাঠানো হয়। সেক্ষেত্রে বাহিনীর অনুকূলে চুক্তি অনুযায়ী এই দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অর্থ পরিশোধ করে থাকে। তবে বাহিনী থেকে বেতন হয় এই সদস্যদের। অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মোট ১৬ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে চাকরি করেন। এছাড়া তাদের প্রতি মাসে রেশন হিসাবে ৮ কেজি চাল, ২৮ কেজি গম, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি, দুই লিটার ভোজ্যতেল দেওয়া হয়। এই রেশন তুলতে তাদের কাছ থেকে ৫৯৮ টাকা জমা রাখা হয়। তবে ৬ মাসের বিশ্রামে গেলে তাদের কোনো বেতন বা রেশন দেওয়া হয় না।